হোটেলে পড়ে রয়েছে অটল সেনের দেহ। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়।
এলাকার পানশালাগুলিতে তখন সদ্য শুরু হয়েছে গানবাজনা। হঠাৎ বাইরে কিছু পতনের শব্দ।
তখনও ঝড়বৃষ্টি শুরু হয়ি। মেঘও ডাকেনি। চমকে পানশালাগুলি থেকে অনেকে বেরিয়ে এসে দেখলেন, কাছের একটি হোটেলের বড় পাঁচিলের উপরে পড়ে রয়েছে এক যুবকের দেহ। এর পরে সেই হোটেলের একটি ঘর থেকে মেলে ওই যুবকের সঙ্গী মহিলার রক্তাক্ত দেহ।
শনিবার সন্ধ্যায় নৈহাটির কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের রাজেন্দ্রপুর মোড়ের একটি হোটেলে এই ঘটনাকে ঘিরে তোলপাড় হয় এলাকা। এখানে গজিয়ে ওঠা অসংখ্য পানশালা-সহ হোটেলে দেহ-ব্যবসা নিয়ে অভিযোগে সরব হন বাসিন্দারা। পুলিশ জানায়, মৃত মহিলার নাম আরতি গায়েন (৩৭) ওই হোটেলে অবশ্য তাঁর নাম নথিভুক্ত হয়েছিল প্রিয়া সেন হিসেবে। বাড়ি হরিনাভির সরকারপাড়ায়। যুবকটির নাম অটল সেন (৪০)। তিনি সোনারপুরের আর এন চক্রবর্তী রোডের বাসিন্দা ছিলেন।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, অটলবাবু ঘনিষ্ঠ অবস্থায় ছুরি দিয়ে ওই মহিলাকে খুন করেন। তারপর হোটেলের চারতলার ব্যালকনি থেকে ঝাঁপ দিয়ে নিজে আত্মঘাতী হন। হোটেলের ঘরের দরজা ভেঙে আরতিদেবীর দেহ উদ্ধারের সময়ে তাঁর ব্যাগ থেকে একটি চিরকুট পায় পুলিশ। পুলিশ জানায়, ওই চিরকুটে লেখা ছিল, দু’জনের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে সম্পর্ক ছিল। কিন্তু সম্পর্কের পরিণতি তাঁদের জানা ছিল না। হোটেল-মালিক পরিতোষ মণ্ডলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ।
ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার নীরজ সিংহ বলেন, ‘‘দু’জনের পরিচয় বিশদে জানার চেষ্টা চলছে। সোনারপুর থেকে এখানে তাঁরা কেন এলেন, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। হোটেলে তাঁরা স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে উঠেছিলেন।’’
হোটেলটির নীচেও পানশালা রয়েছে। সেখানকার কর্মীরা জানান, এ দিন সকাল সওয়া ১১টা নাগাদ হোটেলের চার তলার ঘর ভাড়া নেন অটল ও আরতি। তার পরে তাঁদের আর কেউ বেরোতে দেখেননি। দুপুরের খাবারও তাঁরা ঘরে খান।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এক্সপ্রেসওয়ের ধারে গজিয়ে ওঠা পানশালা-সহ হোটেলগুলিতে ঘণ্টা হিসেবে যে কেউ ঘর ভাড়া নিতে পারেন। ভোটার কার্ড নাম-কা-ওয়াস্তে দেখা হয়। হোটেলগুলিতে স্কুল-পডুয়া ছেলেমেয়ে থেকে শুরু করে মাঝবয়সী যুগলেরও দেখা মেলে। পুলিশ পুজো এবং নির্বাচনের আগে ধরপাকড় চালায় ঠিকই, কিন্তু বাকি সময় পুলিশের চোখ এড়িয়েই হোটেলগুলি অবাধেই ওই ব্যবসা চালায়।