নাবালিকা বিয়ে রুখবে ‘বিশ্বশ্রী’

পোশাকি নাম হয়তো আলাদা, কিন্তু এমন বাহিনী জেলায় নতুন নয়। বছরখানেক আগে পুরুলিয়ার মানবাজার ২ ব্লকের বসন্তপুরে এমন একদল কিশোরীর দেখা মিলেছিল। কমলা-সাদা সালোয়ার কামিজে সজ্জিত হয়ে হাতে লেখা ‘নাবালিকা বিয়ে মানছি না মানবো না’ লেখা পোস্টার নিয়ে গ্রাম ঘুরত তারা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মালদহ শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০১৭ ১০:৫০
Share:

প্রতীকী ছবি।

পাশের বাড়ির ছোট্ট মেয়েটি হয়তো হঠাৎই স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। এইটুকু ঘটনাই হতে পারে বড় সূত্র। এবং খোঁজ করে দেখলে হয়তো জানা যাবে, ওই নাবালিকাকে বসানো হচ্ছে বিয়ের পিঁড়িতে। অথবা হয়তো বিয়ের নাম করে ভিন্‌ রাজ্যে পাচার করে দেওয়ারই বন্দোবস্ত হয়েছে। এই সূত্র যাদের কাছে সহজে আসতে পারে, সেই ১৪ থেকে ১৮ বছর বয়সি মেয়েদের নিয়ে ‘‘বিশ্বশ্রী বাহিনী’’ গঠন করল মালদহ প্রশাসন।

Advertisement

নাবালিকা বিয়ে রুখতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে এই জেলাকে। এর আগে পুরোহিত, মৌলবি, ক্ষৌরকার-সহ যাঁরা বিয়ের প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত, তাঁদের নিয়ে আলোচনা করেছে প্রশাসন। এ বার কন্যাশ্রী প্রকল্পের আওতায় থাকা নাবালিকাদের নিয়ে বাহিনী গঠিত হলো। এই বাহিনীতে বিশেষ করে রাখা হয়েছে সেই সব মেয়েকে, যারা এক সময়ে স্কুলছুট হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু কন্যাশ্রী প্রকল্প শুরু হওয়ার পরে ফের পড়াশোনা শুরু করেছে। প্রশাসন সূত্রে বক্তব্য, এই মেয়েদের পড়াশোনা করার জেদ বেশি বলেই মনে করা হচ্ছে। তাই নাবালিকা বিয়ে রুখতে তাদের বেশি কার্যকরী হওয়ার সম্ভাবনা।

পোশাকি নাম হয়তো আলাদা, কিন্তু এমন বাহিনী জেলায় নতুন নয়। বছরখানেক আগে পুরুলিয়ার মানবাজার ২ ব্লকের বসন্তপুরে এমন একদল কিশোরীর দেখা মিলেছিল। কমলা-সাদা সালোয়ার কামিজে সজ্জিত হয়ে হাতে লেখা ‘নাবালিকা বিয়ে মানছি না মানবো না’ লেখা পোস্টার নিয়ে গ্রাম ঘুরত তারা। ‘চেতনার আলোয় কন্যাশ্রী ক্লাব’ রীতিমতো সাড়া ফেলেছিল আদিবাসী গ্রামগুলোতে। সেই কিশোরীরা এখনও স্কুলছুট মেয়েদের স্কুলে ফেরাচ্ছে।

Advertisement

এ বার পালা মালদহের। এখানে নাবালিকা বিয়ে কতটা মাত্রাছাড়া, তার উদাহরণ দিতে গিয়ে প্রশাসনের এক কর্তা মাস দুই আগের একটি ঘটনা তুলে ধরলেন। কালিয়াচক ২ ব্লকের উত্তর লক্ষ্মীপুর গ্রামের ১৪ বছরের রুকসানা খাতুনের (নাম পরিবর্তিত) বিয়ে উপলক্ষে সকাল থেকেই সরগরম বাড়ি। বেলা ১১টায় বিয়ে কবুল করার পালা। তার মাত্র পনেরো মিনিট আগে মোথাবাড়ি থানার পুলিশ সেই বাড়িতে পৌঁছয়। এর পরেই অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া সেই পাত্রীর বাবার কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে বিয়ে বন্ধ করে তাঁরা। ফেরত পাঠায় পাত্র সহ বরযাত্রীদের।

আরও পড়ুন: বন্‌ধ তুলে নিন, বার্তা মোর্চাকে

প্রশাসনিক সূত্রেই খবর, জেলার বিভিন্ন প্রান্তে হামেশাই এ ভাবে বিয়ের পিঁড়িতে বসানো হচ্ছে নাবালিকাদের। বেশির ভাগ সময়েই সে সব খবর আসে না পুলিশ-প্রশাসন, চাইল্ড লাইন এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলির কাছে। আর খবর যদি বা আসে, তা-ও শেষ মুহূর্তে। জেলা সমাজকল্যাণ আধিকারিক অশোক পোদ্দার বলেন, ‘‘কোথাও নাবালিকার বিয়ের উদ্যোগ নেওয়া হলে এলাকার কিশোরীরাই আগাম সেই খোঁজ পাবে। তখন সেই পরিবারের সঙ্গে কথা বলে বিয়ে বন্ধ করা সম্ভব হবে।’’

প্রশাসন সূত্রে বলা হয়েছে, জেলার সব ক’টি ব্লকেই এই বাহিনী সক্রিয় থাকবে। এর সদস্যরা যেমন নাবালিকা বিয়ের খবর আগাম জানাবে প্রশাসনকে, তেমনই স্কুলছুট মেয়েদের খুঁজে স্কুলে ভর্তি করানো, নারীপাচার নিয়ে সচেতন করার কাজও করবে। আগামী ৭ অগস্টের মধ্যে প্রতিটি বাহিনী গড়ার জন্য জেলার ১৫টি ব্লকে নির্দেশ পাঠানো হয়েছে।

জেলাশাসক কৌশিক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ওই তারিখের মধ্যে বিশ্বশ্রী বাহিনী গড়ার কাজ শেষ করতে বলেছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন