প্রকাশ্যে এসেও সুর নরম গুরুঙ্গর

গত প্রায় ছ’মাস তিনি দার্জিলিং-ছাড়া। কখনও শোনা যাচ্ছিল তিনি লুকিয়ে আছেন সিকিমে। কখনও আবার নেপালে। বৃহস্পতিবার দিল্লিতে উদয় হলেন বিমল গুরুঙ্গ। এবং দেখা গেল, রাজ্য সরকারের তাড়া খেয়ে সুর নরম হয়ে গিয়েছে একদা গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার একচ্ছত্র অধিপতির!

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:৫৭
Share:

দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠকে বিমল গুরুঙ্গ। বৃহস্পতিবার। —নিজস্ব চিত্র।

গত প্রায় ছ’মাস তিনি দার্জিলিং-ছাড়া। কখনও শোনা যাচ্ছিল তিনি লুকিয়ে আছেন সিকিমে। কখনও আবার নেপালে। বৃহস্পতিবার দিল্লিতে উদয় হলেন বিমল গুরুঙ্গ। এবং দেখা গেল, রাজ্য সরকারের তাড়া খেয়ে সুর নরম হয়ে গিয়েছে একদা গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার একচ্ছত্র অধিপতির!

Advertisement

এ দিন হাতে গোনা কয়েকটি সংবাদমাধ্যমকে ডেকে যা বললেন গুরুঙ্গ, তার মধ্যে পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবি নেই, তর্জনগর্জন নেই। বরং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনায় বসতেও যে তিনি রাজি, জানিয়ে দিলেন সে কথাও।

তবে ‘‘গোর্খা পরিচয়ের জন্যই আমাদের লড়াই,’’ এ কথা বলে রাজ্যের বিরুদ্ধে আঙুলও তুলেছেন গুরুঙ্গ। তাঁর কথায়, ‘‘পাহাড়ে আন্দোলন রুখতে রাজ্য দিশাহীনের মতো কাজ করছে। আমরা জঙ্গি নই। শান্তিপূর্ণ ভাবে আন্দোলন করি। পুলিশ গুলি চালিয়েছে। হিংসা চালিয়েছে। ১২ জন গোর্খা প্রাণ হারিয়েছে। তবুও পাহাড়বাসীকে শান্তি বজায় রাখতে বলব। কারণ, আমরা গাঁধীজির আদর্শে বিশ্বাস করি।’’ সেই সঙ্গে পাহাড়বাসীদের কাছে তাঁর আর্জি, রাজনৈতিক আন্দোলনে দীর্ঘ সময় লাগতে পারে। সে জন্য ধৈর্য রাখতে হবে। এর পরেই তাঁর সংযোজন, ‘‘আমি আইনে ভরসা রাখি। সে জন্যই আমাদের বিরুদ্ধে তোলা সব অভিযোগের তদন্ত নিরপেক্ষ সংস্থাকে দিয়ে করানোর অনুরোধ করছি। তা হলেই সাদা-কালো স্পষ্ট হয়ে যাবে।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: পুলিশকে ধুলো দিয়ে কী ভাবে দিল্লি গেলেন গুরুঙ্গ?

যে গুরুঙ্গ দু’মাস আগেও হুমকি, হুঁশিয়ারি দিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন, বিনয় তামাঙ্গরা রাজ্যের সঙ্গে বৈঠক করার পরে যে গুরুঙ্গ জানিয়েছিলেন, গোর্খাল্যান্ড ছাড়া আর কোনও বিষয়ে কথা হবে না, যে গুরুঙ্গ এক সময়ে রাজ্যের সঙ্গে বৈঠকে বসতেও নারাজ ছিলেন, এ দিনের সাংবাদিক বৈঠকে তার কোনও ছাপ মেলেনি। কেন?

রাজনৈতিক শিবিরের একটি অংশ বলছে, তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা, লুক আউট নোটিস ঝুলছে। শরীরও ভাল নেই তাঁর। উল্টো দিকে, বিনয়রা একে একে জিতে নিচ্ছেন তাঁর সব দুর্গ। বুধবার দার্জিলিং পুরসভারও ‘পতন’ ঘটেছে। ২৯-০ ভোটে গুরুঙ্গপন্থী চেয়ারম্যান ডিকে প্রধানকে হারিয়ে দিয়েছেন বিনয়পন্থীরা।

এই অবস্থায় গুরুঙ্গের আত্মপ্রকাশ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্টে তাঁর দায়ের করা মামলার শুনানি সামনেই। ফলে এখন প্রকাশ্যে এসে নিজের ‘শান্তিপ্রিয়’ ও ‘অত্যাচারিত’ ভাবমূর্তি তুলে ধরা জরুরি, এমনই পরামর্শ দিয়েছিলেন বিজেপি নেতারা। অনেকের মতে, বিজেপির সঙ্গে আলোচনা করেই বাইরে এলেন গুরুঙ্গ।

বিজেপি যে প্রথম থেকে গুরুঙ্গকে সাহায্য করছে, সেটা অনেকবারই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। বিশেষ করে যখন গুরুঙ্গের পক্ষ নিয়ে মামলা লড়ছেন হরিশ সালভের মতো দেশের অন্যতম সেরা আইনজীবী, তখনই এই নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে ওঠে। এ দিনের সাংবাদিক বৈঠকটিও হয় ল্যুটিয়েন্স দিল্লির এক শীর্ষ ও বর্ষীয়ান বিজেপি নেতার বাড়িতে। দিল্লির রাজনীতিকদের একাংশ এ-ও বলছেন, গুরুঙ্গের বিষয় নিয়ে এক সময়ে রাজ্যের কাছে তদ্বির করেছেন কেন্দ্রের এক শীর্ষ মন্ত্রী।

বিজেপির ওই শিবিরেরই বক্তব্য, তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলির তদন্তের দায়িত্ব যাতে কেন্দ্রীয় কোনও সংস্থা পায়, তা নিয়েই বারবার তদ্বির করেছেন গুরুঙ্গ। তবে সিবিআই এগুলি হাতে নিতে চায়নি। ছ’টি মামলা ইউএপিএ ধারায় হওয়ায় এনআইএ অবশ্য এর মধ্যেই প্রাথমিক তদন্ত করে গিয়েছে। রাজ্য প্রশাসনের একটি সূত্র বলছে, সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিলে এনআইএ তদন্ত শুরু করতেই পারে। ফলে পরিস্থিতি বুঝে রাজ্য পুলিশও কিছুটা মেপে পা ফেলছে।

কিন্তু রাজ্য কি বৈঠকে রাজি হবে? রাজ্য প্রশাসন থেকে এ দিন প্রকাশ্যে কিছু বলা হয়নি। তবে অন্দরের খবর, এখনই কোনও সিদ্ধান্ত নিতে রাজি নয় রাজ্য। সুপ্রিম কোর্ট কী রায় দেয় দেখে তার পরে না হয় ভাবা যাবে, বোঝালেন প্রশাসনের এক কর্তা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন