সংবাদমাধ্যমের আবেদনে কিছু ক্ষণের জন্য মুখ থেকে মাস্ক নামালেন পূর্ণম সাউ। —নিজস্ব চিত্র।
পরনে টিশার্ট, জিন্স। গলায় রজনীগন্ধা-গোলাপ এবং গাঁদার জোড়া মালা। মুখে মাস্ক। তাঁকে ঘিরে হাওড়া স্টেশনে উচ্ছ্বসিত মানুষের ঢল দেখে কিছুটা যেন অপ্রস্তুত তিনি। ভিড় সরিয়ে এক প্রৌঢ় এগিয়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলেন পূর্ণম সাউকে। বাবা-ছেলে, দু’জনের চোখেই জল। স্টেশন থেকে বেরিয়ে যখন গাড়িতে উঠে বসলেন পূর্ণম, তখনও জওয়ানকে ঘিরে একদল মানুষ। উঠল ‘ভারতমাতা কি জয়’ ধ্বনি। সকলকে নমস্কার জানালেন তিনি। তবে সেখানে কোনও কথা বলেননি। গাড়ি ছুটল রিষড়ার দিকে। বিএসএফ জওয়ানকে স্বাগত জানাতে ‘ওয়েলকাম’ (স্বাগত) লেখা গেট বাঁধা হয়েছিল হুগলির রিষড়া বাগখাল এলাকায়। হুডখোলা একটি গাড়ি সাজানো হয় পাক সেনার হাতে তিন সপ্তাহ বন্দি থাকার পর দেশে ফেরা পূর্ণমের জন্য। ব্যান্ড পার্টি নিয়ে বাগখাল থেকে র্যালি করে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। আলো দিয়ে সাজানো হয়েছে পূর্ণমদের বাসভবন ‘সাউ সদন’। আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীদের ভিড়ে উৎসবের মেজাজ বিএসএফ জওয়ানের বাড়িতে। রাঁধুনি ডেকে চলছে রান্নাবান্না। তবে আজ সমস্ত পদ নিরামিষ হবে। জওয়ানের জন্য আনা হয়েছে কেক। তার পর থাকছে তাঁর প্রিয় লুচি-তরকারি।
গত ২৩ এপ্রিল (পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হানার পরদিন) পঞ্জাবের পঠানকোটে কর্মরত অবস্থায় ভুল করে পাকিস্তানে ঢুকে গাছের তলায় বিশ্রাম নিচ্ছিলেন পূর্ণম। তখনই পাক রেঞ্জার্স তাঁকে ধরে। সীমান্তে এমন ঘটলে দু’দেশের সীমান্তরক্ষীদের মধ্যে ‘ফ্ল্যাগ মিটিং’-এর পরে সংশ্লিষ্ট জওয়ানকে মুক্তি দেওয়াই দস্তুর। কিন্তু পূর্ণমকে তখন ছাড়েনি পাকিস্তান। শেষ পর্যন্ত গত বুধবার পাক সেনা মুক্তি দেয় তাঁকে। অটারী-ওয়াঘা সীমান্ত দিয়ে ভারতে ফেরেন তিনি। ভিডিয়ো কলে কথা হয় স্ত্রীর সঙ্গে। কর্মক্ষেত্রে যোগ দিলেও তখনই বাড়ি ফেরার অনুমতি পাননি পূর্ণম। তাঁর স্বাস্থ্যপরীক্ষা হয়। বেশ কিছু সরকারি কাজকর্ম ছিল। অবশেষে বাড়ি ফেরার ছাড়পত্র পান ওই বিএসএফ জওয়ান।
হাওড়া থেকে হুগলি যাওয়ার পথে লিলুয়ায় একটি দোকানের সামনে দাঁড়িয়েছিল পূর্ণমদের গাড়ি। সেখানে মিষ্টিমুখ করার পরে বিএসএফ কনস্টেবল বলেন, ‘‘আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ। সকলের আশীর্বাদে দ্বিতীয় জন্ম হল আমার। পরিবারের সকলকে দেখতে পেলাম।’’ বাড়ি ফেরার আগে পূর্ণম আরও বলেন, ‘‘আমাদের জওয়ানদের ভয় পেতে নেই। আমাদের দিনরাত এক করে সীমান্ত পাহারা দিতে হয়। আমরা ভয় পেলে দেশবাসীর কী হবে! আমি ভয় পাইনি। তবে বাড়ির জন্য চিন্তা হয়েছিল।’’
বাড়িতে পূর্ণমের স্ত্রী বলেন, ‘‘এত দিন পরে ও বাড়ি ফিরবে, খুব ভাল লাগছে। কিন্তু ওর কাছে ফোন না থাকায় কথা বলতে পারিনি। ঠিক কখন ফিরছে, জানি না। দশ দিন আগে আমরা জেনে গিয়েছিলাম ভারতে ফিরেছে। আজ বাড়ি ফিরলে ওর প্রিয় লুচি-তরকারি, দই-মিষ্টির আয়োজন হবে। কেক কাটা হবে। আজ একাদশী, তাই কোনও আমিষ রান্না হবে না বাড়িতে। মাংস হবে রবিবার।’’