মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। — ফাইল চিত্র
পঞ্চায়েত ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল মনোনয়ন দাখিলের কাজ সম্পন্ন করে ফেলেছে। এখন স্ক্রুটিনি পর্বের পর প্রার্থিপদ প্রত্যাহারের পালা শেষের অপেক্ষায় সব পক্ষ। কিন্তু এমন ব্যস্ততার মধ্যেই রাজ্য জুড়ে শুরু হয়ে গিয়েছে ভোটের প্রচার। সেই ব্যস্ততার জেরেই এ বার স্থগিত হয়ে গেল রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠক, এমনটাই নবান্ন সূত্রে খবর। সোমবার বিকেল তিনটে নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী জানিয়ে দিয়েছেন, পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত মন্ত্রিসভার বৈঠক স্থগিত করে দেওয়া হল। নবান্ন সূত্রে খবর, আগামী মন্ত্রিসভার বৈঠকের দিন সময় ও সুযোগ বুঝে জানিয়ে দেওয়া হবে। তবে প্রশাসনিক মহলের একাংশের মতে, রাজ্যের ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে প্রশাসনের পাশাপাশি ব্যস্ত শাসকদল তৃণমূল। সেই ব্যস্ততার কারণেই আপাতত পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে মন্ত্রিসভার বৈঠক।
৮ জুলাই রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন। ১১ জুলাই ভোটগণনা। ৬ জুলাই শেষ হচ্ছে পঞ্চায়েত ভোটের প্রচার পর্ব। তাই রাজ্য সরকারের বেশির ভাগ মন্ত্রীরাই ব্যস্ত থাকবেন নিজ নিজ জেলায় ভোটের প্রচারে। রাজ্য মন্ত্রিসভার প্রায় ৩০ জন সদস্য গ্রামীণ এলাকা থেকে নির্বাচিত হয়েছেন। তাই পঞ্চায়েত ভোটে নিজ নিজ এলাকায় প্রচারের দায়িত্ব সামলাতে হচ্ছে তাঁদের। সে কথা মাথায় রেখেই মন্ত্রিসভার বৈঠক পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে মনে করছেন রাজ্য প্রশাসনের কর্তারা। আবার রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, আগামী লোকসভা নির্বাচনের আগে পঞ্চায়েত ভোট শাসকদল তৃণমূলের কাছে এক বড় পরীক্ষা। সেই পরীক্ষায় সসম্মানে উত্তীর্ণ হতে সর্বশক্তি প্রয়োগ করতে চায় শাসকদল। তাই দলের শীর্ষনেতা তো বটেই, রাজ্য মন্ত্রিসভার সকল সদস্যকে প্রচারের কাছে ঝাঁপিয়ে পড়তে নির্দেশ দিয়েছেন তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। পঞ্চায়েত ভোটের যাবতীয় প্রচার পর্ব শেষ হলে আবারও মন্ত্রিসভার বৈঠক হতে পারে।
নবান্নের একটি সূত্র জানাচ্ছে, রাজ্য মন্ত্রিসভায় এমন অনেক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ছিল, যার ঘোষণা হলে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি ভোটের আদর্শ আচরণ বিধিভঙ্গের অভিযোগ তুলতে পারত। তাই রাজ্যের পঞ্চায়েত ভোট চলাকালীন এমন কোনও বিতর্ক চায়নি রাজ্য সরকার। তাই ভোটের আদর্শ আচরণ বিধি শেষ হওয়ার পর মন্ত্রিসভার বৈঠকে সেই সব সিদ্ধান্তে অনুমোদন দিয়ে তা ঘোষণা করবে রাজ্য সরকার। তবে শনিবার কালীঘাটে তৃণমূলের নির্বাচনী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, তৃণমূলের প্রথমসারির ৫০ জন নেতা জেলায় জেলায় গিয়ে আগামী ২০-২৫ দিন ধরে ভোটের প্রচার করবেন। প্রত্যেককে কমপক্ষে ৪০টি করে প্রচারসভা করতে হবে। এই ৫০ জন নেতার মধ্যে রয়েছেন এক ঝাঁক মন্ত্রী। তাই এই প্রচারে অংশ নিতে গেলে তারা কোনও ভাবেই মন্ত্রিসভার বৈঠকে যোগ দিতে পারবেন না। তাই মন্ত্রিসভার বৈঠক স্থগিত করে মন্ত্রীদের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব, এমনটাই মত রাজনৈতিক মহলের একাংশের।