ঘাসফুল আর পদ্মফুলের লড়াইয়ে মঙ্গলবার সারা দিন তেতে রইল উত্তরের মাটি।
বৈশাখের প্রচণ্ড গরমেও তোর্সা পাড়ে কোচবিহারের চকচকায় তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভায় বাঁধভাঙা ভিড় হল। ১৪১ কিলোমিটার দূরে মেচি নদীর পাড়ে নকশালবাড়িতে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহর ছোট্ট বুথ সভাতেও মন্দ ভিড় হয়নি। মমতা দাবি করলেন, বাংলার মাটি তাঁরই কবলে। অমিতের দাবি, বাংলার মাটি তাঁরা দখল করবেন।
শুধু মুখে নয়, আচরণেও দু’জনেই বোঝানোর চেষ্টা করলেন, সব সময়েই সাধারণ মানুষের পাশেই আছেন তাঁরা। কৈলাস বিজয়বর্গীয়, দিলীপ ঘোষ, রাহুল সিনহার মতো দলীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে অমিত শাহ এ দিন দুপুরের খাবার খেলেন পেশায় রংমিস্ত্রি রাজু মাহালির বাড়িতে।
আর মমতা সোজা চলে গেলেন ছত্তীসগঢ়ে মাওবাদী হামলায় নিহত জওয়ান কৃষ্ণচন্দ্র দাসের বাড়ি। সেখানে তিনি জানিয়ে দিলেন, নিহত জওয়ানের পরিবারের কোনও এক জনকে চাকরি দেবে রাজ্য সরকার। ওই পরিবারকে পাঁচ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্যও দেওয়া হবে।
যা শুনে বিজেপি নেতাদের মন্তব্য, নিহত জওয়ানদের পরিবারের প্রতি মুখ্যমন্ত্রী আগে কখনও এত সহানুভূতি দেখাননি। এ বার বিজেপির প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়ে সাধারণ মানুষের মন কাড়তে হঠাৎ করেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তৃণমূলের পাল্টা দাবি, মুখ্যমন্ত্রী সব সময়েই সাধারণ মানুষের পাশে থাকেন, এটা কোনও ব্যতিক্রমী ঘটনা নয়।
আরও পড়ুন: পাত পড়ল টিনের ঘরে
দুই নেতারই শরীরী ভাষাও ছিল চনমনে। কোচবিহারের চকচকায় মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন খোশমেজাজে। মঞ্চের উপর থেকে ফুটবলও ছুড়েছেন। তার পরে রাসমেলার মাঠে কামতাপুর প্রোগ্রেসিভ পার্টির মঞ্চে গিয়ে তীব্র স্বরে বলেছেন, ‘‘বাংলার মাটি শক্ত মাটি। এই মাটিতে বাঘ যদি এসে খামচায়, বাঘের দাঁতও ভাঙবে।’’ এর পরেই বিজেপি-কে দাঙ্গাবাজ বলে তাঁর আর্জি, ‘‘আর যাই করুন, দয়া করে বিজেপি করবেন না।’’
বাম নেতাদের দাবি, তৃণমূল নেত্রী আলাদা করে বিজেপি-কে আক্রমণ করে রাজ্যে তাদের শক্তি বাড়িয়ে দিচ্ছেন। কংগ্রেস ও বামেদের কোণঠাসা করে, তাদের দল ভাঙিয়ে তিনি ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক শক্তিকেও দুর্বল করে দিয়েছেন। তবে তৃণমূল নেতাদের দাবি, তাঁদের তরফে কাউকেই রেয়াত করার প্রশ্ন নেই। মেকি ধর্মনিরপেক্ষতা কিংবা হিংস্র ধার্মিক—কাউকেই ছাড়া হবে না বলে দলনেত্রী জানিয়েছেন।
আর নকশালবাড়ির সভা থেকে অমিত দাবি করলেন, ‘‘২০১৯ সালে বাংলায় পদ্ম ফুটতে শুরু করবে এবং ২০২১ সালে গোটা বাংলা বিজেপির হবে।’’ তাঁর অভিযোগ, কেন্দ্রের কোনও প্রকল্প রাজ্য রূপায়ণ করে না। তৃণমূলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগও তোলেন তিনি।
এ দিন কলকাতায় তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় তাঁকে কটাক্ষ করে বলেন, ‘‘কেন বারবার কেন্দ্র আমাদের বঞ্চনা করছে, তা নিয়ে তো একটা কথাও বললেন না অমিত। আর ২০১৯ সালের বদলে আগে নিজেদের কী হবে, সে চিন্তা করুন।’