ফাঁড়িতে ঢুকে পুলিশকে মার, ধৃত বিজেপি নেতা

এত দিন পুলিশের উপর হামলার অভিযোগ উঠছিল শাসক দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। এ বার সেই একই অভিযোগ রামজীবনপুরের বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে। ফারাক একটাই, তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগের সময় পুলিশের তেমন সক্রিয়তা দেখা না গেলেও রামজীবনপুরের ঘটনায় তড়িঘড়ি গ্রেফতার করা হয়েছে অভিযুক্ত বিজেপি নেতা তারক ব্রহ্মকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঘাটাল শেষ আপডেট: ১১ মে ২০১৫ ০৩:৩৯
Share:

ঘাটাল আদালতের পথে অভিযুক্ত তারক ব্রহ্ম (বাঁ দিকে)।-নিজস্ব চিত্র

এত দিন পুলিশের উপর হামলার অভিযোগ উঠছিল শাসক দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। এ বার সেই একই অভিযোগ রামজীবনপুরের বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে। ফারাক একটাই, তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগের সময় পুলিশের তেমন সক্রিয়তা দেখা না গেলেও রামজীবনপুরের ঘটনায় তড়িঘড়ি গ্রেফতার করা হয়েছে অভিযুক্ত বিজেপি নেতা তারক ব্রহ্মকে।

Advertisement

শনিবার পশ্চিম মেদিনীপুরের রামজীবনপুর ফাঁড়িতে ঢুকে কর্তব্যরত পুলিশ অফিসারকে গালিগালাজ, মারধর করে উর্দি ছিঁড়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে বিজেপির শহর মণ্ডল কমিটির সম্পাদক তারকবাবুর বিরুদ্ধে। তখনই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। রবিবার ঘাটাল আদালত তোলা হলে ধৃতের দু’দিন পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ হয়। আদালত চত্বরে তারকবাবু বলেন, ‘‘ফাঁড়িতে একটা গণ্ডগোল হয়েছিল। তবে পুলিশই আগে আমাকে মেরেছে। আমি বাধা দিতে গেলে ওই অফিসারের আঘাত লাগে।’’

সাম্প্রতিক অতীতে কলকাতার আলিপুর, বীরভূমের বোলপুর, হুগলির চাঁপদানি থানায় ঢুকে পুলিশের উপর হামলার অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূল নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। সে ক্ষেত্রে পুলিশের এমন সক্রিয়তা দেখা যায়নি বলেই বিরোধীদের অভিযোগ। তবে কি রামজীবনপুরের ঘটনায় অভিযুক্ত বিরোধী দলের নেতা হওয়াতেই পুলিশ এত সক্রিয়? সদুত্তর এড়িয়ে জেলা পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষের জবাব, ‘‘পুলিশ অফিসারকে মারধর অপরাধ। তাই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’’ আর তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়ের বক্তব্য, “থানায় ঢুকে পুলিশকে মারধর আমাদের জেলায় এই প্রথম। পুলিশ যথাযথ পদক্ষেপই করেছে।’’

Advertisement

সদ্য সমাপ্ত পুরভোটে ত্রিশঙ্কু ফলহয়েছে রামজীবনপুর পুরসভায়। ১১টিআসনের মধ্যে তৃণমূল পেয়েছে ৫টি, বিজেপি ২টি আর বাম-কংগ্রেস-বিক্ষুব্ধ তৃণমূলের মহাজোট সমর্থিত নির্দলরা জিতেছে ৪টি আসনে। ভোটের আগে বিজেপি প্রার্থীরা নিজেদের মহাজোটেরই অংশ বলে দাবি করলেও ফলপ্রকাশের পরে সমীকরণটা পাল্টে যায়। পদ্ম-প্রতীকে জয়ী দুই কাউন্সিলর এবং চার নির্দল কাউন্সিলরকে কলকাতার কার্যালয়ে ডেকে দলের রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ জানান, বিজেপি-ই রামজীবনপুরে পুরবোর্ড গড়বে। এর পর থেকেই তৃণমূল বিজেপি ও নির্দল কাউন্সিলরদের ভাঙানোর চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ।

এই সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করতেই শনিবার সন্ধ্যায় বৈঠকে বসেছিলেন রামজীবনপুরের বিজেপি নেতা-কর্মীরা। ছিলেন জয়ী নির্দল কাউন্সিলররাও। বৈঠকে কয়েক জন অভিযোগ করেন, তৃণমূল বিরোধীদের ঘর ভাঙার চেষ্টা করছে। এর পিছনে পুলিশেরও মদত রয়েছে। এরপরই তারকবাবু-সহ কয়েকজন বিজেপি নেতা-কর্মী রামজীবনপুর ফাঁড়ি ঘেরাওয়ের প্রস্তাব দেন। তবে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের অনুমোদন না থাকায় তাতে সায় দেননি স্থানীয় নেতারা। মতের অমিল হওয়ায় মাঝপথে বৈঠক ছেড়ে চলে যান তারকবাবু। তারপরই তিনি ফাঁড়িতে চড়াও হন বলে অভিযোগ।

পুলিশ সূত্রে খবর, শনিবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ তারকবাবু আচমকা ফাঁড়িতে ঢুকে কর্তব্যরত এএসআই অজয় ঘোষালকে গালিগালাজ শুরু করেন। তাঁকে মারধরও করা হয় বলে অভিযোগ। অন্য পুলিশকর্মীরা তারকবাবুকে ধরে ফেলেন। ঘটনায় দল অবশ্য এই বিজেপি নেতার পাশে দাঁড়াচ্ছে না। বিজেপির জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “থানায় ঢুকে পুলিশ পেটানো বিজেপির সংস্কৃতি নয়। প্রয়োজনে ওই নেতাকে দল থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন