পড়ুয়াদের অপহরণের গুজব রুখতে আরও এক কদম এগোল পুলিশ-প্রশাসন।
রবিবার দুপুরে বসিরহাট থানার সামনে একটি অনুষ্ঠান বাড়িতে বসিরহাট মহকুমার চারটি চক্রের তিনশোরও বেশি প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নিয়ে বৈঠক করেন অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকেরা। ছিলেন ওসি গৌতম মিত্র। গুজবে কান না দেওয়ার জন্য যে যে পদক্ষেপ করা জরুরি, বৈঠকে তা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। বসিরহাটের স্কুল থেকে ছাত্র উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার গুজব নিয়ে এলাকার মানুষের প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছিল আনন্দবাজার পত্রিকা। বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখতে শুরু করে পুলিশ-প্রশাসনও।
শিক্ষকদের দাবি মেনে ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য এবং অভিভাবকদের চিন্তামুক্ত রাখতে পড়ুয়াদের জন্য ছবি-সহ ‘চাইল্ড কেয়ার কার্ড’ তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছে। স্কুলের রেজিস্ট্রারে পড়ুয়াদের পরিচয়ের পাশাপাশি অভিভাবকদের মোবাইল নম্বর থাকবে। যে সব স্কুলে পাঁচিল নেই, সেখানে দ্রুত পাঁচিলের ব্যবস্থা করা হবে। গৌতমবাবু বলেন, ‘‘মহকুমার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দফতর এবং তার আধিকারিকদের মোবাইল নম্বর নিয়ে একটি টেলিফোন গাইড প্রকাশ করা হবে। দ্রুত প্রয়োজন পড়লে যাতে সঙ্গে সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়। গাইড বই মূলত স্কুলগুলিতে রাখা হবে।’’
খড়িডাঙা প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা রীতা মণ্ডল সাঁপুই, স্বরূপনগর প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুজন কাবাসি, দক্ষিণ মথুরাপুর পি কে হালদার প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক অশোক সেনগুপ্তরা বলেন, ‘‘আমাদের স্কুলে কোনও সীমানা পাঁচিল নেই। সংশ্লিষ্ট দফতরে জানিয়েও কোনও সুরাহা হচ্ছে না।’’ বিদ্যাধরী নদীর জল বাড়লে স্কুল চত্বর জলমগ্ন হয়ে পড়ে বলে দাবি করে ধান্যকুড়িয়া পণ্ডিতজী কলোনি প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা তপতী ঘোষ মণ্ডল বলেন, ‘‘নদীর জোয়ার-ভাটার উপরে স্কুলের মাঠ জেগে থাকা নির্ভর করে। শিশুদের নিয়ে চিন্তায় থাকতে হয়। অবিলম্বে স্কুল বাড়ি ঘিরে পাঁচিল জরুরি।’’ আঁকিপুর প্রাথমিক স্কুল, কিপারহাটি বুনোপাড়া প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক ইভা সাঁপুই, সুব্রত মণ্ডল বলেন, ‘‘আমাদের একটি স্কুলের পাশে বড় পুকুর, বাস রাস্তা আর একটির পাশ দিয়ে ট্রেন লাইন চলে গিয়েছে। স্কুলের কোনও পাঁচিল না থাকায় শিশুদের সব সময়ে ধরে রাখা সম্ভব নয়। বিপদের আশঙ্কা নিয়ে স্কুল করতে হয়। পাঁচিল খুবই দরকার।’’
এ বিষয়ে বসিরহাট পূর্ব চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক শৈলেশ পাল, মিনাখাঁ ১ এবং বসিরহাট দক্ষিণ চক্রের অবর বিদ্যালয়ের পরিদর্শক রথীন রায় বলেন, ‘‘অধিকাংশ স্কুলে পাঁচিল আছে। তবে যে স্কুলগুলিতে পাঁচিল নেই, সেখানে যাতে দ্রুত পাঁচিল করা সম্ভব হয়, সে জন্য বিষয়টি নিয়ে সর্বশিক্ষা দফতরের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়াও, পড়ুয়াদের পরিচয়পত্র দেওয়া হবে। অভিভাবকদের সঙ্গে মাসে অন্তত একবার স্কুল কর্তৃপক্ষের বৈঠক করার জন্যও প্রধান শিক্ষকদের বলা হয়েছে।’’