পুরুষোত্তম রামচন্দ্রের চ্যালেঞ্জার হিসাবে ২৫ বৈশাখ রবীন্দ্রনাথকে সামনে এনেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। এ দিন শাসক দলের আয়োজনে সকাল থেকেই জেলায় জেলায় বাজতে শুরু করে ‘নব আনন্দে জাগো’। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রবি-রাজনীতির মাঠ খালি থাকেনি। রাম ঠাকুরের পর রবি ঠাকুরকে নিয়েও মঙ্গলবার নেমে পড়ে বিজেপি। শুধু রাজ্য নেতারাই নয়, দিল্লি থেকে উড়ে আসেন রাজ্যের পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়, শিবপ্রকাশের মতো সর্বভারতীয় নেতারা। জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি গিয়ে শ্রদ্ধা জানান তাঁরা। দিনভর সঙ্ঘ পরিবারের পক্ষ থেকেও বিভিন্ন স্থানে রবি দিবস পালন করা হয়।
তবে রামনবমীর তুলনায় ধারে-ভারে রবীন্দ্রজয়ন্তীর জাঁকজমক তেমন ছিল না বিজেপির। বেশির ভাগ স্থানেই তারা নমো নমো করে রবি-দিবস পালন করে। উল্টো দিকে তৃণমূল রীতিমতো প্রস্তুতি নিয়ে সংগঠিত ভাবে নেমে পড়ে রবি ঠাকুরকে নিয়ে। বিজেপি নেতারা যাই বলুন, রবীন্দ্র জয়ন্তীর আয়োজনের রাশ এ দিন তৃণমূলের হাতে ছিল। কলকাতা বা বিধাননগরের মতো বড় অনুষ্ঠানের পাশাপাশি জেলা স্তরের তৃণমূল নেতারাও বিভিন্ন স্থানে জাঁকজমক করে অনুষ্ঠান করেছেন। রাজারহাটে পূর্ণেন্দু বসু-দোলা সেনের উদ্যোগে যেমন রবীন্দ্রজয়ন্তী হয়েছে তেমনই বীরভূমে অনুব্রত মণ্ডলও তাঁর দলীয় কার্যালয়ে গানবাজনার আয়োজন করেন।
মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে বরাবরই তথ্য-সংস্কৃতি দফতরের রবীন্দ্র জন্মোৎসব অনুষ্ঠানে হাজির থাকেন মুখ্যমন্ত্রী। আগে সকালবেলায় রবীন্দ্র সদনে এই অনুষ্ঠান হতো। মুখ্যমন্ত্রী সেটিকে রবীন্দ্রসদন থেকে ক্যাথিড্রাল রোডে নিয়ে এসেছেন। এখন সেই অনুষ্ঠান সকালের বদলে বিকেলে হয়। এ দিন বিকেল থেকে দীর্ঘক্ষণ সেখানে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে তিনি কারও নাম না করেই বলেন, ‘‘আমাকে কেউ চমকালে আমার মনে পড়ে যায় ‘চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ যেথা শির...।’’ পরে ফেসবুকে লেখেন, ‘আরও আলো, আরও আলো, এই নয়নে প্রভু ঢালো।’
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে যেমন রাজনীতির ছোঁয়া ছিল, পর্যবেক্ষকরা মুখ্যমন্ত্রীর ফেসবুক পোস্টেও রাজনৈতিক বার্তাই দেখছেন। তাঁদের মতে, বিজেপি যে ভাবে বাংলার রাজনীতির মেরুকরণ করছে, তা আসলে আঁধারের পথ বলেই মনে করেন মুখ্যমন্ত্রী। সে জন্য প্রভুর কাছে আরও আলো প্রার্থনা করেছেন তিনি।
উল্টো দিকে বিজেপিও রবি ঠাকুরকে তাদের রাজনীতির আঙ্গিকেই ব্যবহার করেছে। বিজেপি নেতা শিবপ্রকাশ জোড়াসাঁকো থেকে ফিরে ফেসবুকে লেখেন,‘বাংলার অখণ্ডতা তথা রাষ্ট্রের অখণ্ডতার শঙ্খনাদ যে কবির লেখনী থেকে বেরিয়েছে তাঁকে প্রণাম।’ কৈলাস বিজয়বর্গীয় বলেন, ‘‘জাতীয়তাবাদ আর রবীন্দ্রনাথ সমার্থক। বাংলার মাটি, বাংলার জলকে আবার জাতীয়তাবাদের উন্মেষেই পুণ্য করতে হবে। এটাই আমাদের ব্রত।’’