BJP’s Election In-charge

১০ বছর পরে বাংলায় ‘নির্বাচন প্রভারী’ নিয়োগ করল বিজেপি, ভূপেন্দ্র-বিপ্লব জুটি কেন বেছে নেওয়া হল পশ্চিমবঙ্গের জন্য

কেন্দ্রীয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী ভূপেন্দ্র যাদবকে পশ্চিমবঙ্গের ‘নির্বাচন প্রভারী’ হিসাবে নিয়োগ করা হয়েছে। আর ‘সহ-প্রভারী’ করা হয়েছে ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা সাংসদ বিপ্লব দেবকে।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৯:৩০
Share:

(বাঁ দিকে) কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ভূপেন্দ্র যাদব, ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

পশ্চিমবঙ্গে দলের হয়ে নির্বাচনের কাজ দেখভালের জন্য ‘ইনচার্জ’ (প্রভারী) নিয়োগ করলেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। সাংগঠনিক এবং রাজনৈতিক বিষয়ের পর্যবেক্ষক হিসাবে সুনীল বনসল, মঙ্গল পাণ্ডের মতো নেতারা রয়েছেন। এ বার শুধু নির্বাচন দেখভালের জন্য এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে দায়িত্ব দেওয়া হল। তাঁর সহকারী হিসাবে নিয়োগ করা হল এক প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে। প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গের জন্য কোনও পৃথক ‘নির্বাচন প্রভারী’ নিয়োগ করেনি।

Advertisement

বৃহস্পতিবার বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে ওই নিয়োগের কথা জানানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী ভূপেন্দ্র যাদবকে ‘নির্বাচন প্রভারী’ এবং ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা সাংসদ বিপ্লব দেবকে ‘সহ-প্রভারী’ নিযুক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে পর্যবেক্ষক হিসাবে এত দিন যাঁরা বঙ্গ বিজেপি সামলাচ্ছিলেন, তাঁদের পাশাপাশি নির্বাচন পর্যন্ত এ রাজ্যে কাজ করবেন ভূপেন্দ্র-বিপ্লব জুটি।

ভূপেন্দ্র নিজে এই দায়িত্ব পেয়ে দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। সমাজমাধ্যমে তিনি বাংলায় পোস্ট করেছেন। লিখেছেন, ‘আসন্ন পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের জন্য আমাকে নির্বাচনী পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব দেওয়ায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীজি, সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডাজি এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহজিকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই। এ দায়িত্ব আমার কাছে অত্যন্ত গৌরবের। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের দিক নির্দেশনা ও সকল কর্মীর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সাফল্যের লক্ষ্যপূরণে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।’

Advertisement

রাজ্যে ভোটের আগে কোনও সর্বভারতীয় স্তরের নেতাকে ‘নির্বাচন প্রভারী’ হিসাবে নিয়োগ করা বিজেপিতে নতুন নয়। ২০০৬ এবং ২০১১ সালে অরুণ জেটলিকে বঙ্গের ‘নির্বাচন প্রভারী’ করা হয়েছিল। ২০১৬ সালে সে দায়িত্ব পেয়েছিলেন নির্মলা সীতারমণ। কিন্তু ২০২১ সালে আনুষ্ঠানিক ভাবে ওই দায়িত্ব কাউকে দেওয়া হয়নি। তখন ‘সাংগঠনিক পর্যবেক্ষক’ হিসাবে এ রাজ্যে কাজ করছিলেন শিব প্রকাশ। ‘রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক’ ছিলেন কৈলাস বিজয়বর্গীয়। নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় তাঁদের সাহায্য করার জন্য ভূপেন্দ্রকেই সে বারেও পাঠিয়েছিল দিল্লি। পাঠানো হয়েছিল ধর্মেন্দ্র প্রধানকেও। তাঁরা দু’জনেই পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির নির্বাচনী অভিযান দেখভালের জন্য যথেষ্ট সময় দিয়েছিলেন। তবে আনুষ্ঠানিক ভাবে ‘প্রভারী’ নিযুক্ত হননি।

রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল প্রত্যাশিত ভাবেই এই নিয়োগকে কটাক্ষ করেছে। দলের এক্স হ্যান্ডলে (সাবেক টুইটার) বিপ্লব দেবকে ‘বিগ-ফ্লপ দেব’ লেখা হয়েছে। তার সঙ্গে পোস্ট করা একটি ভিডিয়োতে মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেছেন, ‘‘বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনের দায়িত্ব দিয়ে যাঁকে পাঠিয়েছে, সেই বিপ্লব দেব নিজের রাজ্য ত্রিপুরায় পূর্ণ মেয়াদ মুখ্যমন্ত্রী থাকতে পারেননি। ত্রিপুরার মতো একটা ছোট রাজ্যকে যিনি সামলাতে পারেননি, যাঁকে মাঝপথেই বিজেপি পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছিল, তাঁকে পাঠাচ্ছে বাংলায়। বাংলার মানুষ সব দেখছেন। সবাইকে একসঙ্গে প্যাক করে ফেরত পাঠিয়ে দেবেন।’’

বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের তরফে ভূপেন্দ্র-বিপ্লবকে ‘স্বাগত’ জানিয়ে সমাজমাধ্যমে পোস্ট করা শুরু হয়েছে। কুণালের বিশ্লেষণ বা তৃণমূলের কটাক্ষ সম্পর্কে বিজেপির কেউ মন্তব্য করতে চাননি। বরং রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, নির্বাচন দেখভালের দায়িত্ব ‘উপযুক্ত’ হাতেই গিয়েছে। তাঁদের ব্যাখ্যা, ভূপেন্দ্র এই রাজ্যের নির্বাচনে আগেও কাজ করেছেন। তাই এখানকার নির্বাচনের গতিপ্রকৃতি জেনেই মাঠে নামবেন। বাংলায় কাজ করতে হলে হিন্দির পাশাপাশি অন্তত ইংরেজিটা বোঝা জরুরি। ভূপেন্দ্র সে মাপকাঠিতেও উতরে যাচ্ছেন। সঙ্গে বাঙালি বিপ্লব থাকায় স্থানীয় ভাষা সংক্রান্ত সমস্যাও থাকবে না।

নির্বাচন ব্যবস্থাপনার কাজের একটা বড় অংশ হল রাজ্যের সঙ্গে দিল্লির ‘সমন্বয়ক’ হিসাবে কাজ করা। সেই সমন্বয় শুধু দলের রাজ্যনেতৃত্ব আর সর্বভারতীয় নেতৃত্বের মধ্যে নয়। দলের সঙ্গে সরকারের সমন্বয়ও বাড়ানো। ভূপেন্দ্রের মতো পূর্ণমন্ত্রী দায়িত্বে থাকলে সেই সমন্বয় মসৃণ হয় বলেই ধারণা। সে ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিষয়ে সহজে কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপ করানো যায়। সে সব কথা মাথায় রেখেই বাংলার জন্য ‘নির্বাচন প্রভারী’ বাছা হয়েছে বলে রাজ্য বিজেপির অনেকের দাবি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement