নরেন্দ্র মোদী
প্যাচপ্যাচে কাদায় গোড়়ালি ডুবে যায় যায়! হাতে আর ১৫ ঘণ্টাও সময় নেই। প্রধানমন্ত্রী আসছেন বলে কথা! বরকর্তার ঢঙেই বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ রবিবার বিকেলে কলেজিয়েট মাঠে ডেকরেটরের কর্মীদের কাছে খোঁজ নিচ্ছিলেন, ‘‘কী গো, সবটা পারবে তো?’’
আকাশভাঙা জল আটকাতে গোটা ময়দান ঢেকে দেওয়া হচ্ছে লোহার কাঠামোর উপরে প্লাস্টিকের চাদর বিছিয়ে। মূল মঞ্চে নরেন্দ্র মোদী, পাশের মঞ্চে বিজেপির রাজ্য নেতারা, বাকি মাঠে হাজির জনতা— সোমবারের ‘কৃষক কল্যাণ সমাবেশে’ সক্কলের মাথার উপরে চাঁদোয়া থাকছে। কিন্তু কৃষক কল্যাণে এ রাজ্যে তাঁদের ভূমিকা ঠিক কতটা, তার খতিয়ান নিতে গেলে বিজেপি নেতাদের ওই মাঠের কাদায় পা হড়়কে যাওয়ার মতোই দেখাচ্ছে!
কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা ফসলের সহায়ক মূল্য বাড়়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ‘অভিনন্দন’ কুড়োতে আসছেন মোদী। কিন্তু সেই সিদ্ধান্তের ফলে এখনও পর্যন্ত কত জন কৃষক উপকৃত? বা যে রাজ্যে মোদী আসছেন, সেই বাংলায় কৃষকদের সমস্যা কী কী? সিপিএমের কৃষকসভা গড়়গড়় করে দাবি করছে— এখনও এক-চতুর্থাংশ কৃষক ক্রেডিট কার্ডের আওতায় আসেননি, ওই কার্ডে ঋণ মিলেছে গড়ে মাত্র ৪১,২৭২ টাকা করে, মহাজনি ঋণের ফাঁসে জেরবার প্রায় ৭৫% কৃষক, সরকার ধান কেনার কথা বললেও বহু ক্ষেত্রে চেক বাউন্স করেছে ইত্যাদি। অথচ যারা প্রধানমন্ত্রীকে ‘অভিনন্দন’ জানাবে, তাদের এই সংক্রান্ত কোনও প্রচারই নেই। রাজ্যে সাত বছরের তৃণমূল জমানায় কৃষক-প্রশ্নে বিজেপির আন্দোলন কত হয়েছে, তার উত্তরও সেই কাদায় ডুবে!
আর মোদী যখন ‘কৃষক কল্যাণ’-এর জন্য অভিনন্দন নিতে আসছেন, তার ঠিক আগেই কেন্দ্রীয় সরকারকে কৃষিঋণ মকুবের দাবিটা মনে করিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নীতি আয়োগের কৃষি সংক্রান্ত কমিটির বৈঠকে যেতে না-পারলেও মমতা সেখানে চিঠি দিয়ে জোরালো ভাবে জানিয়েছেন কৃষিঋণ মকুবের দাবি।
বিজেপির কিসান মোর্চার রাজ্য সভাপতি রামকৃষ্ণ পাল অবশ্য বলছেন, বাংলার কৃষকদের অগ্রাধিকার সংক্রান্ত কিছু তথ্য তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পাঠিয়েছেন। এ বার মোদী এসে কী বলবেন, তার অপেক্ষা। রামকৃষ্ণবাবুই বলছেন, ‘‘দুই মেদিনীপুর, বাঁকুড়়া, হাওড়়া আর হুগলির কিছু অংশ থেকে লোক আসবে মোদীর সভায়। আরামবাগ, গোঘাটের দিকে তৃণমূল প্রধানমন্ত্রীর সভায় যাওয়ার গাড়ি ভাড়়া করতে বাধা দিচ্ছে।’’ যাঁরা আসবেন, তাঁরা যে শুধু কিসান মোর্চার লোক নন, তা অবশ্য বলাই বাহুল্য।
দিলীপবাবুর কথায় বরং পরিষ্কার, কৃষককে সামনে রেখে লোকসভা ভোটের আগে বাংলায় বিজেপির পালে হাওয়া টানাই মোদীর এই সফরের উদ্দেশ্য। বিজেপির রাজ্য সভাপতির কথায়, ‘‘এটা কৃষক সমাবেশ। কিন্তু বাংলায় রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে সামগ্রিক ভাবেই মোদী বলবেন বলে আশা করছি।’’ তাঁর আরও সংযোজন, ‘‘জনসঙ্ঘের আমলে আমরা মেদিনীপুর থেকে সাংসদ পেয়েছি। আর ব্রিটিশ শাসন হোক বা বাম জমানা, পরিবর্তনের লড়়াইয়ে মেদিনীপুর সব সময় বড়় ভূমিকা নিয়েছে। এই মেদিনীপুর থেকেই আবার পরিবর্তনের লড়়াই আরও জোরালো হবে।’’
তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় কটাক্ষ করতে ছাড়়ছেন না, ‘‘রাজনীতি করতে আসছেন, বললেই হয়! কৃষকদের নিয়ে টানাটানি কেন? বাংলার কৃষকেরা জানেন, তাঁদের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গোটা জীবন লড়়াই করেছেন। মিত্র হওয়ার জন্য মোদীর দরকার নেই!’’