Telegram App Scam

‘সহজে আয়ের সুযোগ’, কোটি কোটির প্রতারণা! আধার-আতঙ্কের মাঝেই ত্রাসের নাম ‘টেলিগ্রাম’

বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের তরফে জানানো হয়েছে, মূলত দু’টি পদ্ধতিতে টেলিগ্রাম অ্যাপের মাধ্যমে টোপ ফেলছেন প্রতারকেরা। সেই টোপ গিলে নিলেই সর্বস্বান্ত হচ্ছেন গ্রাহকেরা।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৩:০১
Share:

—প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।

আধার কার্ডের বায়োমেট্রিক তথ্য হাতিয়ে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন অনেকে। তার মাঝে এ বার নতুন ত্রাস হয়ে উঠেছে ‘টেলিগ্রাম’। এই অ্যাপটির মাধ্যমে প্রতারণার জাল বিস্তার করা হয়েছে। গ্রাহকদের থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে দুষ্কৃতীরা। প্রতারণাচক্রটির আসল উদ্দেশ্য গ্রাহক যত ক্ষণে উপলব্ধি করতে পারছেন, তত ক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। অনেকের কাছ থেকে এই প্রতারণার অভিযোগ পেয়ে এ বিষয়ে সতর্কতামূলক গাইডলাইন জারি করেছে বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেট।

Advertisement

কী ভাবে চলছে প্রতারণা?

বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের তরফে জানানো হয়েছে, মূলত দু’টি পদ্ধতিতে টোপ ফেলছেন প্রতারকেরা। সেই টোপ গিলে নিলেই সর্বস্বান্ত হচ্ছেন গ্রাহকেরা। প্রথমে সহজে আয়ের সুযোগ দিয়ে টোপ ফেলা হচ্ছে। গ্রাহকদের জানানো হচ্ছে, ঘরে বসে ছোট ছোট কাজের মাধ্যমে সহজে আয় করা যাবে। এই প্রস্তাবে রাজি হলে তাঁদের টেলিগ্রাম গ্রুপে ঢুকতে বলা হচ্ছে। সেই গ্রুপে ইউটিউবের কিছু কিছু ভিডিয়োতে লাইক, কমেন্ট করার মাধ্যমে আয় করতে পারছেন অনেকেই।

Advertisement

ঘরে বসে টাকা মিলছে, এতেই বিশ্বাস করে বসছেন গ্রাহকেরা। তার পরের ধাপে এমন কিছু কাজ করতে বলা হচ্ছে, যেখানে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বা ক্রিপ্‌টোকারেন্সির মাধ্যমে টাকা দিতে হবে। এতে মিলছে ‘রিটার্ন’। অর্থাৎ, নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা গ্রাহকদের অ্যাকাউন্টেই আবার ফিরে আসছে। লোভে পড়ে এর পর অনেকেই বেশি টাকা বিনিয়োগ করার দিকে ঝুঁকছেন। প্রথম দিকে ‘রিটার্ন’ মিললেও এক সময় টাকা আসা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। উল্টে, বকেয়া টাকা ফেরত দেওয়ার অছিলায় আরও বেশি অঙ্কের টাকা নিয়ে নেওয়া হচ্ছে। কোনও টাকাই ফিরছে না।

দ্বিতীয় পদ্ধতিতে, টেলিগ্রাম অ্যাপের মাধ্যমেই ছোট ছোট বিনিয়োগে বড় লাভের লোভ দেখানো হচ্ছে গ্রাহকদের। বেশ কিছু ভুয়ো অ্যাপের মাধ্যমে বিনিয়োগ করতে বলা হচ্ছে। অ্যাপগুলি এই প্রতারণার উদ্দেশ্যেই তৈরি করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রেও, প্রথম দিকে টাকা ফেরত পাচ্ছেন গ্রাহকেরা। কিন্তু পরে আর কোনও টাকা মিলছে না। উল্টে যা দিয়েছিলেন, তা-ও হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে। পুলিশের দ্বারস্থ হওয়া ছাড়া আর উপায় থাকছে না।

কী ভাবে প্রতারণা এড়ানো যাবে?

  • জনসাধারণের উদ্দেশে বিধাননগর পুলিশের পরামর্শ, অনলাইনে এমন যে কোনও ভুয়ো প্রস্তাব থেকে দূরে থাকুন। টেলিগ্রাম অ্যাপের মাধ্যমে কোনও বিনিয়োগকারী সংস্থা কাজ করে না।
  • অচেনা নম্বর থেকে কেউ যোগাযোগ করলে তাদের সঙ্গে খুব বেশি কথা না বলাই ভাল।
  • কোথাও কোনও বিনিয়োগ করার আগে সংস্থার সম্বন্ধে ভাল করে খোঁজখবর নিয়ে দেখুন।
  • টেলিগ্রামের কোনও অচেনা গ্রুপে ঢুকে পড়লে, দ্রুত বেরিয়ে যান।
  • কোনও অনলাইন চ্যাটের মাধ্যমে লাভযোগ্য বিনিয়োগের প্রস্তাব পেলেই তা সন্দেহের চোখে দেখতে হবে, প্রশ্ন তুলতে হবে।

বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটে চলতি বছরে অন্তত ২৫টি একই ধরনের টেলিগ্রাম প্রতারণার অভিযোগ জমা পড়েছে। গত বছরে এমন কোনও অভিযোগই ছিল না। ফলে এই প্রতারণার ধরন নতুন। এ ভাবে এখনও পর্যন্ত ৪ কোটি ২৪ লক্ষ টাকা গ্রাহকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন প্রতারকেরা। পুলিশ তার মধ্যে ৩ কোটি ৩১ লক্ষ টাকা বাজেয়াপ্ত করতে পেরেছে। প্রতারকদের সন্ধান চলছে।

রাজ্যের নানা প্রান্তে আধার কার্ডের তথ্যের মাধ্যমে অভিনব প্রতারণাচক্রের হদিশ মিলেছে। আধারের বায়োমেট্রিক তথ্য (মূলত আঙুলের ছাপ) হাতিয়ে প্রতারণার অভিযোগ উঠছে। অভিযোগ, বিশেষত প্রবীণদের আঙুলের ছাপ জাল করে প্রতারকেরা তাঁদের ব্যাঙ্ক-অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা চুরি করে নিচ্ছে, মোবাইলে সতর্কতামূলক মেসেজও ঢুকছে না। এর মাঝেই টেলিগ্রাম অ্যাপের মাধ্যমে আরও একটি নতুন ধরনের প্রতারণার কৌশল প্রকাশ্যে এল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন