জোরকদমে চলছে মাটি উৎসবের প্রস্তুতি। সোমবার উদিত সিংহের তোলা ছবি।
সকাল থেকেই মঞ্চের ফাঁকফোকর, মেলার মাঠের ঘাস লাগানো, ফ্লেক্স-হোর্ডিং খুঁটিয়ে দেখছিলেন তিনি। আচমকা চোখ পড়ল একপাশে রাখা একটি ফ্লেক্সে। মেজাজ বিগড়ে গেল মুখ্যমন্ত্রীর কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদারের। চাষিদের জন্য ইংরাজিতে লেখা ফ্লেক্স! তড়িঘড়ি বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় চাষিদের জন্য কী কী করতে পারে ফ্লেক্সের সেই বয়ানের বাংলা তর্জমা করতে পাঠালেন তিনি।
এখানেই শেষ নয়। মূল মঞ্চ-সহ তিনটি স্থায়ী মঞ্চকে ঘাস দিয়ে সাজানো, বোলপুর থেকে সড়ক পথে মুখ্যমন্ত্রীর গাড়ি এসে যেখানে দাঁড়াবে সেখানকার ঘাসের হলুদ হয়ে যাওয়া, কিংবা মঞ্চের পিছনে খাদ্য দফতরের গুদামের ভিতর ম্যারাপ অগোছালো থাকা— কিছুই নজর এড়াল না তাঁর।
সোমবার সাধনপুরের কৃষি খামারে গিয়ে দেখা যায় এমনই ব্যস্ততা চলছে প্রশাসনের কর্তাদের। অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) প্রণব বিশ্বাসের সঙ্গে ২৫ একর মাঠের এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্ত চষে বেরাচ্ছেন কর্তারা। কয়েক ঘণ্টা পরে এখানেই শুরু হবে চতুর্থতম মাটি উৎসব। দুপুর ২টো নাগাদ উৎসবের সূচনা করবেন মুখ্যমন্ত্রীর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু উৎসবের মাঠ নয়, শহরও যেন ‘মাটিময়’। এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত মাটি উৎসবের ফ্লেক্স আর হোর্ডিংয়ে ছেয়ে গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘মাটি’ কবিতার প্রতিটি ছত্র তুলে ফ্লেক্স তৈরি করা হয়েছে।
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ৩০টি স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলিয়ে মোট ১০৬টি স্টল হয়েছে মেলায়। এক দিকে, চাষের নতুন নতুন যন্ত্রের প্রদর্শন করা হয়েছে, আবার ঢেঁকিও থাকছে স্টলে। ব্যারাকপুরের কেন্দ্রীয় পাট ও তন্তু গবেষণা কেন্দ্র থেকে ইন্ডিয়ান চেম্বার অফ কমার্সের স্টল থাকছে। এ ছাড়াও বিকল্প চাষের প্রচার করা হয়েছে। কী ভাবে কম জলে চাষ করা সম্ভব হদিস থাকছে তারও। মডেল গ্রামও তৈরি করা হয়েছে। জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন বলেন, “আগে পানাগড়ে উৎসব হতো। এ বছর বর্ধমানে স্থায়ী পরিকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। পুরোটাই কৃষিকেন্দ্রিক। সরকারের বিভিন্ন দফতরের স্টলও রয়েছে।” জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন মুখ্যমন্ত্রী ৭৪৬ কোটি টাকার ৬৭টি প্রকল্পের শিলান্যাস এবং ৩৩টি প্রকল্পের ৪৮ কোটি টাকার উদ্বোধন করবেন। সাত দিনের এই মেলা শেষ হবে সোমবার। কাল, বুধবার থেকে প্রতিদিন ১২টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হবে। সেই আলোচনায় যোগ দেওয়ার জন্য এবং বিভিন্ন স্টল থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য কৃষি আধিকারিকদের বিভিন্ন ব্লক থেকে চাষি নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন জেলা কৃষি দফতর (প্রশাসন)। সেখানকার এক আধিকারিক বলেন, “পানাগড় মাটি মেলাতেও কৃষক নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বিভিন্ন আলোচনাসভায়। আগের তিন বার মূলত দুর্গাপুর-আসানসোল, গলসি, আউশগ্রাম, কাঁকসা ব্লকের চাষিরা গিয়েছিলেন।”
মুখ্যমন্ত্রী কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার জানিয়েছেন, এক ছাদের তলায় অনেক কিছু রয়েছে সাধনপুর কৃষি খামারে। সে জন্য এখানেই স্থায়ী পরিকাঠামো গড়ে মাটি উৎসবের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “চাষিদের প্রয়োজনমত এখানে পরিকাঠামোগত আরও উন্নয়ন করা হবে।” জানা গিয়েছে, মাটি উৎসবের স্থায়ী পরিকাঠামো তৈরি করতে সরকারের প্রায় সাড়ে ৬ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। কৃষি দফতর সূত্রে জানা যায়, মেলার মাঠে ফামার্স হাউস তৈরি করা হবে, পুকুর সংস্কার করে মাছ চাষ ও পদ্ম পাতার চাষ করা হবে। রাজ্যের কৃষি দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “দক্ষিণবঙ্গে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ কৃষি বিকাশ কেন্দ্র গড়ে তুলতে চাইছি।” বনজঙ্গলে ভর্তি জায়গাকে পরিষ্কার করে রাজারহাট থেকে ঘাস নিয়ে এসে নতুন করে মাঠ তৈরি করা হয়। পুকুরপাড়ের চারদিকে ফলের গাছ লাগানো হবে। প্রয়োজনে বিনোদনের ব্যবস্থা করে বেসরকারি সংস্থার হাতে এই মাঠ পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হতে বলে ওই আধিকারিক ইঙ্গিত দিয়েছেন।