কে কার পাশে, পণ্ড বাংলা হিসেব

পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় মান্নানের ঘরে এসে সিঙ্ঘভির সঙ্গে তৃণমূল প্রার্থীদের আলাপ করিয়ে দেওয়ার আগেই ঘর ছেড়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর। আবার কংগ্রেস বিধায়কদের জন্য সিঙ্ঘভির দেওয়া নৈশভোজে যাননি মান্নান।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০১৮ ০৪:১০
Share:

সমন্বয়: আব্দুল মান্নানের ঘরে অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি, পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং কংগ্রেস ও তৃণমূলের অন্যান্য নেতা। সোমবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

বামেদের সমর্থনে জিতে আসা কংগ্রেস বিধায়কেরা ভোট দেবেন বামেদের বিরুদ্ধে! এবং সমর্থন পাবেন তৃণমূলের!

Advertisement

কংগ্রেসের সমর্থনে জয়ী বাম বিধায়কেরা কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ভোট দেবেন নিজেদের প্রার্থীকে। এবং পরাজয় প্রায় নিশ্চিত জেনেও!

কংগ্রেসকে তাঁর চাই না, আঞ্চলিক দলগুলিকে নিয়ে তৃতীয় ফ্রন্ট গড়বেন বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণার পরেও তৃণমূল বিধায়কেরা ভোট দেবেন কংগ্রেসকে। এবং সমর্থন চাইবেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার! লোকসভা ভোটে যাদের সমঝোতা ছিল বিজেপির সঙ্গে!

Advertisement

এক রাজ্যসভার ভোট উথালপাতাল করে দিচ্ছে বঙ্গ রাজনীতি! চেনা সব সমীকরণ ওলটপালট! বিরোধী শিবিরের অঙ্ক গুলিয়ে কে কার বন্ধু, তা নিয়েই সংশয়। আর এই বিভ্রান্তির বাতাবরণে আখেরে লাভ দেখছে বিজেপি। বাংলা থেকে বিজেপির রাজ্যসভায় কাউকে পাঠানোর প্রশ্ন নেই। তাদের তিন বিধায়কের কাউকে ভোট দেওয়ারও সুযোগ নেই। তবু মওকা পেয়ে তারা জনমানসে বার্তা দিতে পারছে, তৃণমূল, কংগ্রেস এবং বাম শেষমেশ সব এক। বাকিদের সঙ্গে লড়াইটা বিজেপির! কংগ্রেস-বাম সমঝোতা ধাক্কা খাওয়ায় বিরোধী পরিসরে তাদের বাড়তি সুযোগ এনে দিচ্ছে।

বাইরে শক্তি যেমনই হোক, বিধানসভায় সরকারি ভাবে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস। অথচ রাজ্যসভায় এ বার পঞ্চম আসনে শাসক দলের সমর্থন পাচ্ছেন প্রধান বিরোধী দলের প্রার্থী অভিষেক মনু সিঙঘভি। তিনিও আবার এমন প্রার্থী, নারদ-কাণ্ডে প্রদেশ কংগ্রেস নেতা অমিতাভ চক্রবর্তীর আবেদনের বিরুদ্ধে আদালতে তৃণমূলের পক্ষে সওয়াল করায় যাঁকে রাজ্যে দলের কর্মসূচিতে বয়কট করেছিলেন অধীর চৌধুরী, আব্দুল মান্নানেরা! সেই সিঙ্ঘভি যখন সোমবার তৃণমূলের বলে বলীয়ান হয়ে মনোনয়ন পেশ করছেন, বিধানসভায় থেকেও উপরে সচিবের ঘরে যাননি অধীর-মান্নান। পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় মান্নানের ঘরে এসে সিঙ্ঘভির সঙ্গে তৃণমূল প্রার্থীদের আলাপ করিয়ে দেওয়ার আগেই ঘর ছেড়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর। আবার কংগ্রেস বিধায়কদের জন্য সিঙ্ঘভির দেওয়া নৈশভোজে যাননি মান্নান।

তৃণমূলের সঙ্গে রাজ্যসভায় সমঝোতা করবেন না বলে এআইসিসি-কে লিখিত প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন কংগ্রেস বিধায়কেরা। এখন তাঁরা বলছেন, সিপিএমই যত নষ্টের গোড়া! যন্ত্রণা নিয়েই বিরোধী দলনেতা মান্নান বলছেন, ‘‘আমরা তো বলেইছিলাম, দু’বছরে দু’বার রাজ্যসভার নির্বাচন হচ্ছে। এক বার সিপিএম প্রার্থী আমাদের সমর্থনে জিতুন, পরের বার আমাদের প্রার্থীকে ওরা সমর্থন করুক। ওদের পার্টি কংগ্রেসের জন্য কে বসে থাকবে?’’ তৃণমূল সরকারের মন্ত্রিত্ব ‘ছেঁড়া চপ্পলে’র মতো ছেড়ে আসা মনোজ চক্রবর্তীর আক্ষেপ, ‘‘হাইকম্যান্ডের সিদ্ধান্ত। কিছু করার নেই!’’

কংগ্রেসের রাগ বুঝেই বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীকে বলতে হচ্ছে, ‘‘রাজনীতিতে সব সিদ্ধান্ত সব সময় পছন্দ না হলেও কিছু করার থাকে না।’’ সুজন-রবীন দেবদের আশা, পঞ্চায়েত ভোটে এর পরেও বিজেপি ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে বৃহত্তর সমঝোতা থাকবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন