বন্ধের সমর্থনে দার্জিলিঙে মিছিল মোর্চার। — নিজস্ব চিত্র
বনধ সফল করতে ব্লক কমিটির সব নেতাদের এসএমএস পাঠিয়ে আবেদন জানালেন বিমল গুরুঙ্গ। মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে এসএমএস পাঠানো শুরু হয়। মোর্চার শীর্ষ নেতাদের মোবাইল নম্বর থেকে পাঠানো এসএমএসে বিমল গুরুঙ্গের নাম লেখা হয়েছে।
এসএমএসের বার্তা, যে ভাবেই হোক রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ফাইনাল ম্যাচ জিততেই হবে। সফল করতেই হবে বন্ধ।
অন্য দিকে, অফিস, স্কুলের সঙ্গে পাহাড়ে রেশন দোকান খুলে রেখে জনজীবন স্বাভাবিক রাখারও নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য সরকার। সোমবার রাতে নবান্ন থেকে প্রশাসনের কাছে নির্দেশ পাঠিয়ে প্রতিটি রেশন দোকানের তালিকা চাওয়া হয়েছে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশও পাঠানো হয়েছে। পুলিশি পাহারায় সরকারি বাস স্বাভাবিক ভাবেই চলাচল করবে। সেই সঙ্গে অফিস, রেশন দোকান খোলা থাকলে রাস্তাতে বাসিন্দাদের চলাফেরা থাকবে বলে দাবি প্রশাসনের।
রাজ্য এবং মোর্চা দুই তরফের অনড় মনোভাবের কারণে পাহাড়ে মঙ্গলবার দিনভর উত্তেজনা বজায় রইল। এ দিন দুপুরে দার্জিলিং লাগোয়া বাতাসিয়া লুপে মোর্চা এবং তৃণমূল সমর্থকদের মধ্যে বচসা বেধে যায়। পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। সন্ধ্যায় কালিম্পঙের ডম্বর চকে পুলিশের সঙ্গেই মোর্চা সমর্থকদের ধস্তাধস্তি হয়। মোর্চা সমর্থকরা মোটরবাইক মিছিল করতে গেলে পুলিশ বাধা দেয়। সে সময়. কালিম্পঙে ছিলেন জলপাইগুড়ি রেঞ্জের ডিআইজি রাজেশ যাদব। ডিআইজির নাম করে স্লোগান দিতে শুরু করেন মোর্চা সমর্থকরা। পুলিশ কর্মীদের সঙ্গে তাঁদের ধাক্কাধাক্কিও হয়।
পুলিশের বাধায় শেষ পর্যন্ত বাইক মিছিল না হলেও, কালিম্পঙের অলিগলিতে মোর্চার পতাকা লাগানো বাইক টহলদারি শুরু করে। কালিম্পঙে রয়েছেন রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব। মোর্চা উত্তেজনা তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে বলে ডিআইজি এবং দার্জিলিঙের পুলিশ সুপারকে অভিযোগ জানান গৌতমবাবু।
কালিম্পঙে রয়েছেন বিমল গুরুঙ্গও। বন দফতরের একটি বাংলোয় গুরুঙ্গ রয়েছেন। মোর্চা নেতারা কালিম্পঙে প্রচুর বহিরাগত জড়ো করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। যদিও মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি পাল্টা দাবি করে বলেছেন, তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীরাই পাহাড়ে অশান্তি তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে।
এ দিন দুপুরে কালিম্পঙে বন্ধ-বিরোধী মিছিল করেছেন গৌতমবাবু। বিকেলে তৃণমূল নেতাদের নিয়ে পর্যটন আবাসে বৈঠকও করেছেন। তৃণমূলের পাহাড় কমিটির নেতারা ছাড়াও বেসরকারি গাড়িচালক সংগঠনের সদস্যরা বৈঠকে ছিলেন। আজ, বুধবার পাহাড়ের রাস্তায় গাড়ি থাকবে বলে আশ্বস্ত করেছেন গাড়ি চালকদের সংগঠন। বিভিন্ন হোটেল রিসর্টে থাকা পর্যটকদের প্রয়োজন হলে গাড়ির ব্যবস্থা করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গত ২ সেপ্টেম্বর বামেদের ডাকা বন্ধের মতো পাহাড় বন্ধেও কোনও গাড়ি বা দোকানের ক্ষতি হলে রাজ্যের তরফে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে বলে দাবি করা হয়েছে। সকাল ৬টা থেকে তৃণমূল কর্মীরা মিছিল শুরু করবে বলে জানানো হয়েছে। পাল্টা মিছিল করার হুমকি দিয়েছে মোর্চাও। কালিম্পঙে তৃণমূলের সহ সভাপতি পাসাং তামাঙ্গ বলেন, মোর্চা বহিরাগতদের জড়ো করেছে। উত্তেজনা তৈরি করছে। আমরাও পথে নামব। জনজীবন স্বাভাবিক রাখার সব রকম পদক্ষেপ করা হবে।
মোর্চার অন্দরের খবর, কালিম্পঙে বন্ধ করাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েই ঘাটি গেড়েছেন গুরুঙ্গ। একে দলের প্রাক্তন বিধায়ক হরকাবাহাদুর ছেত্রী পৃথক দল গড়ায় সংগঠনে ধস নেমেছে অনেকটাই। সেই সঙ্গে দিনকয়েক আগে মুখমন্ত্রীর দু’দিন পরপর সভা করা, পূর্তমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের গুরুঙ্গের বাড়ি ঘেরাওয়ের হুমকি দেওয়া— সবই হয়েছে কালিম্পঙের মাটি থেকেই। যদিও, এখানকার সাধারণ বাসিন্দাদের অনেককেই বন্ধ নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করতে শোনা গিয়েছে। গাড়ি চালক ছিরিং দেওয়ানের কথায়, ‘‘কালিম্পঙের অর্থনীতি স্কুল-কলেজের ওপরে নির্ভরশীল। বন্ধে উত্তেজনা তৈরি হলে স্কুলগুলি অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটি হয়ে যেতে পারে। তার জন্য ভুগতে হবে আমাদেরই।’’