—ফাইল চিত্র।
উত্তরপ্রদেশে ভোট গণনা তখনও শেষ হয়নি। তবে বোঝা যাচ্ছিল, ‘ট্রিপল সেঞ্চুরির’ পথে এগোচ্ছেন নরেন্দ্র মোদী। দেখা গেল, ৬ নম্বর মুরলীধর লেনে দলীয় দফতরের বাইরে হোলির গানের তালে তালে নাচছেন খোদ বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ! গেরুয়া আবির মেখে!
পরের দৃশ্য! সাংবাদিক বৈঠকে দিলীপ ঘোষ বলছেন, ‘‘পাঁচ রাজ্যের ফলাফল বুঝিয়ে দিয়েছে, আঞ্চলিক দলগুলো ক্রমশ গৌণ হয়ে যাচ্ছে।’’ এর পর সরাসরি তৃণমূল নেত্রীকে নিশানা করে দিলীপ বলেন, ‘‘নোট-বন্দি নিয়ে উনি মানুষকে বিভ্রান্ত করেছেন। সৎ সাহস থাকলে মুখ্যমন্ত্রীর উচিত, রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে মানুষের কাছে ক্ষমা চাওয়া।’’
মমতার বিরুদ্ধে দিলীপের এ হেন আক্রমণ নতুন নয়। তবে উত্তরপ্রদেশের ফলাফল দেখে এটাই এ দিন বিজেপি দফতরের ‘মুড’। বিজেপি এবং সঙ্ঘ পরিবারের এখন প্রধান লক্ষ্যই হলো পশ্চিমবঙ্গে প্রধান বিরোধী শক্তি হয়ে ওঠা। এই বার্তা দেওয়া যে, তৃণমূলকে ঠেকানোর একমাত্র ক্ষমতা আছে তাদেরই। দিলীপ বলেন, ‘‘দেশ জুড়ে গেরুয়া স্রোত বইছে। বিধায়কের সংখ্যায় না হলেও বাংলার মানুষের মনে এরই মধ্যে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে বিজেপি। আগামী দিনে রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে টক্কর দেবেন মোদী-অমিত শাহরাই।’’ দলের আর এক রাজ্য নেতা শমীক ভট্টাচার্যও বলেন, ‘‘পাঁচ রাজ্যের ফলাফলের প্রভাব এ রাজ্যেও পড়বে। এই ফলাফলের বার্তা একটাই— বাংলায় ধর্মীয় সহাবস্থান যেমন থাকবে, তেমনই সরস্বতী শিশু মন্দিরও থাকবে।’’
গত লোকসভা ভোটের আগেও বাংলায় এই রাজনৈতিক বার্তা দিতে অনেকটা সফল হন রাহুল সিংহরা। তৃণমূল বিরোধী জনতার একটা বড় অংশের ধারণা হয়েছিল, মোদীই হয়তো মমতাকে ঠেকাতে পারবেন। বাম এবং কংগ্রেসের ভোট ব্যাঙ্কে ধস নেমে বিজেপির ভোট বেড়ে হয়েছিল ১৭ শতাংশ। বিজেপি নেতৃত্বের মতে, এখন পরিস্থিতি আরও অনুকূল। এমনিতেই জেলায় জেলায় সিপিএমের নিচুতলার কর্মী সমর্থকরা তাদের সঙ্গে হাত মেলাতে শুরু করেছেন। কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে আসার সংখ্যাও বাড়ছে। দিলীপদের আশা, তৃণমূলের নিচুতলার একটা বড় অংশও তাদের সঙ্গে সামিল হতে পারেন। বিশেষ করে যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূলে থাকা সত্ত্বেও দল থেকে কোনও সুবিধা বা মর্যাদা পাননি। দিলীপবাবু বলেন, ‘‘অপেক্ষা করুন, অনেকেই আমাদের সঙ্গে আসবেন।’’ তিনি জানান, শিশুপাচার, টেট কেলেঙ্কারি, বেসরকারি সংস্থায় টাকা রেখে প্রতারিত হওয়ার মতো ঘটনাকে সামনে রেখে খুব তাড়াতাড়িই আগ্রাসী আন্দোলনে নামবে রাজ্য বিজেপি।