Darjeeling Disaster

ত্রাণ ও উদ্ধারকাজে ঝাঁপিয়ে পড়ুন! বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গে দলীয় নেতাকর্মীদের একসুরে নির্দেশ পাঠালেন অভিষেক, শমীক

শনিবার বিকেল থেকে রবিবার সকাল পর্যন্ত দার্জিলিং এবং সংলগ্ন এলাকা প্রবল বৃষ্টিতে বিধ্বস্ত। রাস্তা ধসে, সেতু ভেঙে, বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়ে পাহাড়ের একাধিক অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বিপর্যয়ের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে উত্তরবঙ্গের সমতলেও।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০২৫ ১৮:০৩
Share:

(বাঁ দিকে) অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। শমীক ভট্টাচার্য। (ডান দিকে) গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

পাহাড়-সহ উত্তরবঙ্গের একাধিক জেলায় দুর্যোগের আবহে সক্রিয়তা বাড়াল শাসক-বিরোধী দু’দলই। প্রশাসনের পাশাপাশি তৃণমূলের কর্মীরাও যেন দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াতে মাঠে নামেন— নির্দেশ দিলেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্য বিজেপির সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যও নিজের দলের নেতাকর্মীদের অবিলম্বে ত্রাণ ও উদ্ধার কাজে নামার নির্দেশ দিলেন। আর সিকিমে আটকে পড়া বাঙালি পর্যটকদের দ্রুত এবং নিরাপদে ফেরানোর জন্য সিকিমের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করলেন বিজেপি সাংসদ বিপ্লব দেব। এই বিপর্যয়ের আবহে দ্রুত উত্তরবঙ্গে না গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন কলকাতায় কার্নিভালে ব্যস্ত রইলেন, সে প্রশ্ন তুলে আক্রমণ শুরু করেছে বিজেপি।

Advertisement

শনিবার বিকেল থেকে রবিবার সকাল পর্যন্ত দার্জিলিং এবং সংলগ্ন এলাকায় প্রবল বৃষ্টির জেরে বিপর্যয়ের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে উত্তরবঙ্গের একাধিক জেলায়। রাস্তা ধসে, সেতু ভেঙে এবং বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়ে পাহাড়ের একাধিক অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। দুর্যোগে বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। দার্জিলিঙের পাশাপাশি প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভুটানের প্রবল বর্ষণের জেরে বেলার দিকে বিপর্যয়ের কবলে চলে গিয়েছে তরাই-ডুয়ার্সের বিস্তীর্ণ অংশ। কারণ ভুটান পাহাড় থেকে নেমে আসা প্রায় সব নদীই ওই এলাকা দিয়ে প্রবাহিত।

রবিবার দুপুরে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক নিজের এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করে দার্জিলিঙের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। দলের কর্মীদের উদ্দেশে তিনি লেখেন, ‘‘আমি তৃণমূল কংগ্রেসের সমস্ত কর্মীর কাছে আবেদন করছি যে, তাঁরা যেন ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে পৌঁছন, সহমর্মিতা ও অঙ্গীকারের সঙ্গে সহায়তা পৌঁছে দেন।’’ বলাই বাহুল্য, সমাজমাধ্যমে দলের কর্মীদের প্রতি অভিষেকের এই ‘আবেদন’ আসলে নির্দেশের সমান।

Advertisement

উত্তরবঙ্গের পাহাড়, তরাই-ডুয়ার্স এবং সমতলের একাংশ যখন এমন বিপর্যয়ের গ্রাসে, তখন মুখ্যমন্ত্রী কেন অবিলম্বে সেখানে গেলেন না, প্রশ্ন তুলেছে বিরোধী দল বিজেপি। দলের রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য রবিবার বিকেল এক সাংবাদিক বৈঠকে বলেছেন, ‘‘এই সময়টা খুব একটা আনন্দের সময় নয়, আজকের দিনটা খুব একটা সুখের দিন নয়। আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উচিত ছিল আজকেই উত্তরবঙ্গে পৌঁছে যাওয়া। কিন্তু আমরা দেখছি, আজ কার্নিভাল।’’ শমীকের কথায়, ‘‘এই বিপর্যয়ের আবহে, এই শোকের আবহে আজকে কার্নিভালের প্রয়োজন ছিল না। উত্তরবঙ্গের সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গের যে নাড়ির যোগ রয়েছে, সেই বার্তাটুকু অন্তত উত্তরবঙ্গের মানুষকে দেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রী এই কার্নিভালকে কিছুটা হলেও স্থগিত রেখে আজই উত্তরবঙ্গে চলে যেতে পারতেন। কিন্তু তিনি গেলেন না। তিনি কাল যাচ্ছেন।’’

পুজোর আগে আকাশভাঙা বৃষ্টির জেরে কলকাতা যখন জলমগ্ন হয়ে পড়েছিল, তখন বিজেপি যে ভুল করেছিল, এ বার তারা তা শুধরে নিতে সচেষ্ট। দুর্গত কলকাতাবাসীর পাশে দাঁড়াতে পাড়ায় পাড়ায় বিজেপি কর্মীদের তেমন সক্রিয় হতে তখন দেখা যায়নি। কিন্তু রবিবার উত্তরবঙ্গে বিজেপির সব জেলা কমিটিকে ত্রাণ ও উদ্ধারকাজে নামার নির্দেশ দিয়েছেন বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব। রাজ্য বিজেপির সভাপতি বলেছেন, ‘‘আমাদের সীমিত সাধ্যের মধ্যে দিয়ে উত্তরবঙ্গে আমাদের দলের সমস্ত শাখাকে ত্রাণ ও উদ্ধারের কাজে নামার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যে সব জেলা ক্ষতিগ্রস্ত নয়, সেখানকার সমস্ত বিজেপি নেতৃবৃন্দ এবং কর্মীরা উদ্ধারকার্যে নামবেন। আর আজ সন্ধ্যার পর থেকে আমাদের কর্মীরা বাড়ি বাড়ি যাবেন। আমাদের সাধ্যমতো যতটা সহযোগিতা এবং ত্রাণ এই মুহূর্তে আমরা দিতে পারি, আমরা তার ব্যবস্থা করব।’’

শুধু দুর্গত এলাকায় ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া নয়, ভিন্‌রাজ্যে আটকে পড়া পর্যটকদের রাজ্যে ফেরানোর ক্ষেত্রেও সক্রিয় হয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। বঙ্গ বিজেপির নির্বাচন সহ-প্রভারী তথা ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব রবিবার যোগাযোগ করেছেন সিকিমের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে। তাঁদের মধ্যে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে বলে রাজ্য বিজেপির সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য জানিয়েছেন। শমীকের দাবি, ‘‘বিপ্লবের ফোন পেয়ে সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী তাঁর সচিবালয়ের আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। তিনি বিপ্লবকে জানিয়েছেন যে, সিকিম থেকে পশ্চিমবঙ্গে যাতায়াতের একটি মাত্র রাস্তা আপাতত খোলা রয়েছে। বাকি সব রাস্তা দুর্যোগে বিপর্যস্ত। সেই একটিমাত্র অক্ষত রাস্তা দিয়েই যত দ্রুত সম্ভব বাঙালি পর্যটকদের নিরাপদে ফেরানোর জন্য সিকিম সরকার সচেষ্ট হচ্ছে।’’ সিকিম সরকারের সঙ্গে এ বিষয়ে বিজেপির তরফ থেকে নিরন্তর যোগাযোগ রেখে চলা হচ্ছে বলে রাজ্য বিজেপির সভাপতি জানিয়েছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement