বাস-ট্যাঙ্কার সংঘর্ষে মৃত সাত

ফরাক্কার খয়াকান্দি এলাকায় এ দিনের ওই দুর্ঘটনায় বাস ও ট্যাঙ্কারের চালক-সহ মারা গিয়েছেন ৭ জন। বছর বারোর এক শিশু-সহ হাসপাতালে ভর্তি ১২ জন।

Advertisement

বিমান হাজরা

ফরাক্কা শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৩:৫৬
Share:

চিঁড়েচ্যাপ্টা: লেন ভাঙাতেই বিপত্তি। মুর্শিদাবাদের ফরাক্কায় মুখোমুখি সংঘর্ষ ডিজেল ট্যাঙ্কার ও যাত্রিবাহী বাসের। শনিবার। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়

জাতীয় সড়কে নির্দিষ্ট লেন ভাঙলে পরিণতি যে ভয়ঙ্কর হতে পারে, সে ব্যাপারে বার বার সচেতন করা সত্ত্বেও সাড়া মিলছে না, শনিবার ভোরে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে একটি ডিজেল ট্যাঙ্কার ও যাত্রিবাহী বাসের মুখোমুখি সঙ্ঘর্ষ সে কথা ফের প্রমাণ দিল।

Advertisement

ফরাক্কার খয়াকান্দি এলাকায় এ দিনের ওই দুর্ঘটনায় বাস ও ট্যাঙ্কারের চালক-সহ মারা গিয়েছেন ৭ জন। বছর বারোর এক শিশু-সহ হাসপাতালে ভর্তি ১২ জন। আহতদের মধ্যে চার জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাঁদের বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।

এ দিন ভোর ৫টা নাগাদ খয়রাকান্দির কাছে লেন ভেঙে শিলিগুড়ির দিকে এগোচ্ছিল প্রায় ২৪ হাজার লিটার ডিজেল ভর্তি ওই ট্যাঙ্কারটি। উল্টো দিক থেকে সেই সময়ে ছুটে আসছিল শিলিগুড়ি-বহরমপুর রুটের একটি বেসরকারি বাস। স্থানীয় গ্রামবাসীরা জানান, তখনও আলো ফোটেনি, প্রবল শব্দে ঘুম ভেঙে যায় তাঁদের।

Advertisement

দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছে ট্যাঙ্কারটি। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়।

দুর্ঘটনাস্থলের হাত কয়েক দূরেই সিভিক কর্মী মহম্মদ সামাউল শেখের বাড়ি। তিনি বলছেন, “টায়ার ফাটার মতো তীব্র আওয়াজ। শব্দ শুনে ঘুম ভেঙে যায়। বাড়ির বাইরে মুখ বাড়াতেই দেখি, দুমড়ে মুচড়ে রাস্তার উপর থমকে রয়েছে বাসটি। ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছেন যাত্রীরা। ধাক্কার অভিঘাতে ট্যাঙ্কারটি ডিভাইডারের উপরে উঠে গিয়েছে।’’ কিছু ক্ষণের মধ্যেই আশপাশের গ্রাম থেকে ছুটে আসেন বাসিন্দারা। তাঁরাই আহত যাত্রীদের বার করে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে থাকেন। গ্রামবাসীদের দাবি, ঘটনাস্থলে পুলিশ আসে অনেক পরে।

জঙ্গিপুরের এসডিপিও প্রসেনজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য সে কথা মানতে চাননি। তিনি বলেন, ‘‘খবর পেয়েই স্থানীয় ফাঁড়ি থেকে পুলিশ পৌঁছে গিয়েছিল। টহলদার ট্রাফিক পুলিশও পৌঁছয় সময়েই।’’ তবে, দুর্ঘটনার কারণ যে লেন ভেঙে চলাচল, মেনে নিয়েছেন তিনি। প্রসেনজিৎ বলেন, ‘‘মৃতদের সকলেরই পরিচয় জানা গিয়েছে। বাস এবং ট্যাঙ্কার, দু’টি গাড়িরই যথেষ্ট গতি ছিল। তবে প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, ট্যাঙ্কারের সামনের চাকা ফেটে যাওয়ার ফলেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছিল গাড়িটি।’’

ট্যাঙ্কারের খালাসি সুনীল রাই বলেন, ‘‘বল্লালপুরে এখন দু’লেন তৈরির কাজ চলছে। তাই একটি লেন দিয়েই দু’দিকের গাড়ি ছুটছিল। প্রায় চার কিলোমিটার এ ভাবেই এসেছি আমরা। খয়রাকান্দির কাছে গাড়ির চাকা ফেটে যাওয়াতেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে চালক। তখনই উল্টো দিক থেকে বাসটা সজোরে ধাক্কা মারে।’’

পুলিশ জানায়, ট্যাঙ্কারের চালক ছাড়া মৃতদের সকলেই মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা। সেই তালিকায় রয়েছেন চার বাসযাত্রী— পলাশ সিংহ (৫২), কমলা বেওয়া ( ৫০), অরূপ ঘোষ (২৮), আনিসুর রহমান (৪৭) এবং লিপিকা মোদক (২২)। মারা যান বাস চালক সুকুমার দাস (৬৪)। তিনি বহরমপুরের রাধারঘাট এলাকার বাসিন্দা। ট্যাঙ্কার চালক সনুকুমার রাই (৩০) আদতে বিহারের ছাপড়ার বাসিন্দা হলেও কর্মসূত্রে তিনি কলকাতায় থাকতেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন