ভোট প্রচার সরকারি ভাবে ফুরিয়েছে। তাতে কী! মোর্চার নেতা-কর্মীরা রাজ্যের এক মন্ত্রী তথা তৃণমূল নেতার বিতর্কিত মন্তব্য নিয়ে লাগাতার ‘মেসেজ’ চালাচালি করছেন। তাতে বলা হচ্ছে: রাজ্যের এক মন্ত্রী পাহাড়ের প্রার্থীদের ট্রাঙ্কে ভরে বাইরে পাঠিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন, সেটা মাথায় রেখে ভোট দিতে যাবেন। তাতেই তৃণমূল শিবিরে কিছুটা হলেও উদ্বেগ ছড়িয়েছে।
তবে পাল্টা তৃণমূল শিবির থেকেও ‘মেসেজ’ ছড়ানো হয়েছে। তার নির্যাস হল, ‘বিমল গুরুঙ্গ নিজেকে গোর্খা জাতির অভিভাবক বলে দাবি করছেন। আসলে গুরুঙ্গ যে মোর্চার অভিভাবক, সব পাহাড়বাসী কিংবা গোর্খাদের নন, সেটা বোঝানোর দিন হল ১৪ মে।’ তবে মন্ত্রীর মন্তব্যে যে কিছুটা হলেও বেকায়দায় পড়তে হয়েছে, তা একান্তে মানছেন তৃণমূলের একাধিক নেতা-মন্ত্রী। ঘটনার সূত্রপাত মে মাসের গোড়ায়। সে সময়ে দার্জিলিঙে সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রচারে গিয়েছিলেন। তাঁরই এক সভায় পর্যটন দফতরের রাষ্ট্রমন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, ‘আপনারা এমন ভাবে ভোট দিন যাতে ভোটের পরে ৩২টি ট্রাঙ্কে ভরে মোর্চার ৩২ জন প্রার্থীকে পাহাড়ের বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া যায়।’ ওই বক্তব্যকে সামনে রেখে প্রচারে নামে মোর্চা।
মোর্চার তরফে খোদ গুরুঙ্গ নানা সভায় বিষয়টি তুলে গোর্খা ভাবাবেগকে সামনে আনার চেষ্টা করেন। তৃণমূলের অন্দরের খবর, এর পরেই ইন্দ্রনীলবাবু প্রচার পর্ব সেরে চলে যান। তাঁকে সতর্ক করা হয় বলেও দলীয় সূত্রে খবর। তৃণমূলের এক প্রথম সারির নেতা জানান, ইন্দ্রনীলবাবু দলকে জানিয়েছেন, কাউকে আঘাত করার জন্য ও কথা বলেননি। যদিও পরে তাঁকে আর পাহাড়ে পাঠাননি তৃণমূল নেতৃত্ব।
বরং, তৃণমূলের তরফে সকলকে জানিয়ে দেওয়া হয়, পাহাড়বাসীর আবেগে আঘাত করতে পারে, এমন কোনও কথা প্রচারে বলা যাবে না। এর পরেই গোর্খাল্যান্ড কিংবা জাতিসত্তার বিষয়টিকে সযত্নে পাশ কাটিয়ে স্রেফ জিটিএ-র দুর্নীতি ও মুখ্যমন্ত্রীর সৌজন্যে পাহাড়ে কী ভাবে শান্তি ফিরেছে ও উন্নয়ন হয়েছে, তা নিয়েই জোরদার প্রচার চালায় তৃণমূল। এখন শেষ পর্বে ‘মেসেজ’ চালাচালির লড়াইয়ের ফল কী হয় সেটাই দেখার। পাহাড়ের তৃণমূলের পর্যবেক্ষক অরূপ বিশ্বাস বলেন, ‘‘পাহাড়ের মানুষকে কাছে টেনে আগলে রেখেছেন মুখ্যমন্ত্রী। নিজে বারবার গিয়ে কাজকর্মের তদারকি করছেন। পাহাড়বাসীরাও তাঁকে কাছে টানছেন। তাই আমরা আশাবাদী।’’