—প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
রাজ্যে খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের বাকি ৭২ ঘণ্টা। কিন্তু আবেদনপত্রে ভোটারের দেওয়া তথ্য যাচাই সম্পর্কে বুথ লেভল অফিসার বা বিএলও-দের সংশয় কাটেনি এখনও। যেমন ঠিক কোন নথিতে সম্পর্ককে মান্যতা দেওয়া হবে, তার কোনও লিখিত নির্দেশ তাঁদের কাছে না থাকায় ধন্দ তৈরি হয়েছে। জন্মতারিখ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও নির্দিষ্ট নিয়মে সব জটিলতা কাটছে না বলেও মনে করছেন তাঁরা।
এসআইআর প্রক্রিয়ার প্রথম পর্ব শেষ। উপযুক্ত ভোটার বাছাইয়ের এই পর্বে রাজ্যে প্রায় ৫৯ লক্ষ ভোটারের নাম বাদ পড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বিপুল সংখ্যক আবেদনকারীর শুনানির সম্ভাবনাও রয়েছে। এই অবস্থায় বিএলও-দের কাছে সব থেকে বড় বিষয় ভোটার তালিকায় নামের ভুল-ঠিক যাচাই। রাজ্যে ২০০২ সালের ভোটার তালিকার নামে সাধারণ কিছু ভুলের জন্যও বহু আবেদন শুনানির জন্য পাঠাতে হচ্ছে। কারণ, এই তথ্য যাচাইয়ের জন্য যথেষ্ট সময় বা স্বাধীনতা থাকছে না তাঁদের। এই সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর ঊর্ধ্বতন এইআরও-দের কাছেও তাঁরা পাননি। এক বিএলও বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ২০০২ সালের তালিকায় কারও নামের সঙ্গে ‘চন্দ্র’, ‘কুমার’, ‘প্রসাদ’ ইত্যাদি হয়তো তখন ছিল, এখন নেই অথবা তখন তা ছিল না, পরে নাম সংশোধন করিয়ে নিয়েছেন ভোটাররা। এ ক্ষেত্রে বিএলও-র সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা থাকা উচিত ছিল।’’
বাবা, মা, ঠাকুরদা বা ঠাকুরমার মতো কারও সঙ্গে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় একেবারে শেষ পর্বে আরও এক দফায় যাচাই করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল বিএলও-দের। তাঁদের বক্তব্য, সে ক্ষেত্রে বুথ পিছু ১০০-১৫০টি আবেদন যাচাইয়ের জন্য এক দিন পর্যাপ্ত নয়। এ সব ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তের জন্য ঊর্ধ্বতন আধিকারিকদের তরফে নির্দিষ্ট পরামর্শ প্রয়োজন ছিল। তা না পাওয়ায় বেশির ভাগই শুনানির জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
অনেকের পুরনো তালিকায় নামের সঙ্গে ভোটার কার্ডের নম্বর (এপিক) পাওয়া যায়নি। এইআরও, ইআরও স্তরে এই অভিযোগ জানিয়েছেন বিএলও-রা। অনেক ক্ষেত্রেই ভোটারের নাম ইংরেজি থেকে বাংলা করার সময়ও ভুল হয়েছে। উচ্চারণ অনুযায়ী নাম ছাপতে গিয়ে বিচিত্র সেই সব ভুল নিয়েও ঠিক কী ভাবে সিদ্ধান্ত হবে, তা-ও অস্পষ্ট ছিল। এক বিএলও-র বক্তব্য, ‘‘৮২ বছরের এক জনের বয়স ইংরেজিতে 82 (এইট্টি টু) লেখা রয়েছে। এ আই প্রযুক্তি ব্যবহারের পরে কোনও ভাবে তারও বাংলা দাঁড়িয়েছে ৪২। এবং তখন তাঁর ছেলে বা নাতির সঙ্গে বয়সের ফারাক হয়ে যাচ্ছে।’’ কিছু ‘অসত্য’ তথ্য ইতিমধ্যেই শনাক্ত হয়েছে। কিন্তু ‘অসত্য’ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত তা যাচাইয়ের প্রক্রিয়ায় রাখার দায়িত্বও অস্বীকার করতে পারছেন না বিএলও-রা।
এক বিএলও-র কথায়, ‘‘প্রশিক্ষণের সময়ে আমাদের বলা হয়েছিল, সামান্যতম মিল খুঁজে পেলেও আবেদনকে মান্যতা দেবেন। কিন্তু যে অ্যাপ দেওয়া হল, তাতে সেই সুযোগই রাখা হয়নি। বিএলও-দের দেওয়া অ্যাপটি অন্তত ৮ বার আপডেট করা হয়েছে। এক দিনে একাধিক আপডেটও হয়েছে। বারবার পদ্ধতি বদল করা হয়েছে। ফলে বিএলও-রাও নানা সমস্যায় পড়েছেন।’’ তা ছাড়াও, প্রতিটি ধাপে আরও বেশি সময় দেওয়া হলে বিষয়টি সংশয়হীন করা যেত বলেও মনে করছেন তাঁদের বড় অংশ।
কমিশনের তরফে অবশ্য এই রকম অসুবিধাগুলিকে ‘ছোট’ বলে চিহ্নিত করা হচ্ছে। সংশোধনের এই প্রক্রিয়ায় বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘এগুলি কোনও সমস্যা হবে না। আবেদনের যথার্থতা প্রমাণ করতে আবেদনকারী সবরকম সহযোগিতা পাবেন।’’ এরই মধ্যে মুর্শিদাবাদের হরিহর পাড়ায় এক বিএলও মায়া মুখোপাধ্যায় এ দিন শ্বাসকষ্ট নিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে মুর্শিদাবাদ মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছে। পরিবারের দাবি, এসআইআর-এর কাজ করতে গিয়েই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর
সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ
সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে