জন্মদাত্রীর জয়, কোর্টের নির্দেশে শিশুকে ফেরালেন পালিকা মা

একটি মামলায় আলিপুর আদালতের নির্দেশে আইনি লড়াইয়ে পরাজিত হয়ে পালিত সন্তানকে জন্মদাত্রী মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হলেন পালিকা মা।

Advertisement

শুভাশিস ঘটক

শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৮ ০১:১১
Share:

প্রতীকী চিত্র।

‘দেবকী’র কাছে আইনি লড়াইয়ে হেরে গেলেন ‘মা যশোদা’!

Advertisement

কারাগারে জন্ম হয়েছিল শ্রীকৃষ্ণের। ছেলের জীবন বাঁচাতে মা দেবকী যশোদার হাতে সঁপে দিয়েছিলেন তাকে। সেই পালিকা মায়ের কাছেই বড় হয়েছিলেন দেবকীনন্দন। কিন্তু বাস্তবে অবশ্য তা ঘটল না। সম্প্রতি একটি মামলায় আলিপুর আদালতের নির্দেশে আইনি লড়াইয়ে পরাজিত হয়ে পালিত সন্তানকে জন্মদাত্রী মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হলেন পালিকা মা।

আদালত সূত্রের খবর, বছর সাতেক আগে দক্ষিণ শহরতলির বিষ্ণুপুরের বাসিন্দা এক স্বামীহারা মহিলা নিজের তিন মাসের মেয়েকে ফলতার এক নিঃসন্তান দম্পতির হাতে তুলে দিয়েছিলেন। আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, মাত্র দশ টাকার একটি স্ট্যাম্প পেপারে সই করেই শিশুটিকে নেওয়া হয়েছিল। এই ঘটনার বছর চারেক পরে সেই জন্মদাত্রী মা আবার বিয়ে করেন। তাঁর জীবনে স্থায়িত্ব আসে। অবস্থারও উন্নতি হয়। এর পরেই নিজের মেয়েকে ফিরে পেতে অস্থির হয়ে ওঠেন তিনি। স্বামীকে নিয়ে একাধিক বার ফলতার দৌলতপুর এলাকার মল্লিকপুরে সেই পালিকা মায়ের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। কিন্তু মেয়ের কোনও হদিস পাননি। অভিযোগ ওঠে, মেয়েকে ফেরত চাইতেই পালিকা মা তাকে অন্যত্র সরিয়ে দেন। এর পরে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে বিষ্ণুপুর থানায় জন্মদাত্রী মা পালিকার মায়ের বিরুদ্ধে অপহরণের মামলা দায়ের করেন। ২০১৭-র মার্চ মাসে আদালতে আত্মসমপর্ণ করেন পালিকা মা ও তাঁর স্বামী। বিচারক দু’জনের জামিন মঞ্জুর করেন।

Advertisement

এর মাসখানেক পরেই জন্মদাত্রী মা তাঁর মেয়েকে ফেরত পেতে আদালতের দ্বারস্থ হন। জেলা দায়রা আদালতের বিচারক সাত বছরের ওই মেয়ের গোপন জবানবন্দি
নেন। আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, সেই জবানবন্দিতে শিশুটি পালিকা মায়ের কাছেই থাকতে চায় বলে বিচারককে জানায়। বিচারক ওই জবানবন্দির ভিত্তিতে পালিকা মায়ের কাছেই মেয়েকে ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ জারি করেন। মাসখানেক পরে জন্মদাত্রী মা ফের মেয়েকে ফেরত চেয়ে জেলা বিচারকের আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালতের সরকারি আইনজীবী পার্থসারথি মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আদালতে পালিকা মা দত্তক নেওয়ার কোনও কাগজপত্র পেশ করতে পারেননি। সই করা একটি স্ট্যাম্প পেপার ছাড়া আর কোনও কাগজই ছিল না তাঁর কাছে। সেই কারণে মেয়েটির গোপন জবানবন্দিও আদালতে গ্রাহ্য হয়নি। আইনের চোখে দেখলে ওই দম্পতি শিশুটিকে বেআইনিভাবে নিজেদের কাছে রেখেছিলেন।’’ এর পরে গত মাসের ১৯ তারিখ অতিরিক্ত জেলা দায়রা বিচারক শুভাশিস ঘোষাল জন্মদাত্রীর কাছে সন্তানকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন পালিকা মাকে।

আলিপুর আদালতের এক আইনজীবীর কথায়, ‘‘পালিকা মা ও তাঁর স্বামীর সংসারে এখন খুবই আর্থিক অনটন। প্রায় দিন আনি দিন খাই অবস্থা। সেই কারণেই জন্মদাত্রী মা বিয়ে করে সংসার গুছিয়ে নেওয়ার পরে নিজের মেয়েকে ফেরত পাওয়ার জন্য উতলা হয়ে ওঠেন।’’ ওই আইনজীবী জানান, বিচারকের নির্দেশ শোনার পরে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে এজলাসেই হাউহাউ করে কাঁদতে থাকেন পালিকা মা। তাঁর কান্না দেখে কেঁদে ফেলে শিশুটিও। জন্মদাত্রী মা তখন পালিকা মায়ের হাত থেকে মেয়েকে ছাড়িয়ে এনে বিচারকের দিকে করজোড়ে বলেন, ‘‘ধন্যবাদ স্যর। আপনার জন্যই আমার মেয়েকে ফিরে পেলাম।’’ কাঁদতে কাঁদতেই পালিকা মা তখন বলেন, ‘‘ও আমার মেয়ে হুজুর। আমিই ওকে বড় করেছি।’’

টানাটানির সংসার হলেও বছরখানেক আগে মেয়েকে ডায়মন্ড হারবার থানা এলাকার একটি প্রাথমিক স্কুলে ভর্তিও করেছেন ওই পালিকা মা ও পালক বাবা। সরকারি আইনজীবী পার্থসারথিবাবু বলেন, ‘‘ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। কিন্তু আইন তো আইনের পথেই চলবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন