দক্ষিণের কড়চা

ষষ্ঠীর বাছাটির চর্বচোষ্যলেহ্যপেয়-র দিন এল৷ গরমের পারদ যখন তুঙ্গে তখনই জামাইদের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে খাওয়ার দিন আসছে সামনে রবিবার৷ বাজারে তার ছায়া পড়েছে ইতিমধ্যেই৷ কিন্তু কেন এই ষষ্ঠী? রীতিমতো নারীবাদী একটা ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায়, ‘জামাতা পুত্রতুল্য হউক, পুত্রের স্থানীয় হউক এবং স্বয়ং বহু পুত্র-কন্যার জনক হইয়া আমার মাতৃত্বের ধারা অক্ষুণ্ণ রাখুক৷ পুত্র যেমন পিতার আত্মজ, কন্যা তেমনি জননীর আত্মজা৷ পুত্রের সাহায্যে পিতার পিতৃত্বের ধারা অক্ষুণ্ণ থাকে, কন্যার সাহায্যে মাতার জননীত্বের ধারা অক্ষুণ্ণ থাকে৷’

Advertisement
শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৫ ০০:০১
Share:

অনুপ রায়ের আঁকা কার্টুন।

পেটে পেটে কথা
জামাই জিন্দাবাদ

Advertisement

ষষ্ঠীর বাছাটির চর্বচোষ্যলেহ্যপেয়-র দিন এল৷
গরমের পারদ যখন তুঙ্গে তখনই জামাইদের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে খাওয়ার দিন আসছে সামনে রবিবার৷ বাজারে তার ছায়া পড়েছে ইতিমধ্যেই৷ কিন্তু কেন এই ষষ্ঠী?
রীতিমতো নারীবাদী একটা ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায়, ‘জামাতা পুত্রতুল্য হউক, পুত্রের স্থানীয় হউক এবং স্বয়ং বহু পুত্র-কন্যার জনক হইয়া আমার মাতৃত্বের ধারা অক্ষুণ্ণ রাখুক৷ পুত্র যেমন পিতার আত্মজ, কন্যা তেমনি জননীর আত্মজা৷ পুত্রের সাহায্যে পিতার পিতৃত্বের ধারা অক্ষুণ্ণ থাকে, কন্যার সাহায্যে মাতার জননীত্বের ধারা অক্ষুণ্ণ থাকে৷’ অর্থাৎ মাতৃতান্ত্রিক সভ্যতার এক ক্ষীণ ধারা এই জামাইষষ্ঠীর পালনে৷
বৈদিক সমাজ থেকেই নাকি জামাইষষ্ঠী পালিত হয়ে আসছে৷ প্রতি বছর জ্যৈষ্ঠ মাসের ষষ্ঠী তিথিতে প্রথম প্রহরে ষষ্ঠীদেবীর পুজোর আয়োজন করা হয় জামাইয়ের কল্যাণ কামনায়৷ দেবী ষষ্ঠীর প্রতিমা কিংবা আঁকা ছবিকে পূজা নিবেদন করা হয়। কেউ কেউ ঘট স্থাপন করেও পূজা করেন। ষষ্ঠীদেবী দ্বিভুজা, দুনয়না, গৌরবর্ণা, দিব্যবসনা, সর্বসুলক্ষণা ও জগদ্ধাত্রী শুভপ্রদা। তিনি মাতৃত্বের প্রতীক। এর পিছনে একটা গল্পও আছে৷

এক গৃহবধূ নাকি শ্বশুরবাড়িতে নিজে মাছ চুরি করে খেয়ে বারবার বিড়ালের ওপর দোষ দিয়ে আসছিল। এক দিন তার সন্তান হারিয়ে গেলে পাপের ফল ভেবে সন্তান ফিরে পাওয়ার জন্য সে বনে গিয়ে দেবী ষষ্ঠীর আরাধনা শুরু করে। গৃহবধূর আরাধনায় দেবী সন্তুষ্ট হলে সে বনে সন্তান ফিরে পায়। এ দিকে মাছ চুরি করে খাওয়ার অপরাধে গৃহবধূর শ্বশুর-শাশুড়ি তাকে পিতৃগৃহে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। তখন মেয়েকে দেখতে মা-বাবা এক বার ষষ্ঠীপূজার দিন শ্বশুরবাড়িতে আসার জন্য জামাইকে সাদর নিমন্ত্রণ জানান। সেই থেকে পাড়াপড়শির মধ্যেও নাকি এই প্রথা ছড়িয়ে পড়ে৷

Advertisement

গল্প কিংবা লোকায়ত জীবনের ইতিহাস যা-ই থাকুক না কেন জামাইষষ্ঠী সেই বটতলার যুগ থেকেই পাঁজি আর নানা নকশায় বিবিধ গল্পকথার জন্ম দিয়েছে৷ তা ছাড়া, বাংলা সিনেমার মুখে প্রথম কথা ফুটেছে ‘জামাইষষ্ঠী’ দিয়েই৷ ম্যাডান থিয়েটার্সের প্রযোজনায় অমর চৌধুরীর পরিচালনায় ‘জামাইষষ্ঠী’-ই প্রথম সবাক বাংলা ছবি৷

ইতি কার্টুন

জওহরলাল নেহরুর কোট, ইন্দিরা গাঁধীর নাক ও চুলের রেখা থেকে চার্চিলের সিগার কিংবা চেম্বারলিনের ছাতা— কার্টুনের কল্যাণে এ সবই আলাদা মাত্রা পেয়েছে। সংবাদপত্র বা সাময়িকীতে কার্টুনের বরাবর একটা গুরুত্বপূর্ণ জায়গা রয়েছে। সাদা-কালো রেখায় এক একটি ব্যক্তিত্ব অনন্য হয়ে উঠেছেন। সম্প্রতি কার্টুন দুনিয়ায় ঘটে গিয়েছে বিষাদে মাখা দু’টি ঘটনা। শার্লি এবদো কার্টুন পত্রিকার দফতরে ঢুকে বারো জন শিল্পীকে গুলি করে খুন করেছে মৌলবাদীরা। আর প্রয়াত হয়েছেন প্রবাদপ্রতিম কার্টুনিস্ট আর কে লক্ষ্মণ। এই দুই ঘটনার স্মরণেই মেদিনীপুর থেকে প্রকাশিত সাময়িকী ‘চিত্রম’-এর সাম্প্রতিক সংখ্যার বিষয় কার্টুন। এ দেশে কার্টুনের আদি শিল্পী গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে লক্ষ্মণ— খ্যাতনামা কার্টুন শিল্পীদের জীবন ও কাজের বিভিন্ন দিক নিয়ে বেশ কয়েকটি লেখা রয়েছে এই সংখ্যায়। সঙ্গে দেশে তথা বিশ্বে সাড়া জাগানো কিছু কার্টুনও ছাপা হয়েছে। পাবলো পিকাসোর কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হওয়ার মতো নানা তথ্যও বেরিয়ে এসেছে সেই সব কার্টুনে। ইনস্টলেশন আর্ট বা ল্যান্ড আর্ট নিয়ে তথ্যগুলিও যথেষ্ট আকর্ষণীয়। চিত্রম, যাকে সম্পাদক মানব বন্দ্যোপাধ্যায় ‘ছবির কাগজ’ হিসেবে পরিচিতি দিতে চান, তা নয় নয় করে তা ২৯ পেরোলো।

নাটকের পরব

মধ্যমগ্রামে থিয়েটারের যে সমৃদ্ধ সংস্কৃতি, বেশ কিছু দিন ধরে তার অন্যতম অঙ্গ ‘অল্টারনেটিভ লিভিং থিয়েটার’। ১৯৭৭-এ প্রবীর গুহের হাত ধরে সূচনা। সমাজে পিছিয়ে পড়া মানুষের বেঁচে থাকার সংগ্রামের কথা তুলে ধরাই মুখ্য উদ্দেশ্য। সেই ভাবনা থেকেই সাম্প্রদায়িকতা, রাজনৈতিক ভণ্ডামির বিরুদ্ধে বারবার দাঁড়িয়েছে এই দল। মধ্যমগ্রামে তাদের নাট্যচর্চার আখড়ায় নাট্যপ্রেমী যুবক-যুবতীদের ভিড় লেগেই থাকে। দর্শকদের নানা নাটকের স্বাদ দিতে গত কয়েক বছর ধরে তারা ‘জাতীয় নাট্যোৎসব’-এর আয়োজন করছে। এ বারে মধ্যমগ্রামে নজরুল শতবার্ষিকী সদনে চার দিনের এই উৎসবের সূচনা ২৩ মে। জম্মু, অসমের পাশাপাশি ঢাকা ও বরিশাল থেকেও নাটকের দল আসছে। বরিশালের ‘শব্দাবলী থিয়েটার’ নিয়ে এসেছে ‘অতঃপর হাট্টিমাটিম টিম’। ঢাকার ‘দ্যাশ বাংলা’ উপস্থাপনা করবে ‘সারস ডানায় পরান পাখি’। জম্মুর ‘রঙ্গলোক’-এর নিবেদন ‘মা মুঝে টেগোর বানা দে’। থাকছে অল্টারনেটিভ লিভিং থিয়েটার’-এর নতুন প্রযোজনা ‘রেড অ্যালার্ট’-ও। ২৬ মে শেষ দিন। সহযোগিতায় রয়েছে কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রক।

মুসলিমের ভোট

পশ্চিমবঙ্গে মুসলিমদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা, তাঁদের অধিকার ও অপ্রাপ্তি নিয়ে পনেরোটি আলোচনার সংকলন কংগ্রেস ও বাম শাসনে মুসলিম ভোটব্যাঙ্ক (উদার আকাশ)। তবে এ বিষয়ে যাঁদের সম্যক ধারণা রয়েছে, সেই সব পরিচিত নামের বদলে অনামীরাই কলম ধরেছেন। রয়েছেন এমন অনেকে, যাঁদের লেখায় তথ্য ও পরিসংখ্যানের ঘাটতি চোখ এড়াচ্ছে না। তবে, এ কথাও ঠিক যে, গত চার দশকে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে মুসলিম ভোটব্যাঙ্কের গুরুত্ব বিবেচনা করে এই ধরনের উদ্যোগ প্রশংসনীয়। সাড়ে তিন দশকের বাম শাসনের অবসান হয় যে বছর, বইটির প্রকাশকাল সেই ২০১১ সালে। গত সাড়ে চার বছরের তৃণমূল শাসনে মুসলিম ভোটব্যাঙ্ক নিয়ে টানাপড়েনের উল্লেখ তাই সংকলনে অনুপস্থিত। এই ধরনের সংকলনের সম্পাদনায় যতটা যত্নশীল হওয়া উচিত, তার নমুনাও চোখে পড়ে না।

বসন্ত

১৯২৩-এ রবীন্দ্রনাথের ‘বসন্ত’ প্রকাশিত হয়েছিল৷ গীতিনাট্যটি কবি উৎসর্গ করেছিলেন নজরুল ইসলামকে৷ তার সঙ্গে জড়িয়ে আছে ইতিহাসও৷ নজরুল তখন জেলে৷ রবীন্দ্রনাথের উৎসর্গীকৃত ‘বসন্ত’ নজরুলকে জেলে পৌঁছে দেন তাঁর প্রিয় বন্ধু পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায়৷ ১৪ এপ্রিল ১৯২৩ নজরুলকে আলিপুর সেন্ট্রাল জেল থেকে বহরমপুর জেলে পাঠানোর নাম করে সাধারণ কয়েদির মতো হুগলি জেলে পাঠানো হয়৷ ‘বসন্ত’ পরে বেশ কয়েক বার শান্তিনিকেতনী ঘরানায় অভিনীত হয়েছে৷ সদ্য-প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতী রবীন্দ্রসংগীত গবেষণা কেন্দ্র-এর পরিচালনায় শান্তিনিকেতনের শিল্পীদের অভিনয়ে ও গানে গাঁথা সেই 'বসন্ত' এ বার যাচ্ছে কলকাতায়৷ ২৩ মে রবীন্দ্রসদনে সন্ধে সওয়া ৬টায় এবং ২৪ মে রবীন্দ্রতীর্থে তার অভিনয়৷

রানিবানের সিন্ডারেলা

রাতারাতি ‘সেলিব্রিটি’ হয়ে উঠেছে চার বছরের খুদে মেয়ে। দার্জিলিঙের গ্রেস প্রধানের পায়ে জুতো পরিয়ে দিয়েছেন সত্যি-রাজপুত্র, ইংল্যান্ডের রাজকুমার প্রিন্স হ্যারি! ঘটনাটা ঘটেছে অবশ্য সুদূর নিউজিল্যান্ডে। যেখানে গত বছর তিনেক ধরে রয়েছেন গ্রেসের বাবা-মা, দার্জিলিঙের কুণাল প্রধান আর নেপালের অর্পণা থাপা। স্থানীয় একটি অসরকারি সংস্থার আমন্ত্রণে অকল্যান্ডের গভর্নর হাউসে প্রিন্স হ্যারির সঙ্গে দেখা করতে যান অর্পণা, গ্রেসকে নিয়ে। অনেকের সঙ্গে কথা বলার পর অর্পণার সঙ্গেও তাঁর সমস্যা নিয়ে কথা বলার পর গ্রেসের সঙ্গে কথা বলেন হ্যারি। লজ্জা পেয়ে মায়ের পিছনে সরে যেতে গিয়ে পা থেকে একপাটি জুতো সরে যায় গ্রেসের। হ্যারি নিজেই সেটা পরিয়ে দেন চার বছরের গ্রেসকে। অর্পণা নিউজিল্যান্ড থেকে ফোনে বলেন, ‘‘আমরা এ নিয়ে অত কিছু ভাবিনি। তবে মিডিয়ায় মেয়েকে ‘সিন্ডারেলা’ বলার পরেই সকলে ফোন করতে শুরু করেছে।’’ গ্রেসের ঠাকুরদা বিজয় প্রধানের অবশ্য গর্ব ধরে না। দার্জিলিং থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে রানিবানের বাড়িতে বসে বললেন, ‘‘রোজ রোজ তো আর রাজপুত্রের দেখা মেলে না। তা-ও এমন রাজপুত্র যে নাতনির পায়ে জুতো পরিয়ে দেয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন