কড়া রাজ্য, পাশে নেই কেন্দ্রও, ক্রমশ কোণঠাসা হচ্ছেন পাহাড়ের ‘রবিনহুড’

এ দিন পুলিশ তল্লাশি চালিয়ে ফেরার সময়ে মোর্চার হামলার মুখে পড়ে। তাদের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। পোড়ানো হয় সংবাদমাধ্যমের গাড়ি। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে গুরুঙ্গের ঘরদোর ভেঙে, দামী গাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে ক্ষুব্ধ জনতা। পরে অবশ্য মোর্চা দাবি করেছে, এই কাজ সাদা পোশাকের পুলিশের।

Advertisement

কিশোর সাহা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৭ ০৪:২১
Share:

ফাইল চিত্র।

সকালে উঠে চা খেয়ে ‘দান-ধ্যান’-এর অভ্যেস বিমল গুরুঙ্গের। পাহাড়ের প্রবাদ, বস্তা

Advertisement

থেকে নোটের তাড়া গরিব-দুঃখী, বিপন্নদের মধ্যে নাকি অকাতরে বিলোনোর সুবাদেই তিনি ‘পাহাড়ের রবিনহুড’। কিন্তু, খুনের মামলায় সিবিআইয়ের চার্জশিট, ঠিকাদার ঘনিষ্ঠতা, উদ্ধত আচরণ, যথেচ্ছ তোলা আদায়-সহ নানা অভিযোগের জেরে গত ৭ বছরে গুরুঙ্গ কিছুটা বেকায়দায়। আর সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তাঁকে জনবিচ্ছিন্ন করতে চাইছে রাজ্য সরকার।

এই কাজে রাজ্য এক দিকে স্লোগান তুলেছে, ‘পাহাড়ে গুন্ডারাজ চলবে না’। সেই সূত্রে তৃণমূল পাহাড়ে নেপালিভাষীদের মাধ্যমে গুন্ডাগর্দি, যখন খুশি বন্‌ধের বিরুদ্ধে প্রচারও চালাচ্ছে। অন্য দিকে, গুরুঙ্গ ও তাঁর একান্ত ঘনিষ্ঠ কয়েক জনের (বিশেষত, যাঁদের নাম মদন তামাঙ্গ খুনের সঙ্গে জড়িত) উপরে চাপ বাড়িয়ে তাঁদের জাঁতাকলে ফেলার চেষ্টাও চলছে। জিটিএ-র সদর দফতর ভানুভবনের দখল এর মধ্যেই নিয়েছে প্রশাসন।

Advertisement

এ দিন পুলিশ তল্লাশি চালিয়ে ফেরার সময়ে মোর্চার হামলার মুখে পড়ে। তাদের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। পোড়ানো হয় সংবাদমাধ্যমের গাড়ি। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে গুরুঙ্গের ঘরদোর ভেঙে, দামী গাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে ক্ষুব্ধ জনতা। পরে অবশ্য মোর্চা
দাবি করেছে, এই কাজ সাদা পোশাকের পুলিশের। কিন্তু পাল্টা জবাব দেওয়ার এই বার্তা গুরুঙ্গের কাছে পৌঁছে গিয়েছে।

তাতেই পাহাড়ের মোড়ে মোড়ে নানা আলোচনা। যেমন, রাজ্য পুলিশ-প্রশাসন গুরুঙ্গের বাড়ি থেকে যে টাকার বস্তা পেয়েছে, তার উৎস জানা যাবে কি? কারও মতে, ওই রকম বস্তা আরও কোথাও আছে কি না, তা-ও দেখা হোক। অতীতে জিএনএলএফ কিংবা পরে মোর্চা গঠনের পরে গুরুঙ্গের আন্দোলনের সময়কার ছবির সঙ্গে ফারাক এমন আলোচনাই। তখন ঘিসিঙ্গ বা গুরুঙ্গের বিরুদ্ধে একটা কথাও পাহাড়ে শোনা যেত না।

আরও পড়ুন:তল্লাশির পর উধাও গুরুঙ্গ

এখন ব্যবসায়ী-বাসিন্দাদের অনেকে এতটাই বিরক্ত যে, তাঁরা চাইছেন, পাহাড়ে স্বাভাবিক অবস্থা ফেরাতে রাজ্য সরকার আরও কড়া হোক। এবং আন্দোলনের নামে কয়েক জনের যথেচ্ছ টাকা তোলা, ভয় দেখানোর দিন শেষ হোক।

পাহাড়ে ১৫টি সম্প্রদায়ের বোর্ড গড়ার সুবাদে অন্তত ৩ লক্ষ পাহাড়বাসীকে কাছে টেনেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁদের মাধ্যমে পাহাড়ের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ কী চাইছেন, সেটাও তিনি নিয়মিত জানতে পারেন। বৃহস্পতিবার কলকাতায় রাজ্য পুলিশের এক অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘পাহাড়ে যেটা হচ্ছে, সেটা গুন্ডামি। বন্দুক, পেট্রোল বোমা দিয়ে রাজনীতি হয় না। পাহাড়ের মানুষেরা ভীষণ ভাল, শান্তিপ্রিয়। কয়েকটা গুন্ডার জন্য পাহাড় অচল হয়ে থাকবে, তা হতে পারে না। রাজ্য গুন্ডামি
দমন করবেই।’’

রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ভাবে এই প্রবল চাপের মুখে আপাতত আত্মগোপন করেছেন গুরুঙ্গ। কারণ, তিনি জানেন, বাম আমলে যে ভাবে পাহাড় জুড়ে ছড়িয়ে খেলেছেন, তা এখন পুরোপুরি সম্ভব নয়। সেটা গত পুরভোটে কিছুটা বোঝা গিয়েছে। আবার বেশি দিন গা ঢাকা দিয়ে থাকাও কঠিন। তা হলে প্রশাসনের চাপে রাশ আরও আলগা হতে পারে।

এই অবস্থায়, এ দিন রোশন গিরি দিল্লি গিয়ে দার্জিলিঙের সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়ার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের সঙ্গে দেখাও করেছেন। মোর্চার এক নেতা একান্তে জানান, দিল্লি থেকে তেমন সাড়া মেলেনি। এই অবস্থায় রাজ্যের পক্ষ থেকে অনুরোধ এলে তাঁরা আন্দোলন থেকে সরে আলোচনায় যাওয়ার কথা ভাবতে পারেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন