মদন তামাঙ্গ হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে দ্বিতীয় দফায় যে ২৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দেওয়া হয়েছে, সিবিআই তাঁদের একবারও কেন গ্রেফতারের চেষ্টা করল না, সেই প্রশ্ন তুলল কলকাতা হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার তামাঙ্গ হত্যা মামলায় অভিযুক্ত বিমল গুরুঙ্গ-সহ ২৩ জনের আগাম জামিনের আবেদনের শুনানি ছিল। হাইকোর্টের বিচারপতি অসীম রায় সিবিআই-য়ের আইনজীবী মহম্মদ আসরাফ আলিকে প্রশ্ন করেন, ‘‘অভিযুক্তদের কত বার গ্রেফতারের চেষ্টা হয়েছে?’’ সিবিআই-য়ের আইনজীবী বলেন, ‘‘একবারও করা হয়নি।’’ তা শুনে বিচারপতি মন্তব্য করেন, ‘‘আমি তো বুঝতেই পারছি না, যাঁদের বিরুদ্ধে খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার মতো গুরুতর অভিযোগ উঠেছে, তাঁদের একবারও কেন গ্রেফতার করার চেষ্টা হল না।’’
সেই প্রশ্নের জবাব না পেয়ে বিচারপতি রায়ের পরের মন্তব্য, ‘‘সেই সময় যদি গ্রেফতারের প্রয়োজন না থাকে, তা হলে এখনই বা অভিযুক্তদের গ্রেফতার
করে জেলে বন্দি রেখে বিচারের প্রয়োজন কোথায়?’’
সিবিআই-য়ের আইনজীবী এর পরে আদালতে জানান, আগাম জামিনের মামলাটি লড়ার জন্য সিবিআই সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবীকে নিযুক্ত করতে চাইছে। আদালত সেই অনুমতি দিলে, সেই আইনজীবীই বিচারপতি রায়ের যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন।
সিবিআই-য়ের আইনজীবী অবশ্য এ দিন আদালতে জানান, দ্বিতীয় দফায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করার সাত দিন পরে তদন্তকারী অফিসার কলকাতার নগর দায়রা আদালতে একটি আবেদন জানান। ওই আবেদনে তদন্তকারী অফিসার বলেন, অভিযুক্তদের আদালতে হাজির করানোর জন্য জামিন-অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করুক আদালত। আদালত সেই মতো ওই পরোয়ানা জারি করে। বিচারপতি রায় তা জেনে ফের সিবিআই-য়ের আইনজীবীর কাছে জানতে চান, সেই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পরেও অভিযুক্তদের গ্রেফতারের চেষ্টা হয়েছিল কি না। সিবিআই-য়ের আইনজীবী বলেন, সেই পরোয়ানা জারির পরেই অভিযুক্তেরা হাইকোর্টে আগাম জামিনের আবেদন করেন।
বিচারপতি রায় এর পরে সিবিআই-য়ের আইনজীবীর উদ্দেশে বলেন, সুপ্রিম কোর্ট মদন তামাঙ্গ হত্যা মামলার বিচার অবাধ ও নিরপেক্ষ ভাবে করার জন্যই দার্জিলিং জেলা আদালত থেকে কলকাতার নগর দায়রা আদালতে পাঠিয়েছে। কলকাতার নগর দায়রা আদালতের নিরপেক্ষতা নিয়ে সিবিআই-য়ের এখনও পর্যন্ত কোনও অভিযোগ নেই। সে ক্ষেত্রে অভিযুক্তদের আগে গ্রেফতার করে, তার পরে বিচার প্রক্রিয়া শুরুর কী প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, তা জানা দরকার।
তামাঙ্গয়ের স্ত্রী ভারতীদেবীর আইনজীবী অমিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় এর পরে আদালতে জানান, অভিযুক্তদের অবশ্যই গ্রেফতারের প্রয়োজন রয়েছে। তাঁরা এখনও মামলার সাক্ষীদের হুমকি দিচ্ছেন, ভয় দেখাচ্ছেন। যা জেনে বিচারপতি রায় ওই আইনজীবীর কাছে জানতে চান, কবে, কখন, কোথায় সেই হুমকি দেওয়া হয়েছে তা নির্দিষ্ট ভাবে জানাতে হবে। অমিতেশবাবু জানান, তিনি মক্কেলের কাছ থেকে জেনে পরের শুনানির দিন তা জানাবেন। কাদের, কত বার, কী ভাবে, কোথায় হুমকি দেওয়া হয়েছে তা হলফনামা আকারে আগামী ৯ জুলাই আদালতে পেশ করতে অমিতেশবাবুকে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি।
সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবীকে নিযুক্ত করার ক্ষেত্রে আগাম জামিনের মামলাটি কিছুদিনের জন্য মুলতুবি রাখার জন্য এ দিন সিবিআই-য়ের আইনজীবী আদালতে আবেদন করেন। বিচারপতি রায় সেই আবেদন এ দিন মঞ্জুর করেন এবং মামলার শুনানি চার সপ্তাহের জন্য মুলতুবি রাখেন। বিচারপতি রায়ের নির্দেশ, এই মামলার পরবর্তী শুনানি ৩১ জুলাই।
২০১০ সালের ২১ মে সাত সকালে দার্জিলিং ক্লাব সাইড রোডে জনসভার প্রস্তুতির সময় খুন হন গোর্খা লিগের প্রধান নেতা মদন তামাঙ্গ।