BJP’s Organisational Reshuffle

বিজেপির রাজ্য কমিটিতে বড়সড় রদবদলের ছায়া, সংগঠন থেকে ভোটযোদ্ধাদের অব্যাহতি? প্রধান চ্যালেঞ্জ ‘কাজের লোক’ পাওয়া

জেলা স্তর পর্যন্ত যখন এই নীতি কার্যকর হয়ে গিয়েছে, তখন রাজ্য স্তরেও একই নীতি প্রযোজ্য বলে বিজেপির একাংশের মত। রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য এখন রাজ্যসভার সাংসদ। সুতরাং বিধানসভা ভোটে তাঁর লড়ার সম্ভাবনা নেই। সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তীর ক্ষেত্রেও সে সম্ভাবনা কম।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০২৫ ০৮:৫৯
Share:

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

নীতি বহুদিনের। ‘কাজের লোকে’র অভাবে বরাবরই তার ঠিকঠাক রূপায়ণ কঠিন হয়। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে এবার আর তেমন ঘটতে দিতে চাইছেন না বিজেপি নেতৃত্ব। কারণ, সামনে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে অতিরিক্ত দায়িত্বের চাপ কারও কাজে ছাপ ফেলুক, এমনটা বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব চান না। তাই যাঁরা নির্বাচনের মুখোমুখি হবেন, তাঁদের বড় সাংগঠনিক দায়িত্ব আপাতত না-দেওয়ার বিষয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে। জেলা স্তরে সেই নীতিই মানা হয়েছে। রাজ্য স্তরেও সেই নীতি মানা হলে বড় রদবদলের মুখে পড়বে বঙ্গ বিজেপির প্রথম সারি। পুরোটাই অবশ্য নির্ভর করছে সাংগঠনিক গুরুদায়িত্ব বহনের ‘উপযুক্ত’ নাম খুঁজে পাওয়ার উপর।

Advertisement

বিধায়কেরা প্রায় সকলেই নিজের নিজের আসনে টিকিট পাবেন, এ কথা দলের অন্দরে মাস ছয়েক আগেই ঘোষিত। প্রত্যেক বিধায়ককে নিজের এলাকায় জনসংযোগ বাড়াতে বলে দেওয়া হয়েছে। যে সব বিধানসভা কেন্দ্র বিজেপি-র দখলে, সেখানে বুথ, মণ্ডল এবং জেলা স্তরের সভাপতি বাছাইয়ে বিধায়কদের মতামত সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে শোনা হয়েছে। সংগঠনের মাথায় যাঁরা থাকলে বিধায়ক তথা প্রার্থীর সঙ্গে সংগঠনের সমন্বয় মসৃণতর হবে, তাঁদেরই বুথ বা মণ্ডল স্তরে সভাপতি হিসেবে বেছে নেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। আর সবক’টি জেলা কমিটির মাথা থেকে বিধায়কদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। যেমন নদিয়া দক্ষিণের সভাপতি ছিলেন রানাঘাট উত্তর-পশ্চিমের বিধায়ক পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায়, আরামবাগের সভাপতি ছিলেন পুরশুড়ার বিধায়ক বিমান ঘোষ। এঁদের সকলকেই জেলা সভাপতি পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে নিজের নির্বাচনী এলাকায় বেশি সময় দিতে বলা হয়েছে। বিজেপি সূত্রের ব্যাখ্যা, ভোটের সময়ে জেলা সভাপতিকে গোটা জেলার সব প্রার্থীর সুবিধা-অসুবিধা দেখতে হবে। সব আসনের ভোট ব্যবস্থাপনার তদারকি করতে হবে। কোনও বিধায়কের উপরে সেই দায়িত্ব থাকলে তিনি নিজের কেন্দ্রে বেশি সময় দিতে পারবেন না।

জেলা স্তর পর্যন্ত যখন এই নীতি কার্যকর হয়ে গিয়েছে, তখন রাজ্য স্তরেও একই নীতি প্রযোজ্য বলে বিজেপির একাংশের মত। রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য এখন রাজ্যসভার সাংসদ। সুতরাং বিধানসভা ভোটে তাঁর লড়ার সম্ভাবনা নেই। সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তীর ক্ষেত্রেও সে সম্ভাবনা কম। কারণ, ওই পদে থেকে ভোটে লড়া যায় না। আর ওই পদে অমিতাভের বিকল্প কোনও নাম এই মুহূর্তে বিজেপির হাতে নেই। ফলে অমিতাভকে ভোটযুদ্ধে পাঠিয়ে অন্য কাউকে তাঁর জায়গার আনার অবকাশ নেই। এই দু’জন ছাড়া সাংগঠনিক স্তরের সামনের সারি বলতে রয়েছেন পাঁচ সাধারণ সম্পাদক। এঁদের অধিকাংশেরই ভোট লড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে বিজেপি সূত্রে জানা যাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে বর্তমান সাধারণ সম্পাদকদের অধিকাংশই শমীকের কমিটি থেকে অব্যাহতি পেতে চলেছেন কি না, তা নিয়ে দলের অন্দরে চর্চা শুরু হয়েছে।

Advertisement

রাজ্য বিজেপির পাঁচ সাধারণ সম্পাদক হলেন জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়, লকেট চট্টোপাধ্যায়, জ্যোতির্ময় মাহাতো, অগ্নিমিত্রা পাল এবং দীপক বর্মন। এঁদের মধ্যে অগ্নিমিত্রা এবং দীপক বিধায়ক। তাঁরা দু’জনই যে নিজেদের আসন আসানসোল দক্ষিণ ও ফালাকাটা থেকে আবার টিকিট পাচ্ছেন, তা নিয়ে সংশয় নেই। তাই অগ্নিমিত্রা ও দীপকের কাঁধে সাধারণ সম্পাদক পদের গুরুদায়িত্ব এই মুহূর্তে দেওয়া উচিত হবে কি না, তা নিয়ে ভাবতে শুরু করেছেন উচ্চতর নেতৃত্ব। লকেটকে গতবার সাংসদ থাকা অবস্থাতেই বিধানসভায় লড়তে পাঠানো হয়েছিল। এখন তিনি আর সাংসদও নন। তাই এবার তাঁর টিকিট পাওয়ার সম্ভাবনা আরও বেশি। সে ক্ষেত্রে সাধারণ সম্পাদক পদে লকেটকে রেখে দেওয়ার নিশ্চয়তা কম। জগন্নাথও গতবার বিধানসভা নির্বাচনে লড়েছিলেন। কিন্তু তখন তিনি সাধারণ সম্পাদক পদে ছিলেন না। এবার যেহেতু ওই দায়িত্বে রয়েছেন, সেহেতু বিধানসভায় লড়বেন কি না, স্পষ্ট নয়। কিন্তু ২০২১ সালে যে বিধানসভা আসনে জগন্নাথকে বিজেপি প্রার্থী করেছিল, সেই সিউড়িতে গত পাঁচ বছর জগন্নাথ নিবিড় যোগাযোগ রেখেছেন। নিয়মিত জনসংযোগ করেছেন। এমনকি, ‘সংগঠন পর্বে’ দরজায় দরজায় ঘুরে সদস্য সংগ্রহ অভিযানও চালিয়েছেন। ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ফের সিউড়ি থেকে ভোটের ময়দানে নামা তাঁর লক্ষ্য না-হলে ওই আসনে বিশেষ ভাবে জনসংযোগে তিনি জোর দিতেন না বলে বিজেপি-রই একাংশের দাবি। সে ক্ষেত্রে জগন্নাথকেও কি ভোটযুদ্ধে নামিয়ে সাংগঠনিক দায়িত্বের জন্য বিকল্প খোঁজা হবে? এই প্রশ্নও ঘোরাফেরা করছে বিজেপি-র অন্দরে।

আগামী ১ অগস্ট থেকে টানা চার দিন ম্যারাথন সাংগঠনিক বৈঠক চলবে বঙ্গ বিজেপি-তে। সুনীল বনসল, মঙ্গল পাণ্ডে, অমিত মালবীয়রা শমীককে সঙ্গে নিয়ে চার দিন ধরে দলের নানা শাখার সঙ্গে বৈঠক করবেন। সে সময়েই নতুন রাজ্য কমিটি গঠন তথা সাধারণ সম্পাদক-সহ অন্য পদাধিকারীদের নাম চূড়ান্ত করার আলোচনা হয়ে যাবে বলে বিজেপি সূত্রের দাবি। পাঁচ জনের মধ্যে চার সাধারণ সম্পাদককেই অব্যাহতি দিয়ে ভোটযুদ্ধের প্রস্তুতিতে নামিয়ে দেওয়া হবে কি না, ওই বৈঠকগুলির পরেই তা স্পষ্ট হবে। চার সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে অন্তত একজন এই মুহূর্তে বঙ্গ বিজেপি-র প্রধান নিয়ন্ত্রকদের অন্যতম। সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় তাঁর মতামত দলের সর্বভারতীয় সংগঠন সম্পাদক বিএল সন্তোষও গুরুত্ব দিয়ে শোনেন বলে বিজেপি সূত্রের খবর। ওই সাধারণ সম্পাদকের বিকল্প হিসেবে কাউকে খুঁজে নেওয়া যাবে কি না, তা স্পষ্ট নয়। তাই ভোট-যোদ্ধাদের সাংগঠনিক দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার নীতি রাজ্য স্তরে বিজেপি পুরোপুরি বাস্তবায়িত করতে পারবে কি না, তা নিয়েও সংশয় থেকেই যাচ্ছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement