ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙায় ঘাটালের বীরসিংহ গ্রামে তাঁর জন্ম ভিটেতে দাঁড়িয়ে ক্ষমা চাইছেন গ্রামবাসীরা। ছবি: কৌশিক সাঁতরা
মনীষীর মূর্তি ভাঙা যায়। কিন্তু তাঁর আদর্শ, সমাজে অবদান অস্বীকার করা যায় না। তা ছাড়া যাঁর নামেই সাগর তাঁকে ছোঁবে এমন সাধ্য কার! রাগ, ক্ষোভ পেরিয়ে বিদ্যাসাগরের জন্মভিটে বীরসিংহে ধরা পড়ল এই সুর।
টেলিভিশন, সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে কেউ জেনে গিয়েছিলেন রাতেই। বাকিরা জেনেছেন বুধবার সকালে। তার পরে গর্জে উঠতে সময় লাগেনি। কার মিছিল থেকে, কারা মূর্তি ভাঙল এ সবের চেয়েও বড় হয়ে উঠেছে—বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার কথা কেউ ভাবল কী ভাবে!
বুধবার সকালে ঘাটালের বীরসিংহে বিদ্যাসাগরের জন্মভিটে পৌঁছতেই সবর্ত্রই শুধু মূর্তি ভাঙা নিয়ে নানা আলোচনা। বিদ্যাসাগর স্মৃতি রক্ষা কমিটির সম্পাদক শক্তিপদ বেরা বললেন, “আমরা এর প্রতিবাদে রাস্তায় নামব। যতদূর যেতে হয় যাব।” বীরসিংহ ভগবতী হাইস্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়া সৌরভ প্যারিয়াল, রাজেশ চক্রবর্তী, ভানু রায়েরা বললেন, “অভিযুক্তদের কঠিন শাস্তি দিতে হবে। বিষয়টি হজম হচ্ছে না।”
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
ঘটনার কথা শুনে প্রথমে ক্ষোভে ফেটে পড়েছিল বীরসিংহ। যত সময় গড়িয়েছে ততই বদলেছে প্রতিক্রিয়া। যার সারমর্ম— মূর্তি ভেঙে বিদ্যাসাগরের মতো মনীষীকে খাটো করা যায় না। গ্রামেরই বাসিন্দা তারাশঙ্কর পাল যেমন বলছিলেন, ‘‘তাঁর নামেই তো সাগর। সেখানে তো বাকি সবই ক্ষুদ্র।’’ বিদ্যাসাগর স্মৃতি রক্ষা কমিটির কেয়ার টেকার দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “যারা ভেঙেছে তারা জানেও না কী করেছে।”
এখন বিদ্যাসাগরের জন্মের দ্বিশতবর্ষ উদযাপন চলছে। রাজ্য সরকার কমিটি গড়েছে। রাজ্য জুড়ে উদযাপনের প্রস্তুতি এখন তুঙ্গে। এমন সময় ঘটে গেল এই ঘটনা। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচায রঞ্জন চক্রবর্তী বলছেন, “এটা বাঙালির লজ্জা। নিন্দার কোনও ভাষা নেই। এটা এক রকমের সাংস্কৃতিক অবক্ষয়ও।”
এ দিন হাওড়ার বাগনান থেকে বীরসিংহ গ্রামে বেড়াতে এসেছিলেন কয়েকজন। তাঁদেরই একজন তুষার মাইতি বললেন, “এই পাপ কোথায় রাখব আমরা। বিদ্যাসাগরের কাজের প্রচার, তাঁর ভাবনা আরও ব্যাপক ভাবে প্রচারের মধ্য দিয়েই হয়তো এর ক্ষতিপূরণ সম্ভব। তখনই হয়তো দুবৃর্ত্তরা বুঝতে পারবে তাঁরা আসলে নিজের পায়েই কুড়ুল মেরেছে।”
শুধু বীরসিংহ নয়। আশপাশ গ্রামেও নিন্দায় মুখর। বীরসিংহ সংলগ্ন পাতরা গ্রামের সঞ্জীব ঘোষ, দিলীপ ঘোষেরা বললেন, “ঘটনা শুনে মাথা হেঁট হয়ে গিয়েছে। যারাই ভাঙুক তারা অন্যায় করেছে।” মূর্তি ভাঙার আঁচ পড়েছে ঘাটালেও। সকলেরই বক্তব্য, মূর্তি ভাঙা অন্যায়। তা নিয়ে রাজনীতিও বরদাস্ত করা যায় না।