নমস্কারের দেওয়া-নেওয়া 

উপ-নির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থী করেছে প্রাক্তন উপ-পুরপ্রধান তথা কাউন্সিলর চিত্তরঞ্জন মণ্ডলকে। অবশ্য তাঁর সঙ্গে রয়েছে আরও একটি পরিচয়। চিত্তরঞ্জন পেশায় অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। স্কুলজীবনে তৃণমূল প্রার্থী তথা পুরপ্রধান প্রদীপ সরকারের  শিক্ষক ছিলেন চিত্তরঞ্জন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:৫৯
Share:

প্রতীকী চিত্র। (শাটারস্টক)

এক প্রতিদ্বন্দ্বীর তিনি শিক্ষাগুরু। অন্য প্রতিদ্বন্দ্বীর থেকেও বয়সে প্রবীণ। শহরবাসীর কাছেও তিনি পরিচিত ‘মাস্টারমশাই’ নামে। এ বার ভোটের প্রচারে দেখা যাচ্ছে সেই প্রভাব। ভোট প্রার্থনায় জনসংযোগে নেমে পা ছুঁয়ে ভোটারদের আশীর্বাদ আদায়ের চেষ্টা করছেন বিজেপি ও তৃণমূল প্রার্থী। তবে উল্টো ছবি কংগ্রেস প্রার্থীর জনসংযোগে। কংগ্রেস প্রার্থীকে দেখে ছুটে এসে প্রণাম করছেন ভোটাররাই! খড়্গপুর সদর (শহর) বিধানসভা উপ-নির্বাচনে এ বার এমন ছবিই সামনে আসছে।

Advertisement

উপ-নির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থী করেছে প্রাক্তন উপ-পুরপ্রধান তথা কাউন্সিলর চিত্তরঞ্জন মণ্ডলকে। অবশ্য তাঁর সঙ্গে রয়েছে আরও একটি পরিচয়। চিত্তরঞ্জন পেশায় অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। স্কুলজীবনে তৃণমূল প্রার্থী তথা পুরপ্রধান প্রদীপ সরকারের শিক্ষক ছিলেন চিত্তরঞ্জন। চিত্তরঞ্জনের আরেক প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপির প্রার্থী প্রেমচাঁদ ঝা-ও তুলনায় নবীন। তাই জনসংযোগে যেখানে তৃণমূল ও বিজেপির প্রার্থী প্রবীণ ভোটার দেখলেই পা ছুঁয়ে প্রণাম করছেন সেখানে জোড়হাতে সমর্থন চাইছেন কংগ্রেস প্রার্থী। বরং বছর একাত্তরের চিত্তরঞ্জনকে সামনে পেয়ে ভোটারেরা করছেন প্রণাম। জোড়হাতে এগিয়ে যাচ্ছেন ‘মাস্টারমশাই’।

শহরের অতুলমনি স্কুলে শিক্ষক থাকাকালীন ১৯৯০ সালে প্রথম রাজনীতির ময়দানে নেমেছিলেন চিত্তরঞ্জন মণ্ডল। পুর নির্বাচনে সেবার সিপিএম প্রার্থীর কাছে পরাজিত হতে হয়েছিল এলাকার কংগ্রেস প্রার্থী মাস্টারমশাইকে। তবে ১৯৯৫ সাল থেকে টানা দু’বার কাউন্সিলর হয়েছিলেন। ২০০৫ সালে মহিলা সংরক্ষিত ওই ওয়ার্ড থেকে মাস্টারমশাইয়ের ভাবমূর্তিকে সঙ্গী করেই জিতেছিলেন তাঁর স্ত্রী। তার পরে ফের ২০১০ থেকে এখনও পর্যন্ত কাউন্সিলর রয়েছেন চিত্তরঞ্জন। তার মাঝে টানা ৮বছর ছিলেন কংগ্রেস বোর্ডের উপ-পুরপ্রধান। সেই সূত্রেই শহরবাসীর কাছে পরিচিত মুখ তিনি। এ বার তাই একসময়ে দশবারের দলের বিধায়ক প্রয়াত ‘চাচা’ জ্ঞানসিংহ সোহন পালের ‘গড়’ বলে পরিচিত শহরে কংগ্রেস প্রার্থী হিসাবে বেছে নিয়েছে চিত্তরঞ্জনকে। কংগ্রেসের জেলা কার্যকরী সভাপতি দেবাশিস ঘোষ বলেন, “এলাকায় শিক্ষক হিসাবে যেমন খ্যাতি রয়েছে তেমনই রাজনীতিতেও তাঁর গায়ে কেউ কালি ছেটাতে পারেনি। এই স্বচ্ছ ভাবমূর্তিকে সম্বল করেই আমাদের প্রার্থী এগিয়ে চলেছেন। স্বাভাবিকভাবে এমন প্রবীণ মানুষকে কাছে পেয়ে মানুষ শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রণাম করছেন।”

Advertisement

সম্প্রতি কংগ্রেস প্রার্থীর পা ছুঁয়ে প্রণাম করেছেন শহরের ১০নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা পুরকর্মী প্রবীর রায়চৌধুরী। তিনি বলেন, “চিত্তরঞ্জন মণ্ডল কংগ্রেস প্রার্থী পরে। আগে আমার শিক্ষক, কাছের মানুষ, শ্রদ্ধার মানুষ। রাজনীতিতে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির মানুষ। তাই ওঁকে যখনই সামনে দেখি মন থেকে শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রণাম করি। ভোটের ময়দানে ব্যতিক্রম হবে কেন!” আবার ১১নম্বর ওয়ার্ডের সুমিতা বসু বলেন, “পাড়ার প্রবীণ মানুষ। আমার স্বামীর শিক্ষক। তিনি যখন ভোট প্রচারে বেরিয়ে আমার বাড়িতে এসেছেন তখন প্রণাম করে শুভেচ্ছা জানিয়েছি।” এমন ঘটনায় আপ্লুত কংগ্রেস প্রার্থীও। চিত্তরঞ্জন বলেন, “যতদিন শিক্ষকতা করেছি নিষ্ঠার সঙ্গে করেছি। উপ-পুরপ্রধানের পদও সামলেছি। পুরসভায় শহরের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ আমার কাছে আসতেন। আমিও সাধ্যমতো সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেছি। এখন হয়তো সেই কাজের প্রতিদান পাচ্ছি। জয়-পরাজয় পরের কথা। এই সম্মানে আমি তৃপ্ত।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন