‘দি-পু-দা’ প্রীতিতে ভাটার টান

এতদিন ছুটিতে বাঙালির দলবেঁধে বেড়াতে যাওয়ার জায়গা বলতেছিল— দি-পু-দা। কিন্তু সেই অভ্যাস এখন দ্রুত পাল্টাচ্ছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বহরমপুর শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৮ ০৩:৪৮
Share:

বরাবর বাঙালির পায়ের তলায় সরষে! এবারের পুজোর ছুটিতে ‘দি-পু-দা’ (দিঘা, পুরী, দার্জিলিঙ)-কে বাই-বাই করে এখন বিদেশ-ভ্রমণযাত্রার প্রতিযোগিতা চলছে। স্কুল-অফিসে টানা ছুটি পড়ে যাওয়ায় অনেকেই আবার সপরিবারে পাহাড় ঘেরা ভুটান বা বাংলাদেশে গিয়েও বিদেশে যাওয়ার আশ মেটাচ্ছেন। মহানগর পেরিয়ে মফস্সলের শহরগুলিতেও এখন সপরিবারে বিদেশে বেড়াতে যাওয়ার আঁচ লেগেছে। যেমন বকুল চক্রবর্তী জানান, দি-পু-দা বরাবর তাঁর বরাবরই না পসন্দ। পুজোর ভিড় এড়াতে তাই অনেকদিন আগে থেকেই কেরল বেড়াতে যাওয়ার জন্য আগে থেকেই টিকিটও কেটে ফেলেছিলেন। কিন্তু নিপাহ্ ভাইরাস ও বন্যার জন্য কেরল ভ্রমণ বাতিল করে এখন সপরিবারে ছুটছেন ভুটান।

Advertisement

এতদিন ছুটিতে বাঙালির দলবেঁধে বেড়াতে যাওয়ার জায়গা বলতেছিল— দি-পু-দা। কিন্তু সেই অভ্যাস এখন দ্রুত পাল্টাচ্ছে। এখন একান্নবর্তী পরিবার ভেঙে ছোট হয়ে যাচ্ছে। তাই দল বেঁধে ঘুরতে যাওয়ার মধ্যে থাকে পরিচিত ও বন্ধুবান্ধব। বহরমপুরের এক ভ্রমণ সংস্থার কর্ণধার গোপীনাথ দাস বলছেন, ‘‘এখন অনেকেই পুজোর ছুটিতে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা, ব্যাঙ্কক বেড়াতে যাচ্ছেন। এই সব জায়গার চাহিদা প্রচুর। অনেকেই এখন জড়তা কাটিয়ে সাতদিনের জন্য বিদেশ ঘুরে আসছেন। প্রতিবেশী দেশ ভুটান-বাংলাদেশে যাওয়ার জন্য অনেকেই টিকিট বুক করেছেন।’’

গত কয়েক বছর ধরে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের টানে বিশেষ করে পুজোর ক’টা দিন কেরল ঘুরতে চলে যেতেন। এ বছর সেই সংখ্যায় ভাটা পড়েছে। কেরল বাতিল তকে তাঁদের অনেকেই ছুটছেন পাহাড়ে। এছাড়াও গোয়া, রাজস্থান, আন্দামান বেড়াতে যাওয়ার চাহিদাও রয়েছে। বহরমপুরের এক ভ্রমণ সংস্থার কর্তা জানালেন, কেরালা যাওয়ার জন্য প্রচুর বুকিং হয়েছিল। কিন্তু বন্যার জন্য সব বাতিল করে এখন অনেকেই চেন্নাই, বেঙ্গালুরু, পুদুচেরি যাচ্ছেন। তবে এবার অনেকেই পুজোর ছুটিতে বেড়াতে যাওয়ার জন্য বেছে নিয়েছেন চেন্নাই।

Advertisement

পুজোর ক’টা দিন নতুন জায়গায় ঘুরে বেড়ানোর পাশাপাশি তাঁদের অনেকেই সেরে ফেলছেন ‘হেল্থ চেক-আপ’। চেন্নাইয়ে ডাক্তার দেখিয়ে অনেকেই পুদুচেরি-উটি ঘুরে পুজোর পরে ফিরছেন। যেমন তরুণ মণ্ডল ও স্বাগতা মণ্ডল জানান, আগে থেকেই ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে রেখেছি। হেল্থ চেক-আপের পরে টেনশন মুক্ত হয়ে একটু উটি ঘুরে আসব। বারবার তো আর এ ভাবে যাওয়া হবে না। এতউ ভাবে বহরমপুরের বনানী সাহা আবার হরিদ্বারে রামদেবের আশ্রমে যোগ-চিকিৎসা করিয়ে হৃষিকেশ, নৈনিতাল ঘুরে বহরমপুর ফিরবেন পুজোর পরে।

রেল ও বিমানের টিকিট কাটার এজেন্ট বিপ্লব মণ্ডল বলছেন, ‘‘জানেন, এ বছর চেন্নাই, বেঙ্গালুরু, রাজস্থান এমনকি নৈনিতালের টিকিটের খুব চাহিদা আছে। অনেকেই বিমানের টিকিট কাটছেন। কারন এখন আগে থেকে বিমানের টিকিট কাটলে ট্রেনের টিকিটের সহ্গে দামের খুব একটা হেরফের হয় না। তেমনি পুজোয় বেড়াতে যাওয়ার জন্য অনেক বিমান সংস্থা টিকিটে ছাড় দেয়। তাই বিমানের টিকিটে্র চাহিদাও রয়েছে।’’ তবে পুজোর ভিড় এড়াতে তীর্থজ্যোতি গুইন তাঁর বাবা-মাকে নিয়ে পুজোর আগেই হিমাচলের সাংলা, টাবো, মানালি ঘুরে এসেছেন। আবার বহরমপুরের অনুপম ভট্টাচার্য বরাবরই পাহাড়ের প্রতি আলাদা টান অনুভব করেন। সেক্ষেত্রে পুজোর ছুটিকে বেছে নেন পাহাড় বেড়াতে যাওয়ার জন্য। এ বছরের ছুটিতে গঙ্গোত্রী, যমুনেত্রী ও গোমুখ বেছে নিয়েছেন বেড়াতে যাওয়ার জন্য।তবে পুজোর মুখে রোদ ঝলমলে আবহাওয়া হলেও ‘তিতলির’ ভয়ে অনেকেই দিঘা-পুরী-দার্জিলিঙ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। তাই পুজোর ছুটিতে বাঙালির দি-পু-দা প্রীতি কিছুটা হলেও কমের দিকে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন