Bimal Gurung

হামলায় জখম বিনয়পন্থী কর্মী

নেতারা জানান, রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে পাহাড়ে পঞ্চায়েত নির্বাচন এবং জিটিএ-র নিরপেক্ষ অডিটের দাবিও জানানো হয়েছে।

Advertisement

কৌশিক চৌধুরী ও শান্তশ্রী মজুমদার 

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০২০ ০৫:০৫
Share:

দলে যোগ: তৃণমূলে যোগদান জিটিএ-র অস্থায়ী কর্মীদের। নিজস্ব চিত্র

আবার অশান্তি পাহাড়ে। বিনয় তামাংদের অভিযোগ, তাঁদের দলের এক যুবককে মঙ্গলবার ছুরি মারা হয়েছে। ঘটনাটি মঙ্গলবার রাতে, দার্জিলিং সদরের তাকভর চা বাগান এলাকার। এর জন্য বিনয় তামাংরা আঙুল তুলেছেন বিমল গুরুংপন্থীদের দিকে। বিমলের দিক থেকেই তৎক্ষণাৎ কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তবে তাঁর ঘনিষ্ঠরা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। একই দিনে দার্জিলিঙের সাংসদ রাজু বিস্তার সঙ্গে বৈঠক করেন জিএনএলএফ। বিজেপির আর এক জোটসঙ্গী গোর্খা লিগও জানিয়েছে, বিজেপি অবিলম্বে কাজ করে না দেখালে তারাও দূরত্ব বাড়াবে।

Advertisement

২০১৭ সালে রক্তাক্ত আন্দোলন এবং ১০৪ দিনের বন্‌ধের পরে এত দিন পাহাড় শান্তই ছিল। এ বারে ফের সেখানে কারও আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটল। এ দিনের ঘটনায় গুরুংপন্থীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন বিনয়পন্থীরা। একই সঙ্গে পুরনো কথা মনে করিয়ে দিয়ে বিনয় তামাং এ দিন বলেন, ‘‘আমাদের যুব কর্মীটি মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন। ২০১৭ সালে এই হিংসার রাজনীতি থেকে সরার জন্য আমি গুরুংয়ের দল থেকে আলাদা হয়েছিলাম। আমরা অহিংসার পথেই থেকেছি। আমি পাহাড়বাসীর কাছে আবেদন করছি, সকলে বিমল গুরুংয়ের এই ধরনের রাজনীতির বিরুদ্ধে সরব হোন।’’ পুলিশের কাছে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিও করেছেন বিনয় তামাং।

পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন দুপুরের পর ওই এলাকায় গুরুংপন্থীরা একটা সভা করছিলেন। তার পরে সেখানে নতুন করে দলীয় দফতর খোলা হয়। রাতে বিনয়পন্থী চেতন থাপা আরও কয়েক জন সেখান দিয়ে যান। অভিযোগ, বিনয়পন্থীদের দেখে নানা কথা বলা হয়। চেতন এগিয়ে প্রতিবাদ করলে তাঁর পিঠে ছুরি দিয়ে এক যুবক আঘাত করে পালায় বলে অভিযোগ। রাতে তাঁকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় জেলা হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করানো হয়েছে।

Advertisement

মোর্চার মধ্যে যখন মারপিটের অভিযোগ, তখন বিজেপির ঘনিষ্ঠদের মধ্যেও বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। পাহাড় নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের মনোভাব বুঝে পদক্ষেপ করতে চাইছে গোর্খা লিগ এবং জিএনএলএফ, দু’পক্ষই। মঙ্গলবারও শিলিগুড়িতে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির একাধিক নেতা এবং দার্জিলিঙের বিধায়ক নীরজ জিম্বা বৈঠক করেন রাজু বিস্তার সঙ্গে। দলীয় সূত্রের খবর, সম্প্রতি কলকাতা সফরে এসে অমিত শাহ পাহাড়ের নেতাদের একাংশের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি নীরজ জিম্বাকে জানিয়েছেন, দার্জিলিং যেতে পারলে ভাল, না হলে তিনি দিল্লিতে সবার সঙ্গে দেওয়ালির পরেই বৈঠকে বসবেন। তাই এ দিন রাজু বিস্তাকে জিএনএলএফ নেতারা জানিয়ে এসেছেন, পুজোর পরেই যাতে দ্রুত যাতে বৈঠক ডাকা হয়, সেই ব্যবস্থা করতে। ২০২১ সালের ভোট প্রক্রিয়া শুরুর আগেই দলীয় পথ বাছতে চাইছে জিএনএলএফ। নীরজ বলেন, ‘‘জল বিভিন্ন দিকে গড়াচ্ছে, কেন্দ্রকে এখনই সদর্থক পদক্ষেপ করতে হবে।’’ রাজু বিস্তাও বলেন, ‘‘বিমল গুরুং আলাদা হওয়াটা বিজেপি জোটের পক্ষে ভাল হয়নি। তবে বাকিরা একসঙ্গে আছি।’’ নীরজ অবশ্য একই সঙ্গে বলেন, ‘‘আগামী বিধানসভা ভোটে বিজেপি তো রাজ্যে ক্ষমতাতেও আসতে পারে। আমরা তাই সব রকম চিন্তাভাবনা, বিকল্প খোলা রাখছি।’’

বিজেপির আর এক জোট সঙ্গী গোর্খা লিগের পক্ষেও এ দিন দলের সহ-সভাপতি বিক্রম রাই এবং সাধারণ সম্পাদক শক্তি শর্মা বলেন, ‘‘সাংসদ রাজু বিস্তাকে বলেছি, দ্রুত উন্নয়নের কাজ করতে হবে। রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে আর কত দিন চলবে?’’ সংগঠন সূত্রে দাবি, পাহাড়ে কেন্দ্রীয় সরকারের মাধ্যমে উন্নয়ন, বেকারদের কর্মসংস্থানের কাজ শুরু না হলে ধীরে ধীরে একটি অংশ তৃণমূলের দিকে চলে যেতে শুরু করেছে। তাই সংগঠন বাঁচাতেই এই দাবি তুলছে বিজেপির সহযোগী দলগুলি।

নেতারা জানান, রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে পাহাড়ে পঞ্চায়েত নির্বাচন এবং জিটিএ-র নিরপেক্ষ অডিটের দাবিও জানানো হয়েছে। যদিও গোর্খা লিগকে নিয়ে চিন্তিত নয় বলেই দাবি করছে তৃণমূল। দলের দার্জিলিং জেলা সভাপতি রঞ্জন সরকার বলেন, ‘‘আইন আইনের পথে চলবে। ওরা বিজেপি এবং রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেছে। যা একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ।’’এ সবের মধ্যে জিটিএ-র অস্থায়ী কর্মীদের তৃণমূলে যোগদান জারি রয়েছে। মঙ্গলবার ইউনাইটেড এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশন মিরিক মহকুমার সংগঠনও শাসকদলে মিশে গেল বলে জানানো হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন