রাজ্যের প্রথম ‘গাড়িহীন দিবস’ পালন বর্ধমানে

রাজ্যের প্রথম মোটরযান-বিহীন দিবস পালন সফল করতে দুর্গাপুরে বাইক-আরোহী ও গাড়ি মালিক-চালকদের উপরে জোর খাটানোর অভিযোগ উঠল পুলিশের বিরুদ্ধে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৫ ১৫:৩৬
Share:

—নিজস্ব চিত্র।

রাজ্যের প্রথম মোটরযান-বিহীন দিবস পালন সফল করতে দুর্গাপুরে বাইক-আরোহী ও গাড়ি মালিক-চালকদের উপরে জোর খাটানোর অভিযোগ উঠল পুলিশের বিরুদ্ধে। শহরের বাকি জায়গায় কোনও কড়াকড়ি না থাকলেও সিটি সেন্টারে ঢোকা-বেরোনোর সবক’টি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার মোড়ে কড়া পুলিশি পাহারা বসানো হয়। ব্যারিকেড দিয়ে রাস্তা আটকে দিয়ে গাড়ি ও মোটরবাইক ঘুরিয়ে দেওয়া হয় অন্য পথে। জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন বার বার জানিয়েছিলেন, এই উদ্যোগে স্বেচ্ছায় সামিল হবেন মানুষজন। কিন্তু বাস্তবে তার উল্টো ছবিই দেখা গেল দুর্গাপুরে।

Advertisement

সকাল সাড়ে ৮ টা।

ইস্পাত নগরী থেকে রোজকার মতো মোটর বাইকে চড়ে সিটি সেন্টারে আসছিলেন বেসরকারি সংস্থার কর্মী সুনয়ন ভট্টাচার্য। কবিগুরু এলাকা পেরিয়ে প্রথম মোড়েই আটকে দিল পুলিশ। সুনয়নবাবু জানালেন, মোটরবাইক ছাড়া সময়ে তিনি অফিসে পৌঁছাতে পারবেন না। তাই বাধ্য হয়ে বাইক নিয়ে বেরিয়েছেন। কিন্তু পুলিশকর্মীরা কোনও কথা শুনবেন না। তাঁরা মোটরবাইক নিয়ে কাউকে সিটি সেন্টারে ঢুকতে দেবেন না। সুনয়নবাবু পাল্টা চ্যালেঞ্জ করলেন, ‘‘এ ভাবে আপনারা জোর করতে পারেন না। কার নির্দেশে আপনারা এমন করছেন?’’ নির্দেশের কথা শুনে আমতা আমতা করে এক পুলিশ কর্মী বললেন, ‘‘না ঠিক নির্দেশ নয়। তবে সিটি সেন্টার এলাকার উপরেই নজরদারি রয়েছে উপরওয়ালাদের। তাই বলছিলাম, যদি না গেলে হয় তো ভাল হয়।’’ হাসতে হাসতে বাইকের মুখ ঘোরালেন সুনয়নবাবু। তত ক্ষণে অবশ্য আরও অনেককে জোর করেই ওই মোড় থেকে ঘুরিয়ে দিয়েছেন পুলিশ কর্মীরা।

Advertisement

আরও পড়ুন: আজ ‘গাড়িহীন’ বর্ধমান

সকাল ৯ টা।

বেনাচিতির ৫৪ ফুট রোড এলাকা থেকে গাঁধী মোড় ময়দানে ওঠার মুখে জহরলাল নেহেরু রোডের মুখে মহিলা সিভিক পুলিশ কর্মী আটকে দিলেন বেনাচিতির সুনন্দ ঘোষালের স্কুটি। কেন? মহিলা সিভিক পুলিশ কর্মীর জবাব, “আজ ‘পলিউশন ডে’”। হেসে ফেললেন সুনন্দবাবু। বললেন, ‘‘তা আমায় কী করতে হবে?’’ মহিলা সিভিক পুলিশ কর্মীর জবাব, ‘‘এই রাস্তা দিয়ে যাওয়া যাবে না। জাতীয় সড়কের দিকে ঘুরে যান।’’ সুনন্দবাবু বললেন, ‘‘তা হলে তো দূরত্ব বেড়ে যাবে। আমার গাড়ি থেকে আরও দূষণ ছড়াবে।’’ মহিলা সিভিক পুলিশ কর্মী কোনও উত্তর দিলেন না। সুনন্দবাবু ঘুরপথে স্কুটি নিয়ে বেরিয়ে গেলেন।

সকাল ৯:১৫।

মহিলা কলেজের সামনে পুলিশ আটকে দিল বিধাননগরের বাসিন্দা অভিষেক দাস এর গাড়ি। তিনি বললেন,‘‘আজ ‘কার-ফ্রি ডে’ আমি জানি। কিন্তু বিপদে পড়েই গাড়ি বের করতে হয়েছে।’’ পুলিশ কর্মীরা তাঁর কথা শুনতে নারাজ। তখন বাধ্য হয়ে অভিষেকবাবু বলে বসলেন, ‘‘এ ভাবে আপনারা জোর করতে পারেন না।’’ তাতে কাজ হল। পুলিশকর্মীরা সরে গেলেন। অভিযেকবাবু গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেলেন।

আবার অন্য ছবিও যে নজরে আসেনি তা নয়।

সকাল সাড়ে ৯টা। সাইকেল চড়ে সিটি সেন্টারের একটি ক্লাবের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন নন-কোম্পানি এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা রথীন রায়চৌধুরী। পুলিশকর্মীরা গাড়ি ও মোটর বাইক আটকে দিচ্ছে দেখে এগিয়ে গিয়ে বললেন, ‘‘দারুণ কাজ করছেন আপনারা! কেউ পরিবেশ নিয়ে ভাবে না। সামান্য জোর খাটিয়ে এক দিন যদি গাড়ি বা মোটরবাইক কিছু কম বেরোয় তো তাই হোক। আপনারা আপনাদের কাজ চালিয়ে যান।’’ প্রায় একই ছবি নজরে এসেছে সিটি সেন্টারের একটি পার্কের সামনের মোড়েও।

তবে পুলিশ বা প্রশাসনের তরফে দিনটি পালনে কোনও জোর খাটানো বা বাধ্য করার অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। জেলা শাসক সৌমিত্র মোহন বলেন, ‘‘মানুষ স্বেচ্ছায় এই উদ্যোগে সামিল হয়েছেন। সারা জেলা জুড়েই ব্যাপক সাড়া মিলেছে। কাউকে জোর করে আটকানোর প্রশ্নই নেই। বার বার সেটা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলে দেওয়া হয়েছে।’’ কমিশনারেটের এডিসিপি (পূর্ব) অমিতাভ মাইতি বলেন, ‘‘পুলিশ কর্মীরা ছিলেন রাস্তায় মানুষকে সাহায্য করার জন্য। তাঁরা মানুষের কাছে আবেদন জানিয়েছেন। কেউ শুনেছেন। কেউ শোনেননি। কোথাও জোর খাটানোর অভিযোগও পাওয়া যায়নি।’’

আর পাঁচটা শহরে এমন দিনে যে যে ঘটনা ঘটে দুর্গাপুরেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। মহকুমা শাসক কস্তুরী সেনগুপ্ত অফিসে এসেছেন বাসে চড়ে। মেয়র অপূর্ব মুখোপাধ্যায় সাইকেলে চড়ে পুরসভায় এসেছেন। এডিডিএ’-র সিইও সুমিত গুপ্তও এসেছেন সাইকেলে চড়েই। এডিডিএ’-র চেয়ারম্যান নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায় অফিসে আসেন বাসে চড়ে। টোটো চড়ে পুরসভায় আসেন মেয়র পারিষদ প্রভাত চট্টোপাধ্যায়। আদালত চত্বরে টোটো থেকে নামার সময় আইনজীবি দেবব্রত সাঁই বলেন, ‘‘রোজ গাড়িতে আসি। আজ টোটো চড়ে আসতে বেশ মজা পেলাম।’’ ‘অটোমোবাইল অ্যাসোসিয়েশন অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়া’র দুর্গাপুর শাখার পক্ষে সমীর বসু বলেন, ‘‘দূষণে জেরবার শিল্পাঞ্চলের জন্য নিঃসন্দেহে ভালো উদ্যোগ। তবে ধারাবাহিক ভাবে এমন দিন পালন করতে পারলে আরও ভালো।’’

একই চিত্র দেখা গেল আসানসোলে। সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত আসানসোলে মোটর সাইকেলের দাপট ছিল বেশ কম। কিন্তু বেলা বাড়তেই অন্য দিনের মতো মোটরসাইকেল চলতে শুরু করে রাস্তায়। সকাল ১০টা নাগাদ আসানসোলের মহকুমাশাসক অমিতাভ দাস নিজের বাসভবন থেকে হেঁটে কার্যালয়ে আসেন। দফতরের অন্য কর্মীরাও হেঁটে অথবা বাস ধরে দফতরে আসেন। আসানসোলের মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারি তাঁর মুর্গাশোলের বাড়ি থেকে হেঁটে পুরসভায় আসেন। বিভিন্ন সরকারি দফতরে মোটরসাইকেলের সংখ্যা ছিল হাতেগোনা। বার্ণপুর ইসকোতেও মোটরসাইকেল ও স্কুটারের সংখ্যা ছিল উল্লেখযোগ্যভাবে কম।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন