বৃদ্ধাকে ধর্ষণ করে নারকীয় অত্যাচার, ফুঁসছে সন্দেশখালির গ্রাম

সন্দেশখালির গ্রামের বছর বাষট্টির বৃদ্ধাকে গুরুতর জখম অবস্থায় নিয়ে সকালের দিকে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। মাসখানেক যমে-মানুষে লড়াই চালানোর পরে সোমবার তিনি মারা যান কলকাতার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

সন্দেশখালি ও কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০১৭ ০৯:০০
Share:

দ্বন্দ্ব: সন্দেশখালির মৃতার পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে বচসায় জড়ালেন বিজেপি নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়। মঙ্গলবার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।

ধর্ষণ করে ক্ষান্ত দেয়নি হামলাকারী। বৃদ্ধার নিম্নাঙ্গে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় মদের বোতল, লোহার রড, বাবলা কাঁটা। রক্তাক্ত অবস্থায় রাতভর পড়েছিলেন খোলা ‌আকাশের নীচে।

Advertisement

সন্দেশখালির গ্রামের বছর বাষট্টির বৃদ্ধাকে গুরুতর জখম অবস্থায় নিয়ে সকালের দিকে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। মাসখানেক যমে-মানুষে লড়াই চালানোর পরে সোমবার তিনি মারা যান কলকাতার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।

মঙ্গলবার বিকেলে হাসপাতালের মর্গ চত্বরে ভিড় জমিয়েছিলেন বহু মানুষ। ফুলের মালা হাতে অপেক্ষা করছিলেন গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির সদস্যরা। বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ সেখানে দলের কর্মীদের নিয়ে পৌঁছন বিজেপি নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়। লকেটের দাবি, মৃতার পরিবারের লোকের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তাঁদের আটকে দেয় পুলিশ। শুরু হয় ধস্তাধস্তি। লাঠি, দড়ি দিয়ে ঘিরে ধরা হয় তাঁদের। নেত্রীর অভিযোগ, তাঁদের দুই মহিলা কর্মীকে মারধর করা হয়েছে।

Advertisement

এক দিকে বিজেপি, অন্য দিকে মহিলা সমিতির ভিড়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে আসেন কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (ইএসডি) দেবস্মিতা দাস। মৃতার পরিবারকেও দেহ পেতে নাস্তানাবুদ হতে হয়েছে। সন্ধে ৬টার পরে মূল গেটে ব্যারিকেড করে দেহ বের করার ব্যবস্থা করে পুলিশ।

নির্ভয়ার ছায়া সন্দেশখালিতে। কী বলছেন মৃতার পরিবার?

অপরাধীদের চরম শাস্তির দাবিতে এ দিন সন্দেশখালির গ্রামে পথ অবরোধ করেন স্থানীয় মহিলারা। ইতিমধ্যেই ধরা পড়েছে মূল অভিযুক্ত ভোলা মাইতি ওরফে রাজেশ্বর। বৃদ্ধার সঙ্গে তাঁর পরিচয় দীর্ঘ দিনের। পাশাপাশি বাড়ি। গ্রামের মানুষ জানালেন, বৃদ্ধাকে ‘দিদি’ বলে ডাকত ভোলা। স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, মদে ঘোরে হলেও একা এমন ভয়ানক কাণ্ড ঘটায়নি বছর পঞ্চাশের ওই ব্যক্তি। নির্ঘাত আরও কেউ ছিল সঙ্গে।

রাজ্য পুলিশের এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) অনুজ শর্মা মঙ্গলবার বলেন, ‘‘পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে। ঘটনাটিকে খুবই গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

কিন্তু ছাপোষা এক বৃদ্ধার উপরে কেন এমন নৃশংস আক্রমণ?

ধর্ষণ কাণ্ডে পুলিশ কী বলছে জেনে নিন

সন্দেশখালি থানা থেকে সামান্য কিছুটা দূরে মেছোভেড়ির পাশে থাকতেন বিধবা মহিলা। তাঁর বড় ছেলেও থাকেন সেখানে। অ্যাসবেস্টস, টিন, চাঁচের বেড়ার নড়বড়ে ঘর। কাছেই একটি হোটেল চালাতেন মহিলা।

ঘটনাটি গত ৪ জুলাইয়ের। রাত ৮টা নাগাদ হোটেল থেকে বাড়ি ফিরছিলেন বৃদ্ধা। পথে দেখেন, ভোলা-সহ চার-পাঁচজন রাস্তার পাশে মদ খাচ্ছে। প্রতিবাদ করেছিলেন বৃদ্ধা। পুলিশ জানতে পেরেছে, এতেই চটে যায় মদ্যপেরা। ‘‘তোর বাপের টাকায় মদ খাচ্ছি?’’— বলে শুরু হয় গালিগালাজ।

কথা বাড়াননি বৃদ্ধা। কিন্তু তাঁর পিছু নেয় দুষ্কৃতীরা। বৃদ্ধার বড় ছেলের কথায়, ‘‘ঘরে ঢুকে মা খেতে বসেছিলেন। দরজা ঠেলে ঢুকে পড়ে ভোলা। মা ওকে চিনতে পারেন। ধস্তাধস্তি বাধে। কিন্তু একটা সময়ে আর এঁটে উঠতে পারেননি মা।’’

হাসপাতালে বৃদ্ধা বলে গিয়েছেন, ভোলার মতলব খারাপ বুঝে এলোপাথাড়ি মারতে শুরু করেন তিনি। কিন্তু গায়ের জোরে পেরে ওঠেননি। এক সময়ে কাবু হয়ে পড়েন। গামছা দিয়ে মুখ বেঁধে তাঁকে ঘর থেকে টেনে বের করে ভোলা। ঝোপের আড়ালে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে। জ্ঞান হারান তিনি। আর কিছু মনে নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন