ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে অভিযুক্ত যুবককে। — নিজস্ব চিত্র
তখন বেলা ১১টা। ছুটির দিন হলেও কাটোয়া স্টেশন চত্বরে ব্যস্ততা আর পাঁচ দিনের মতোই। এমন সময় বোমা ফাটার শব্দে চমকে ওঠেন যাত্রী থেকে উপস্থিত সকলেই। এক যুবককে ছুটে পালাতে দেখে ধাওয়া করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। শেষ অবধি ধরা পড়ে যায় আলি হাসিমুদ্দিন শেখ নামে ওই যুবক। তার বাড়ি বীরভূমের নানুর থানার পুরন্দরপুর গ্রামে। রেলপুলিশের দাবি, ওই যুবক সমাজবিরোধী। তার বিরুদ্ধে নানুর থানায় চুরি, বোমাবাজি-সহ একাধিক অভিযোগ আছে।
রবিবার এই নাটকের শুরু অবশ্য কিছু সময় আগেই হয়েছিল। স্থানীয় সূত্রে খবর, এ দিন সকাল দশটা নাগাদ বছর বাইশের ওই যুবক কাটোয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে খাজুরডিহি যাবার জন্য রিকশায় ওঠার পরে ভাড়া নিয়ে রিকশাচালকের সঙ্গে বচসা বাধে। হঠাৎই সে ব্যাগে থাকা তিনটি বোমা দেখিয়ে ভয় দেখায়। আশপাশের লোকজন হাসিমুদ্দিনকে আটকে রেখে বাস্ট্যান্ডের শৌচাগারে ব্যাগটি রেখে দেন। থানায় ফোন করে বিষয়টি জানানো হয়। ইতিমধ্যে ওই যুবক চম্পট দেয়।
মিনিট দশেকের মধ্যে ফের একটি বোমা নিয়ে বাসস্ট্যান্ডে ফিরে এসে ওই যুবক রিকশাচালক ও স্থানীয়দের কাছ থেকে তার ব্যাগটি ফেরত চায়। বাসস্ট্যান্ডের এক ফলবিক্রেতা বলেন, ‘‘ছেলেটা এসে বলল, ‘ব্যাগ দিয়ে দে, না হলে বোম মারব’! ভয়ে বোমা-সহ ওর ব্যাগটা ফেরত দেওয়া হলেই ও ছোটলাইনের পাশ দিয়ে ছুটে পালায়।’’ যুবকের পিছনে ধাওয়া করেন স্থানীয়রাও। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তখনই ছোটলাইন (ন্যারোগেজ) লাগোয়া রাস্তায় একটি বোমা ছোড়ে হাসিমুদ্দিন। বোমার আওয়াজে রেলপুলিশ ছুটে এলে সে এ বার রেল কলোনির রাস্তার উপরে আরও একটি বোমা ফাটায়। এখানেই শেষ নয়। কাটোয়া স্টেশনের তিন নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে তখন সবেমাত্র ছেড়েছে কাটোয়া-ব্যান্ডেল লোকাল। এক ছুটে বোমার ব্যাগ সমেত ওই যুবক ওই ট্রেনের একটি কামরায় উঠে পড়েন। যাত্রীরা ভয়ে চেন টেনে ট্রেন থামিয়ে দেন। প্রতক্ষ্যদর্শী যাত্রী ফুল বিবির কথায়, ‘‘পাটুলি যেতে ট্রেনে উঠেছিলাম। হাতে বোমা নিয়ে ওই যুবককে কামরায় ঘোরাঘুরি করতে দেখে ভয়ে সিঁটিয়ে যাই।’’ কামরার অন্য যাত্রী অঞ্জন রায়, খোকন দাসেরা বলেন, ‘‘ট্রেন থামানোর পরে যুবক ট্রেন থেকে লাফিয়ে নেমে রেললাইন ধরে ছুটতে থাকে।’’ খানিক দূরেই স্থানীয়রা হাসিমুদ্দিনকে ধরে মারতে শুরু করেন। আরপিএফ, জিআরপি এবং বর্ধমান জেলা পুলিশের একটি দল তাকে উদ্ধার করে।
এই ঘটনায় এ দিন আজিমগঞ্জ প্যাসেঞ্জার ও ব্যান্ডেল লোকাল দু’টি ছাড়তে মিনিট পঁয়তাল্লিশ দেরি হয়। স্টেশনের হকার প্রভাত সাহা, অভিজিৎ সাহারা বলেন, ‘‘ঘটনার পরে অনেক যাত্রীকেই নেমে চলে যেতে দেখলাম। আমরাও বোমা ফাটার আওয়াজে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।’’ রেলপুলিশ সূত্রে দাবি, হাসিমুদ্দিন জানিয়েছে, শনিবার রাতে কাটোয়ার কেশিয়া এলাকায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে সে ছিল। কী কারণে সে বোমা নিয়ে খাজুরডিহি যাচ্ছিল, তা জানতে তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছেন এসডিপিও (কাটোয়া) শচীন মাঁকড়।