চোর সন্দেহে গণপ্রহারে খুন দুই যুবক

দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবারে এক যুবককে মোষ চোর সন্দেহে পিটিয়ে খুনের পর মাত্র কয়েক দিন কেটেছে। তা নিয়ে রাজ্য জুড়ে হইচইও কম হয়নি। তার মধ্যেই জলপাইগুড়ির ডামডিম চা বাগানে ছাগল চোর সন্দেহে দুই যুবককে গণপিটুনি দিয়ে মেরে ফেলার অভিযোগ উঠল। পুলিশ

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মালবাজার শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৬ ০৩:১৭
Share:

নিহত অজয় রায়।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবারে এক যুবককে মোষ চোর সন্দেহে পিটিয়ে খুনের পর মাত্র কয়েক দিন কেটেছে। তা নিয়ে রাজ্য জুড়ে হইচইও কম হয়নি। তার মধ্যেই জলপাইগুড়ির ডামডিম চা বাগানে ছাগল চোর সন্দেহে দুই যুবককে গণপিটুনি দিয়ে মেরে ফেলার অভিযোগ উঠল। পুলিশ জানিয়েছে, নিহত দুই যুবকের নাম অজয় রায় (২২) এবং গোপাল সিংহ (২৮)। অজয়ের বাড়ি মালবাজার পুর এলাকার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের দৈনিক বাজার এলাকায়। গোপাল নিউমাল জংশন এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা হলেও, কিছু দিন ধরে মালবাজারের পানোয়ার বস্তি এলাকায় ভাড়া ছিলেন।

Advertisement

রবিবার সকালে চা বাগান থেকে একটি দগ্ধ গাড়ি সহ দুই যুবককে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। হাসপাতালে নিয়ে গেলে দুই যুবককেই চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। তারপর থেকেই ডামডিম চা বাগানের পরিবেশ থমথমে। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ মনে করছে, এ দিন সকালে দুই যুবককে গাড়ি নিয়ে চা বাগানে ঘোরাঘুরি করতে দেখে ছাগল চোর সন্দেহে তাঁদের ওপর বাসিন্দাদের একাংশ চড়াও হয়। গাড়িটি ভাঙচুর করে উল্টে দিয়ে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়, দুই যুবককেও লাঠি, বাঁশ দিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়, ছোড়া হয় পাথরও। যদিও, কে বা কারা যুবকদের মারধর করে গাড়ি জ্বালিয়ে দিল তা এখনও পুলিশ চিহ্নিত করতে পারেনি। বাগানে পুলিশ রয়েছে।

ডামডিম চা বাগানের ব্যারন ডিভিশন থেকে দগ্ধ গাড়ি এবং জখম যুবকদের উদ্ধার করা হয়। ওই এলাকাটি দিনের বেলাতেও নির্জন থাকে। বাগানে ছড়িয়ে থাকা ঘাস জমিতে অবাধে প্রচুর ছাগল চড়ে বেড়ায়।

Advertisement

বাসিন্দাদের দাবি, এই এলাকায় ছাগল চুরির অভিযোগ বেড়েই চলছিল। চার চাকা গাড়ি বা বাইক চেপে বাগানে ঢুকে ছাগল তুলে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা প্রতিদিনই ঘটে বলে অভিযোগ। সে কারণেই এ দিন দুই যুবককে দেখে বাসিন্দারা ছাগল চোর বলে সন্দেহ করেন বলে এলাকার কয়েকজন দাবি করেছে। ওই যুবকেরা কী উদ্দেশ্যে নির্জন বাগানে গাড়ি নিয়ে গিয়েছিলেন, তা নিয়ে ধন্ধ কাটেনি পুলিশেরও।

এ দিন, বাগানের ব্যারন ডিভিশনের ৯ নম্বর সেকশনে একটি গাড়ি জ্বলছে বলে বাগান কর্তৃপক্ষ পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ যখন পৌঁছয় তত ক্ষণে পুরো গাড়িটি পুড়ে গিয়েছে। দগ্ধ গাড়ির পাশ থেকে জখম দুই যুবককে উদ্ধার করেন পুলিশকর্মীরা। এ দিন সন্ধ্যায় মালবাজার থানায় চলে আসেন জলপাইগুড়ি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভোলানাথ পান্ডে। তিনি বলেন, পুলিশ ইতিমধ্যেই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শুরু করেছে। দোষীদের চিহ্নিত করার কাজও শুরু হয়েছে।

দগ্ধ গাড়িটি মালবাজারের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আরমান হোসেনের। আরমানবাবু জানিয়েছেন, মাসখানেক ধরে গোপালবাবু গাড়িটি চালাচ্ছিলেন। এ দিন সকালে তেল ভরার জন্য গোপালাববু গাড়ি নিয়ে পাম্পে যাওয়ার জন্য বেরিয়েছিলেন বলে তাঁর দাবি।

অন্য দিকে, অজয়বাবুর বাবা বিজয়বাবু পেশায় ভ্যানচালক। তিনি বলেন, ‘‘ছেলে ছাগল চুরি করতে বাগানে গিয়েছিল, এটা বিশ্বাস করতে পারছি না। চোর অপবাদে ওকে খুন করা হয়েছে।’’

পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, অজয় সম্প্রতি বিয়ে করে মালবাজারের প্রধান ডাকঘর লাগোয়া ৪ নম্বর ওয়ার্ডে ভাড়াবাড়িতে থাকতেন। তিনি পেশায় গাড়িচালক, সম্প্রতি নিজেও একটি ছোট গাড়ি কেনেন। যে ডামডিম বাগানে ঘটনাটি ঘটেছে তার থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে ডামডিম বাজারেই অজয়ের শ্বশুরবাড়ি। পেশাগত সূত্রেই অজয় এবং গোপালের মধ্যে বন্ধুত্ব তৈরি হয়। গোপালের বাবা শম্ভুবাবু বলেন, ‘‘অভাব রয়েছে। তাই বলে ছাগল চুরি করবে? মানতে পারি না।’’

এলাকার শ্রমিক সংগঠনগুলির নেতারাও ঘটনায় ক্ষুব্ধ। এনইউপিডব্লুর ডামডিম বাগানের ইউনিটের নেতা ইস্রায়েল সামাদ বলেন, ‘‘ছাগল চুরি খুব বেড়ে গিয়েছে বাগানে। কিন্তু সেই সন্দেহে বেদম মার দিয়ে দু’জনকে মেরে ফেলা হবে, এটা ভয়ঙ্কর কথা। মারধর হচ্ছে শুনেই ছুটে আসি। কিন্তু তত ক্ষণে সব শেষ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন