দিলীপদের পাহাড় সফর ঘিরে বিতর্ক

বিজেপি-র এই কর্মসূচি ঘিরে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন এবং বিতর্ক দানা বেঁধেছে। মোর্চার আলোচনাপন্থী নেতা তথা জিটিএ-এর কেয়ারটেকার বোর্ডের চেয়ারম্যান বিনয় তামাঙ্গ মঙ্গলবার দার্জিলিঙের ডালি ফটকে নিজের বাড়িতে বলেন, ‘‘পাহাড়ের মানুষ গোর্খাল্যান্ডের স্বপ্ন দেখেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা ও দার্জিলিং শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০১৭ ০৩:০৪
Share:

সুনসান: বন্ধ উঠলেও ফাঁকা দার্জিলিং ম্যাল। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

পাহাড়ে বন্‌ধ উঠতেই দার্জিলিংয়ে যাচ্ছেন বিজেপি নেতৃত্ব। তাঁদের প্রথম গন্তব্য কালিম্পং। তার পর দার্জিলিং হয়ে তাঁদের সিকিম যাওয়ার কথা। রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ জানান, তাঁদের দল যে পাহাড়ের মানুষের পাশে আছে, সেখানে গিয়ে তাঁরা এই বার্তাই দিতে চান। এই সফরে তাঁরা গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সঙ্গেও বৈঠক করবেন।

Advertisement

বিজেপি-র এই কর্মসূচি ঘিরে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন এবং বিতর্ক দানা বেঁধেছে। মোর্চার আলোচনাপন্থী নেতা তথা জিটিএ-এর কেয়ারটেকার বোর্ডের চেয়ারম্যান বিনয় তামাঙ্গ মঙ্গলবার দার্জিলিঙের ডালি ফটকে নিজের বাড়িতে বলেন, ‘‘পাহাড়ের মানুষ গোর্খাল্যান্ডের স্বপ্ন দেখেন। সে জন্য আমরা আন্দোলন করছি। অথচ বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ ও দার্জিলিঙের সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া সেই দাবি নিয়ে স্পষ্ট কিছুই বলতে পারেন না। পাশ কাটিয়ে যান। এটা পাহাড়বাসীর কাছে বেদনাদায়ক।’’ এর পরে তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘পাহাড়বাসীকে দুঃখ দেওয়ার পরেও যদি ওই দু’জন নেতা পাহাড়ে আসার চেষ্টা করেন, তা হলে বাধার মুখে পড়লে আমরা কোনও দায় নেব না।’’ নবান্নের খবর, বিজেপি নেতাদের এই সফরকে সরকারও ‘নজরে রাখছে’।

আরও পড়ুন: গুরুঙ্গ ফের বৈঠক ডাকছেন

Advertisement

দার্জিলিঙে গত জুন মাসে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠার পরেই সরকার সেখানে রাজনৈতিক দলগুলির কর্মসূচিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এখন আন্দোলনকারী বন্‌ধ তুলে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিজেপি নেতারা যে ভাবে পাহাড়ে পা বাড়াচ্ছেন, তার পিছনে রাজনৈতিক অভিসন্ধি আছে বলে তৃণমূল-সহ অনেক দলই মনে করছে। তৃণমূল সূত্রে বলা হচ্ছে, দার্জিলিং আন্দোলন, বিশেষত গোর্খাল্যান্ডের দাবির পিছনে বিজেপি-র ভূমিকা যে ‘উস্কানিমূলক’, তার বিভিন্ন তথ্যপ্রমাণ আছে। দার্জিলিঙের বিজেপি সাংসদ অহলুওয়ালিয়ার সঙ্গে বিমল গুরুঙ্গের একটি কথোপকথনের অডিও ক্লিপ বিভিন্ন সূত্রে ঘুরে বেড়াচ্ছে। যেখানে দার্জিলিঙে বন্‌ধ তোলার নেপথ্যে বিজেপি তথা কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দিষ্ট পরিকল্পনার উল্লেখ আছে। অহলুওয়ালিয়া অবশ্য এই টেলিফোন আলাপের কথা অস্বীকার করেছেন। কিন্তু রাজনৈতিক বিতর্ক তাতে কমেনি। এই অবস্থায় বিজেপি নেতাদের পাহাড় সফর তাতে বাড়তি ইন্ধন জোগাল বলে রাজনৈতিক মহলের ধারণা।

দিলীপবাবুরা কেন সিকিম যাচ্ছেন, প্রশ্ন তা নিয়েও। কারণ, সিকিমে মোর্চার নেতা বিমল গুরুঙ্গ রয়েছেন বলে প্রশাসনিক মহলের একাংশের খবর। দিলীপবাবু অবশ্য বলেন, ‘‘আমি ওখানে এমনি ঘুরে আসব।’’ তবে বিজেপি-রই একাংশের দাবি, সিকিমে দিলীপবাবুর আরএসএসের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার কথা আছে। গুরুঙ্গের সঙ্গে বৈঠক? বিজেপি-রই এক রাজ্য নেতার কথায়, ‘‘রাজনীতিতে অসম্ভব কিছুই নয়।’’ বিজেপি সূত্রের খবর, কালিম্পংয়ে প্রশাসনিক জেলা তৈরি হওয়ার পর সেখানে দলের কোনও জেলা কমিটি হয়নি। এ বারের সফরে সেখানে জেলা কমিটি এবং জেলা সভাপতি বাছবেন দিলীপবাবু। এ ছাড়া, দার্জিলিংয়ে দলীয় এবং আরএসএসের কয়েক জন নেতার সঙ্গে বৈঠক করার কথা তাঁর।

সিপিএম নেতা তথা শিলিগুড়ির মেয়ার অশোক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘পাহাড়ের এই পরিস্থিতির জন্য তৃণমূল, বিজেপি দু’পক্ষই দায়ী। তবে বিজেপি পাহাড়ে যত কম নাক গলায়, তত মঙ্গল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন