ভাটপাড়ার নয়া চেয়ারম্যান অর্জুন-ভাইপো সৌরভ

বিরোধী কাউন্সিলরেরা উপস্থিত না হওয়ায় মঙ্গলবার ভোটাভুটি ছাড়াই সৌরভ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এর আগে তৃণমূলের বিধায়ক থেকে বিজেপির সাংসদ হয়েছেন অর্জুন। বিজেপির টিকিটে তাঁর ছেলে পবন সিংহ হয়েছেন ভাটপাড়ার বিধায়ক। এ বার কাউন্সিলর সৌরভ হলেন পুরসভার চেয়ারম্যান।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০১৯ ০৩:১০
Share:

ভাটপাড়ার নয়া পুরপ্রধান সৌরভ সিংহকে সমর্থকদের শুভেচ্ছা। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

ব্যবধান প্রায় দু’মাসের। তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরে অনাস্থা ভোটে পুরপ্রধানের পদ থেকে অপসারিত হতে হয়েছিল অর্জুন সিংহকে। সেই অর্জুনের হাত ধরেই বিজেপির পতাকায় কার্যত পরিবারতন্ত্র কায়েম হল ভাটপাড়ায়। পুরসভার চেয়ারম্যানের পদ পেলেন অর্জুনের ভাইপো সৌরভ সিংহ।

Advertisement

বিরোধী কাউন্সিলরেরা উপস্থিত না হওয়ায় মঙ্গলবার ভোটাভুটি ছাড়াই সৌরভ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এর আগে তৃণমূলের বিধায়ক থেকে বিজেপির সাংসদ হয়েছেন অর্জুন। বিজেপির টিকিটে তাঁর ছেলে পবন সিংহ হয়েছেন ভাটপাড়ার বিধায়ক। এ বার কাউন্সিলর সৌরভ হলেন পুরসভার চেয়ারম্যান।

পুরসভার বাইরে এ দিন বাজি-আবিরের উৎসব হলেও বিজেপির অন্দরে অবশ্য বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে। দলের অনেক নেতাই বলছেন, অর্জুন বিজেপিতে আসায় লাভ হল কেবল তাঁরই। তৃণমূল নেতারা বলছেন, ভোটের প্রচারে যে পরিবারতন্ত্র নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে বিঁধতেন বিজেপি নেতারা, সেই পরিবারতন্ত্রই কায়েম হল তাঁর হাত ধরে! তৃণমূলে থেকে তিনি তা করতে পারছিলেন না।

Advertisement

অর্জুন অবশ্য তৃণমুলের এমন অভিযোগকে আমল দেননি। তিনি বলেন, ‘‘চেয়ারম্যান নির্বাচনে আমার কোনও ভূমিকাই নেই। আমি নিজে এখন কাউন্সিলরও নই। কাউন্সিলরেরাই চেয়েছেন, তাই সৌরভ চেয়ারম্যান হয়েছেন। এমন তো নয় যে ও, কাউন্সিলর ছিল না। এর মধ্যে পরিবারতন্ত্রের কোনও ব্যাপার নেই।’’

মাসদুয়েক আগে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়ে অর্জুন দাবি করেছিলেন, ভাটপাড়া পুরসভা তাঁর দখলেই রয়েছে। কিন্তু অনাস্থা ভোটে পরাস্ত হয়ে চেয়ারম্যানের পদ থেকে অপসারিত হন তিনি। ভাটপাড়ায় ৩৫ কাউন্সিলরের পুরসভায় ২২ জন তাঁর বিপক্ষে ভোট দেন। অর্জুনকে সমর্থন করেছিলেন ১১ জন কাউন্সিলর।

মোট ৩৫ জন কাউন্সিলরের মধ্যে এক জন মৃত, এক জন সিপিএমের। অর্জুন কাউন্সিলরের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। ৩২ জন কাউন্সিলরের মধ্যে এ দিন হাজির ছিলেন ২৮ জন। তার মধ্যে এক জন সোমনাথ তালুকদার। তিনি অস্থায়ী প্রধান হিসেবে পুরসভা চালাচ্ছিলেন। আইন অনুযায়ী তিনিই এ দিন সভা ডাকেন। সিপিএমের কাউন্সিলর অনুপস্থিত ছিলেন। আসেননি তৃণমূলের আরও পাঁচ কাউন্সিলর। সোমনাথ ছাড়া বাকি ২৭ জন চেয়ারম্যান হিসেব সৌরভকে সমর্থন করেন।

অনাস্থায় জিতেও কেন পুরসভা ধরে রাখা গেল না? সোমনাথ বলেন, ‘‘এই পুরসভার দায়িত্ব ছিল নৈহাটির বিধায়ক পার্থ ভৌমিকের উপরে। তিনি লড়াইয়ে না থাকায় পুরসভা বিজেপির হাতে চলে গেল! আমি দিদির সৈনিক, দিদির দলেই থাকব।’’ উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূলের সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বক্তব্য, ‘‘দলের অনুমতি ছাড়াই সভা ডেকেছিলেন অস্থায়ী পুরপ্রধান। তাতে তাঁর সাময়িক লাভ হলেও ভবিষ্যতে এর দাম তাঁকে দিতেই হবে। এতে কোনও ব্যক্তিকে দোষারোপ করা ঠিক নয়।’’

সৌরভ বলছেন, ‘‘এটা অর্জুন-ম্যাজিক! সামান্য ভুল বোঝোবুঝির জন্য কিছু কাউন্সিলর অনাস্থা ভোটে আমাদের বিরুদ্ধে চলে গিয়েছিলেন। সেই সমস্যা মিটেছে। উন্নয়ন এখন মূল কাজ। উন্নয়নের ৮০% কাজ আগেই হয়ে গিয়েছে। জলের সমস্যা-সহ বাকি ২০% কাজ এ বার হবে।’’

আক্রান্ত এবং মৃত মিলিয়ে গত বার ডেঙ্গিতে জেলার মধ্যে প্রথম ছিল ভাটপাড়া পুরসভা। সে বিষয়ে অবশ্য কিছু বলেননি নতুন চেয়ারম্যান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন