কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান বিক্ষোভ। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র
লোকসভা ভোটে বিজেপির বিপুল জয়ের পরের দিন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসে কর্মচারীদের একাংশ বিজেপির সমর্থনে মিছিল বার করেছিলেন। ধ্বনি উঠেছিল, ‘জয় শ্রীরাম’! শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ক্যাম্পাসে আবার উঠল ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি। ষষ্ঠ বেতন কমিশনের রিপোর্ট পেশে বিলম্বের প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে এক অবস্থান-বিক্ষোভে এই ধ্বনি দেওয়া হয়।
পরে বিজেপির এক সাংবাদিক বৈঠকে প্রশ্ন করা হয়, শিক্ষাঙ্গনে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি কেন? জবাবে ওই দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনিতে পবিত্র হয়ে গেল।’’
বৃহস্পতিবার নৈহাটি, ভাটপাড়ায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কনভয় যাওয়ার সময় ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি দিতে দিতে কিছু লোক হামলে পড়ায় গাড়ি থামিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। এ দিন অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান-বিক্ষোভে জয় শ্রীরাম ধ্বনি উঠলেও কেউ আপত্তি করেননি। এই অবস্থান-বিক্ষোভের মূল উদ্যোক্তা বিজেপি প্রভাবিত বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী পরিষদ। সঙ্গে ছিল বিজেপি প্রভাবিত সরকারি কর্মচারী পরিষদ এবং প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠন। কর্মচারী পরিষদের সভাপতি মন্মথ বিশ্বাস কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়েরই কর্মী। তিনি বলেন, ‘‘দেশে জয় শ্রীরাম স্লোগান নিষিদ্ধ নাকি? বলব না কেন?’’ মন্মথবাবু আগে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃণমূলের শিক্ষাবন্ধু সমিতির পদাধিকারী ছিলেন। সেই সমিতি ছাড়েন বছরখানেক আগে। তাঁর দাবি, কলকাতা, বর্ধমান, কল্যাণী এবং বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাবন্ধু সমিতির বেশ কিছু সদস্য তাঁদের সংগঠনে যোগ দিয়ে এ দিনের অবস্থানের শামিল হয়েছেন।
এ দিন অবস্থান-বিক্ষোভ হয় কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসের মূল ফটকের কাছেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের আশুতোষ বিল্ডিং এবং কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের মধ্যবর্তী রাস্তায় বসে ঘণ্টা দুয়েক ধরে চলে বিক্ষোভ। কিছু দিন আগেই বিজেপি নেতা অমিত শাহের রোড শোয়ে ঠিক ওই জায়গা থেকেই শাসক দল তৃণমূলের ছাত্র সংগঠন বিক্ষোভ দেখিয়েছিল। সেই বিক্ষোভের মধ্যেই শাহের রোড শো এগিয়ে গিয়েছিল। তার পরে বিদ্যাসাগর কলেজে বিদ্যাসাগর-মূর্তি ভাঙার ঘটনা ঘটে। এ দিন অবস্থান-বিক্ষোভ শুরু করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উল্টো দিকে কলেজ স্কোয়ারে বিদ্যাসাগরের মূর্তিতে মালা দিয়ে। এ দিনের বিক্ষোভ-অবস্থান নিয়ে কেউ আপত্তি তোলেননি।
বিক্ষোভকারী সংগঠনগুলির হুঁশিয়ারি, এক মাসের মধ্যে ষষ্ঠ বেতন কমিশনের রিপোর্ট পেশ না-করলে কমিশনের চেয়ারম্যান অভিরূপ সরকারের দফতর ঘেরাও করা হবে। অভিরূপবাবুর কুশপুতুল পোড়ানো হয় কলেজ স্ট্রিটে। বিক্ষোভকারীদের দাবি, সরকারি কর্মীদের কেন্দ্রীয় হারে মহার্ঘ ভাতা এবং প্রশিক্ষিত প্রাথমিক শিক্ষকদের উচ্চতর বেতন-কাঠামো অবিলম্বে চালু করতে হবে।