কোচবিহার রাজবাড়ির সামনে এই বাগানেই হতে পারে লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব
যদি এমন হতো যে ভরসন্ধ্যায় কোচবিহারের রাজবাড়ির সামনে গিয়েছেন। আলো-ধ্বনির মাধ্যমে রাজবাড়ির চেহারা আরও অপরূপ হয়ে উঠেছে। গমগমে গলায় কোচবিহারের রাজা-রানিদের সংক্ষিপ্ত কাহিনি, রাজবাড়ির গড়ে ওঠার বিবরণ শুনতে গিয়ে চমকে উঠছেন। কারণ, গলাটা খুব চেনা লাগছে যে! হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন, অমিতাভ বচ্চনের গলা।
সব কিছু ঠিকঠাক চললে এমনই হতে পারে কোচবিহারের রাজবাড়ি ঘোরার অভিজ্ঞতা। বুধবার দিনভর উত্তরকন্যায় বৈঠকের পরে রাজবাড়ির ওই প্রকল্পে গতি আনার জন্য উদ্যোগী হয়েছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ।
গৌতম দেব দফতরের মন্ত্রী থাকাকালীন ওই প্রকল্পটি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। রবীন্দ্রনাথবাবু জানান, আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার অনুমোদন পেলেই কাজ দ্রুতগতিতে এগোবে। তাঁর স্বপ্ন, উত্তরবঙ্গ তো বটেই দেশ-বিদেশের পযর্টকদের কাছে কোচবিহার রাজবাড়ি অন্যতম আকর্ষণ কেন্দ্র হয়ে উঠবে। সূত্রের খবর, সব মিলিয়ে অন্তত ১০ কোটি টাকা খরচ হতে পারে। মন্ত্রী জানান, পুরো শোটি লালকেল্লার শোয়ের আদলে করানোর জন্য বিদেশি প্রযুক্তির সাহায্য নেওয়ার বিষয়টিও ভাবা হচ্ছে।
দফতর সূত্রের খবর, তৃণমূল প্রথম দফায় ক্ষমতাসীন হওয়ার পরে ওই পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলেন। কিন্তু তা বাস্তবায়িত হয়নি। ৮০ লক্ষ টাকার একটি প্রকল্প তৈরি করা হয়। রাজ্যের একাধিক সংস্থার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলা হয়। তাতে সন্তুষ্ট হতে না পেরে ভিনরাজ্যের সংস্থার সাহায্য নেওয়ার কথা ভাবা হয়। পরে বিষয়টি আর এগোয়নি। ফলে এ নিয়ে কোচবিহারের বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছিল। কোচবিহারে পর্যটন প্রসারের কথা ঘোষণা হলেও কেন রাজবাড়ির আকর্ষণ বাড়ানো নিয়ে গড়িমসি চলছে তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। কোচবিহারের বাসিন্দা রবীন্দ্রনাথবাবু উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী হওয়ায় সে ব্যাপারে আশায় বুক বাঁধেন বাসিন্দারা। কোচবিহার হেরিটেজ সোসাইটির সম্পাদক অরূপজ্যোতি মজুমদার বলেন, “রাজবাড়ি নিয়ে মানুষের কাছে অন্যরকম আবেগ রয়েছে। দেশ-বিদেশের নানা পর্যটক সেখানে প্রতিনিয়ত যান। তা সাজিয়ে তোলা প্রয়োজন। বিশেষ করে লাইট ও সাউন্ডের কাজ হলে তাঁর আকর্ষণ অনেক বেড়ে যাবে। ওই উদ্যোগ নেওয়ায় আমরা খুশি।” দিনহাটার বাসিন্দা শঙ্খনাদ আচার্য বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে এই দাবি করে আসছি আমরা। এটি হলে পর্যটকদের কাছে রাজবাড়ির আকর্ষণ আরও বাড়বে। ওই ব্যাপারে শীঘ্রই পদক্ষেপ করা হলে আমরা খুশি হব।”
এ দিনই কোচবিহারের মহারানি গায়ত্রীদেবীর নামের কোচবিহারের মরাতোর্সা নদীকে ঘিরে ইকোপার্ক তৈরির প্রস্তাব নিয়েও চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে। মন্ত্রী জানান, প্রথমে নদীর সংস্কার করা হবে। নদীর দু’পাশ মিলিয়ে ৩০০ বিঘা সরকারি জমি রয়েছে। সেখানেই পার্ক হবে। বসার ব্যবস্থা, গাছপালা, সৌরবিদ্যুৎ, ক্যাফেটেরিয়া, হাঁটার জন্য আলাদা ব্যবস্থা-সহ নানা সুযোগ সুবিধা থাকবে। এর বিস্তারিত প্রকল্প তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।