West Bengal News

নকশালবাড়িতে পাত পেড়ে ভোজ অমিতের, মমতার আক্রমণ কোচবিহার থেকে

বাম আন্দোলনের আঁতুড়ঘরে পা রেখে এক জনের বার্তা— এ বার বিজেপি-কে বেছে নিন। আর নিজের শক্ত ঘাঁটিতে দাঁড়িয়ে অন্য জনের আহ্বান— আর যা-ই করুন, বিজেপি-তে কিছুতেই যাবেন না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৭ ১৬:১৩
Share:

একই দিনে দুই মহারথী উত্তরবঙ্গে, সরগরম কোচবিহার থেকে নকশালবাড়ি। —ফাইল চিত্র।

বাম আন্দোলনের আঁতুড়ঘরে পা রেখে এক জনের বার্তা— এ বার বিজেপি-কে বেছে নিন।

Advertisement

আর নিজের শক্ত ঘাঁটিতে দাঁড়িয়ে অন্য জনের আহ্বান— আর যা-ই করুন, বিজেপি-তে কিছুতেই যাবেন না।

একই দিনে উত্তরবঙ্গে বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি এবং বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। এক জনের কর্মসূচি অন্য জনের পাল্টা হিসেবে গৃহীত হয়েছে, তেমন নয়। কিন্তু একই দিনে, একই সময়ে একে অপরের থেকে শ’দেড়েক কিলোমিটার দূরত্বে দুই হাই প্রোফাইল মহারথীর রাজনৈতিক কর্মসূচি থাকলে উত্তেজনার পারদ যতটা চড়ে যায়, নকশালবাড়ি থেকে কোচবিহার— রাজনৈতিক উত্তেজনার পারদ মঙ্গলবার ততটাই তুঙ্গে।

Advertisement

বিজেপি সভাপতি অমিত শাহকে স্বাগত জানাতে এ দিন বাগডোগরা বিমানবন্দরে হাজির ছিলেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এবং কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়। বাগডোগরা থেকে অমিত শাহ সরাসরি চলে যান নকশালবাড়ি। বিজেপি-র ‘বুথ চলো’ কর্মসূচির সূচনা করতেই অমিত শাহের এই নকশালবাড়ি যাত্রা। বাংলার এমন কোনও জায়গা থেকে ‘বুথ চলো’ কর্মসূচি শুরু করতে চাইছিলেন অমিত শাহ, যে অঞ্চল রাজনৈতিক কারণে গোটা ভারতে বিখ্যাত। সে কারণেই অতিবামপন্থী আন্দোলনের জন্মভূমি নকশালবাড়িকে বেছে নেয় বিজেপি। স্থানীয় সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়াও এই কর্মসূচিতে হাজির ছিলেন। বিজয়বর্গীয়, অহলুওয়ালিয়া, দিলীপ ঘোষ, রাহুল সিংহদের নিয়ে অমিত শাহ প্রথমে নকশালবাড়ির দীর্ঘ দিনের বিজেপি কর্মী রাজু মাহালি-গীতা মাহালির বাড়ি যান। সেখানেই মধ্যাহ্নভোজ সারেন বিজেপি নেতারা। টিনের বাড়ির দাওয়ায় বসে কলাপাতায় ভোজ। মেনু— ভাত, রুটি, ডাল, পটল ভাজা, আলু-পটলের তরকারি, পাঁপড় ভাজা, দই, মিষ্টি।

মধ্যাহ্নভোজ সেরে বুথ স্তরের নেতাদের সঙ্গে অমিত শাহ বৈঠক করেন। ওই এলাকায় বিজেপি-র টিকিটে নির্বাচিত একমাত্র পঞ্চায়েত সদস্য সাধনা মণ্ডলের বাড়িতে এই বৈঠক হয়। তার পর এলাকায় সভায় করেন অমিত। সোমবার সুকমায় ভয়াবহ মাওবাদী হামলার দিকে ইঙ্গিত করে অমিত শাহ বলেন, ‘‘এই সেই নকশালবাড়ি, যেখান থেকে হিংসা শুরু হয়েছিল। আজ তাতে সারা ভারত ঝলসে যাচ্ছে। আর আজ নকশালবাড়িতে মোদীজির ‘সবকা সাথ সবকা বিকাশ’ মন্ত্র ধ্বনিত হচ্ছে।’’ নকশালবাড়ির মতো এলাকায় পদ্মফুল ফুটতে দেখে খুব আনন্দ হচ্ছে— মন্তব্য বিজেপি সভাপতির।

নকশালবাড়িতে অমিত শাহের এই সভা শুরু হওয়ার আগেই অবশ্য কোচবিহারের রাসমেলা ময়দানে কামতাপুর পিপলস পার্টির (কেপিপি) সভায় নিজের ভাষণ শেষ করে চকচকার পথে রওনা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেপিপি-র সভা থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রত্যাশিত ভাবেই এ দিন পের বিজেপিকে আক্রমণ করেন। তৃণমূলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীর আহ্বান— আর যে দলেই যান, বিজেপিতে কেউ যাবেন না। তিনি বলেন, ‘‘ধর্ম মানে বিজেপি-র মতো ভাগাভাগি নয়। বিজেপি হিংসা ছড়ায়, ভাগাভাগি করে। বিজেপি দাঙ্গাবাজ দল।’’ বাংলার মাটিতে তিনি যে সহজে বিজেপিকে দাগ কাটতে দেবেন না, সে বার্তাও এ দিন ফের দিয়েছেন মমতা। বলেছেন, ‘‘এ মাটিতে বাঘ এসে খামচালে বাঘের দাঁত ভেঙে পড়ে যাবে।’’

চকচকার সভা থেকেও বিজেপিকে এ দিন তীব্র আক্রমণ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হিন্দু ধর্ম বিজেপি-র একার নয়, তিনিই আসল হিন্দু— এই বার্তা এ দিন ফের দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গরুর জন্য আধার কার্ডের প্রসঙ্গ টেনে বিজেপিকে তীব্র কটাক্ষ করেন। তিনি বলেন, ‘‘এর পর বলবে মুরগির আধার কার্ড চাই, ছাগলের আধার কার্ড চাই, পুকুরের মাছগুলো গুনে গুনে তাদের জন্যও একটা করে আধার কার্ড চাই।’’ বামেরা এখন এ রাজ্যে বিজেপির দোসর— এমন অভিযোগও করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। চকচকার সভায় তিনি বলেন, ‘‘দিল্লি থেকে এল রাম, সঙ্গে জুটল সিপিএম-বাম।’’

নকশালবাড়িতে কর্মিসভায় অমিত শাহ। —নিজস্ব চিত্র।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দুই জনসভাতেই এ দিন ভাষণের বড় অংশ জুড়ে যে ভাবে বিজেপি বিরোধিতা ছিল, অমিত শাহের ভাষণে কিন্তু তৃণমূল নিয়ে তত কথা ছিল না। বাম বা তৃণমূল পরীক্ষিত হয়েছে গিয়েছে, এ বার বিজেপিকে সুযোগ দেওয়া হোক— এই বার্তা স্পষ্ট ভাবেই দেওয়ার চেষ্টা করেছেন বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি। কিন্তু তাঁর ভাষণ মূলত ছিল বিজেপি-র পরিকল্পনা এবং প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন কর্মসূচিকে ঘিরেই।

আরও পড়ুন: মহামিছিল করে তৃণমূল উৎখাতের ডাক বিজেপির

নকশালবাড়িতে এ দিন দরজায় দরজায় গিয়ে প্রচারের কর্মসূচিও ছিল অমিত শাহের। সেখানকার কর্মসূচি সেরে তাঁর শিলিগুড়ি যাওয়ার কথা। শিলিগুড়ির ইনডোর স্টেডিয়ামে কর্মিসভা রয়েছে বিজেপির। সেখানে কিছু বিশিষ্ট নাগরিকের উপস্থিত থাকার কথা। এর পর বিজেপি-র সাতটি জেলা কমিটির সভাপতিদের সঙ্গেও তিনি বৈঠক করবেন। রাতেই কলকাতায় আসার জন্য অমিত শাহ পদাতিক এক্সপ্রেস ধরবেন।

আজ উত্তরবঙ্গে ‘বুথ চলো’ কর্মসূচির উদ্বোধন করার পর আগামিকাল দক্ষিণবঙ্গেও অমিত শাহ একই কর্মসূচির সূচনা করবেন। উত্তরবঙ্গে বেছে নেওয়া হল নকশালবাড়িকে। দক্ষিণবঙ্গে বেছে নেওয়া হয়েছে খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচনী ক্ষেত্র ভবানীপুরকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন