Swapan Majumder

শিক্ষার আলোয় তৃণমূলের আলোরানিকে জবাব দিতে চান বিজেপির স্বপন, স্বপ্ন ‘শিক্ষিত’ বিধায়ক হওয়া

অষ্টম শ্রেণি উত্তীর্ণ জানিয়ে ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন। জিতে বিধায়কও হন। তার পরে প্রশ্ন ওঠে আদৌ কি অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন বিজেপি বিধায়ক স্বপন। মামলা হয় হাই কোর্টে। এখন তারই জবাব দিতে চান স্বপন।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৩:৫২
Share:

স্বপন মজুমদার। — ফাইল চিত্র।

দিনভর রাজনীতি। আর রাতে লেখাপড়া। শেখার জন্য কোনও সঙ্কোচ নেই তাঁর। বনগাঁ দক্ষিণের বিজেপি বিধায়ক স্বপন মজুমদার নিজের দফতরের স্নাতক কর্মীদের কাছেই পাঠ নেন। বুঝে নেন উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করতে কোনও প্রশ্নের কেমন উত্তর দিতে হবে। আসলে তাঁর বিরুদ্ধে লড়াই করা তৃণমূলের আলোরানি সরকারকে জবাব দেওয়া। আলোরানি স্নাতক। ২০১৫ সালে কানপুরের ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের হলফনামায় যখন এমনটা জানিয়েছিলেন আলোরানি, তখন স্বপনের শিক্ষাগত যোগ্যতায় লেখা ছিল, অষ্টম শ্রেণি উত্তীর্ণ।

Advertisement

বিধানসভা নির্বাচনে দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর শিক্ষাগত যোগ্যতাও লড়াইয়ের বিষয় হয়ে ওঠে। স্নাতক বনাম অষ্টম শ্রেণি পাশের সেই লড়াইতে অবশ্য স্বপনই জেতেন। উত্তর ২৪ পরগনা জেলার ওই আসন থেকে বিজেপি জেতে ২,০০৪ ভোটে। কিন্তু মামলা গড়ায় আদালতে। তৃণমূলের পক্ষে দাবি করা হয়েছিল, স্বপন আদৌ অষ্টম শ্রেণিও পাশ করেননি। মিথ্যা সার্টিফিকেট জমা দিয়েছেন। চলে লড়াই। স্বপনের দাবি, মামলায় তিনি জয় পেয়েছেন। অন্য দিকে, আলোরানির দাবি, এখনও মামলা চলছে।

তবে মামলার দিকে না তাকিয়ে স্বপন লেখাপড়া শুরু করে দেন। নির্বাচনে দাঁড়ানোর আগেই রবীন্দ্র মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাশ করেছিলেন। তবে তখনও মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময়ে সার্টিফিকেট হাতে পাননি বলেই অষ্টম শ্রেণি পাশ বলে উল্লেখ করা হয় বলে দাবি তাঁর। আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি বলেন, ‘‘ভোট দাঁড়ানোর দিন দশেক পরেই আমি মাধ্যমিক পাশের সার্টিফিকেট হাতে পেয়ে যাই। কিন্তু আমার বিরুদ্ধে শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে কুরুচিকর প্রচার চালানো হয়। ওরা (তৃণমূল) ভেবেছিল ওই সব বলে কিছু ভোট টানা যাবে। যদিও আমিই জিতেছিলাম মানুষের রায়ে।’’

Advertisement

তবে এখানেই থেমে যেতে পারতেন বিজেপি বিধায়ক। কিন্তু শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় তার মনে শিক্ষিত হয়ে ওঠার তাগিদ তৈরি হয়ে যায়। বিধায়ক হওয়ার পরে শুরু করে দেন উচ্চ মাধ্যমিকের প্রস্তুতি। ২০২২ সালেই রবীন্দ্র মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনটি বিষয়ের পরীক্ষা দিয়ে দিয়েছেন। সম্প্রতি এডুকেশন বিষয়ের পরীক্ষা দিয়েছেন। সামনেই রয়েছে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরীক্ষা। এখন দিনে রাজনীতি, বিধায়কের দায়িত্ব পালন আর রাতে লেখাপড়া চলছে। স্বপন বলেন, ‘‘আমি উচ্চ মাধ্যমিকের পরে স্নাতক হতে চাই। যত কাজই থাকুক, রাতে কিছুটা সময় বার করে নিই। সেই সময়েই লেখাপড়া করি।’’ গৃহশিক্ষক রেখেছেন নাকি! স্বপন বলেন, ‘‘না, আমার অফিসে অনেকেই স্নাতক। ওঁরাই দেখিয়ে দেন। যেটা বুঝতে পারি না, ওঁদের জিজ্ঞেস করেনি।’’

বনগাঁর কালীতলা বিশ্ববন্ধু শিক্ষা নিকেতন হাইস্কুলে উচ্চ মাধ্যমিকের সিট পড়েছে। গত রবিবার ছাত্র হয়ে গিয়েছিলেন স্কুলে। জানিয়েছেন, ভালই হয়েছে পরীক্ষা। আগামী রবিবার আবার যেতে হবে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরীক্ষা দিতে। তবে তার মধ্যেও দলের কর্মসূচি বাদ যাচ্ছে না। বিধানসভার বাদল অধিবেশনে নিয়মিত গিয়েছেন। এখন দলের ‘আমার দেশ, আমার মাটি’ কর্মসূচি নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে। তাতে কী? রাতের লেখাপড়া বন্ধ করছেন না স্বপন। বললেন, ‘‘আমার লেখাপড়ার খুবই ইচ্ছা ছিল। কিন্তু ছেলেবেলায় বাবার মৃত্যু জীবন অনেকটাই বদলে দিয়েছিল। তার পরে আর স্কুলমুখো হতে পারিনি। এখন নিজের মতো করে চলতে পারি। তাই আবার শুরু করেছি। চালিয়ে যাওয়াই ইচ্ছা।’’

যদিও স্বপনের এই স্বপ্ন নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন আলোরানি। তিনি বলেন, ‘‘যাঁর অষ্টম শ্রেণির সার্টিফিকেটই জাল তিনি কী করে উচ্চমাধ্যমিক দিচ্ছেন কে জানে? এর মধ্যেই উনি প্রথম শ্রেণি থেকে আবার লেখাপড়া করে ফেললেন নাকি!’’ কিন্তু মাধ্যমিক পাশ না করলে কী উচ্চ মাধ্যমিকে বসা যায়? প্রশ্ন শুনে আলোরানি বলেন, ‘‘যিনি পরীক্ষা দিচ্ছেন, তিনিই বলতে পারবেন। আমি কী করে বলবে কী করে কী হয়েছে?’’

তবে রাজনীতিক স্বপন হুমকি দেওয়াতেও কম যান না। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময়েই রাজনৈতিক উত্তাপ তৈরি করে দিয়েছিল তাঁর বক্তব্য। গাইঘাটায় একটি সভায় বলেছিলেন, ‘‘যে সব তৃণমূল নেতা অবৈধ ভাবে ফুলেফেঁপে উঠে মানুষকে চমকাচ্ছেন, পুলিশকে দিয়ে মিথ্যা মামলা দিচ্ছেন, আমি দায়িত্ব নিয়ে বলে যেতে চাই, আগামী দিনে এই পুলিশকে দিয়েই ওদের এনকাউন্টার করাব।’’ তার আগে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে বলেছিলেন, ‘‘তৃণমূল নেতাগুলি এখন যেমন গাছে বাধা পড়ছেন, ওসিদের মারতে হবে। ওসি আর আইসিগুলি প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছে কালীঘাট থেকে, যে তোমার চামচাগিরি আমি করে দেব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন