শিল্পের জন্য পথ হাঁটা শুরু আজ, সিঙ্গুরে বুদ্ধ

টাটারা সিঙ্গুর ছেড়ে চলে গিয়েছে সাত বছর আগে। তার পরেও সিঙ্গুর থেকেই শিল্পায়নের ডাক দিয়ে বামেদের দ্বিতীয় দফার জাঠা শুরু হচ্ছে আজ, শনিবার। তার ২৪ ঘণ্টা আগেই শিল্প নিয়ে সুর চড়িয়ে রাখল সিপিএম।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০১৬ ০৩:৫০
Share:

টাটারা সিঙ্গুর ছেড়ে চলে গিয়েছে সাত বছর আগে। তার পরেও সিঙ্গুর থেকেই শিল্পায়নের ডাক দিয়ে বামেদের দ্বিতীয় দফার জাঠা শুরু হচ্ছে আজ, শনিবার। তার ২৪ ঘণ্টা আগেই শিল্প নিয়ে সুর চড়িয়ে রাখল সিপিএম।

Advertisement

সিঙ্গুর থেকে শালবনি পদযাত্রার আজ আনুষ্ঠানিক সূচনা হওয়ার কথা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের হাত ধরে। টাটা-বিদায়ের প্রায় ৮ বছর আগে শেষ বার সিঙ্গুর গিয়েছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। সম্প্রতি সিপিএমের ব্রিগেড সমাবেশেই স্পষ্ট ভাষায় তিনি জানিয়েছিলেন, তৃণমূলের সাড়ে চার বছরে রাজ্যে শিল্পায়ন হয়নি। সিঙ্গুরের জমিতে কারখানা হয়নি, কৃষকেরাও জমি ফেরত পাননি। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র ব্রিগেড থেকেই জানিয়ে দিয়েছেন, বামেরা ক্ষমতায় ফিরলে সিঙ্গুরে ফের কারখানা করার চেষ্টা করবে। এই পরিস্থিতিতে ‘শিল্প চাই, কাজ চাই’ স্লোগান সামনে রেখে সিঙ্গুর থেকে শালবনি পদযাত্রা শুরু করছে বামপন্থী গণসংগঠনগুলির যৌথ মঞ্চ বিপিএমও।

বেহাল শিল্পের প্রতিবাদ ও কর্মসংস্থানের দাবিতে পদযাত্রা শুরুর আগের দিন সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিমের অভিযোগ, ‘‘সিঙ্গুর থেকে টাটারা চলে যাওয়ার পরে আজও যে রাজ্যে শিল্পের পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি, সদ্য শিল্প-সম্মেলনের পরেই শিল্প-সচিবের বিদায়ে তা স্পষ্ট!’’ শিল্প সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী যে আড়াই লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগের কথা শুনিয়েছেন, তার থেকে বড় ‘মিথ্যাচার’ আর কিছু হয় না বলে অভিযোগ করে সেলিমের বক্তব্য, ‘‘মানুষ এই ধাপ্পা বুঝতে পারছেন! আরও বেশি করে এ কথা মানুষের সামনে তুলে ধরতে হবে।’’

Advertisement

বিধানসভা ভোটের আগে এই পদযাত্রা হুগলি, পশ্চিম মেদিনীপুর এবং অন্য জাঠা বাঁকুড়া, পূর্ব মেদিনীপুর, বর্ধমানের এমন সব জায়গা দিয়ে যাবে, যেখানে গত কয়েক বছরে বামেরা মিছিল করতে পারেনি। অর্থাৎ সংগঠনকে চাঙ্গা করা এই যাত্রার অন্যতম লক্ষ্য। প্রথম পর্বের জাঠা বিভিন্ন জেলায় আক্রান্ত হয়েছিল। গত এক মাস ধরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূলের বিভিন্ন বৈঠকে বারবার বার্তা দিয়েছেন, বামেদের জাঠাকে যেন আক্রমণ না করা হয়। তার পরেও কেশপুরে সিপিএমের মিছিলে হামলা হয়েছে। আলিমুদ্দিনে এ দিন তাই সেলিম বলেন, ‘‘নেত্রীর কথা অনেক সময়েই দলের কর্মী ও মস্তান বাহিনী শুনছে না। আমরা পুলিশ-প্রশাসনকে বলেই এই জাঠা করছি। এর পরেও যদি আক্রমণ হয়, তার দায় পুলিশ-প্রশাসনকেই নিতে হবে।’’ আর রাজ্য সম্পাদক সূর্যবাবুর টুইট-বার্তা, ‘‘সব রকমের ভয়, হুমকি ও হামলা উপেক্ষা করেই সিঙ্গুর থেকে মানুষ শালবনির দিকে হাঁটবেন!’’

সিঙ্গুরের সানাপাড়ায় দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের ধারে বুদ্ধবাবুদের কর্মসূচি নিয়ে স্থানীয় বাম কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে তৎপরতাও দেখা যাচ্ছে। সভার প্রস্তুতি তদারকির পাশাপাশি এ দিন দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন হুগলি জেলা সিপিএম সম্পাদক সুদর্শন রায়চৌধুরী। সিঙ্গুর থানার ওসি অমিত মিত্রের সঙ্গেও কথা হয়। পরে সুদর্শনবাবু বলেন, ‘‘শিল্পায়নের দাবিতে সভা এবং পদযাত্রায় বহু মানুষ সামিল হবেন। যা হয়ে গিয়েছে, হয়ে গিয়েছে! নতুন করে শুরু করতে হবে আমাদের।’’ বিপিএমও-র আহ্বায়ক শ্যামল চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘আগের জাঠাগুলিতে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, আক্রমণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর ডাক ছিল। এ বার আমরা শিল্পায়নের ডাকও দিচ্ছি।’’ পদযাত্রা যেখানে শেষ হবে, সেই শালবনিতে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধবাবু জিন্দলদের ইস্পাত কারখানার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে ফেরার পরে কনভয়ের পথে মাইন বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল মাওবাদীরা। আজও মমতা কেন সেই ঘটনার নিন্দা করেননি, প্রশ্ন তুলেছেন সেলিম।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন