Manual Scavenger

‘মানুষকে নর্দমায় নামিয়ে সাফাই করানো মানবাধিকার লঙ্ঘন’! চার শ্রমিকের মৃত্যুতে নতুন তদন্তের নির্দেশ হাই কোর্টের

আদালত জানায়, ওই শ্রমিকদের মৃত্যু শুধু একটি দুর্ঘটনা নয়, বরং প্রশাসনিক ব্যর্থতা। ওই ঘটনায় আইন ভাঙা হয়েছে। মানুষের প্রাণকে তুচ্ছ করে দেখানো হয়েছে।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০২৫ ২২:৩১
Share:

নর্দমায় সাফাই করতে নেমে মৃতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ হাই কোর্টের। —প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।

কলকাতায় ম্যানহোলে চার শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় নতুন করে তদন্তের নির্দেশ দিল হাই কোর্ট। পুলিশের তদন্তে অসন্তুষ্ট আদালত। মৃতদের পরিবারকে ৩০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। শুক্রবার ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি সুজয় পাল এবং বিচারপতি চৈতালি চট্টোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, ২০১৩ সালের আইন মেনে ৩০ দিনের মধ্যে রাজ্যকে ‘স্টেট মনিটরিং কমিটি’ গঠন করতে হবে। ওই ঘটনায় নতুন করে তদন্ত করবে পুলিশ। পুলিশের উচ্চপদস্থ আধিকারিককে এই তদন্তে নিযুক্ত করতে হবে। চার সপ্তাহের মধ্যে হাই কোর্টে তদন্ত রিপোর্ট জমা করতে হবে। দুই বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের মন্তব্য, ‘‘মানুষকে নর্দমায় নামিয়ে পরিষ্কার করানোর ঘটনা মানবাধিকার লঙ্ঘন করে। অথচ এই ঘটনা এখনও চলছে। এ ধরনের মৃত্যু দেশের বিবেকের উপর আঘাত।’’

Advertisement

২০২১ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ কলকাতার একটি প্রকল্পের কাজে নর্দমার পাইপলাইন পরিষ্কার ও মেরামতি করতে সাত জন শ্রমিক ম্যানহোলে নেমেছিলেন। অভিযোগ, তাঁদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ছিল না। মাস্ক, অক্সিজেন না-থাকায় বিষাক্ত গ্যাসে চার জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় হাই কোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করে মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর। তাদের আইনজীবী রঘুনাথ চক্রবর্তীর সওয়াল, রাজ্য ও কলকাতা পুরসভা আইন না-মেনে ওই শ্রমিকদের হাতে করে নর্দমা পরিষ্কার করতে নামিয়েছিল। যা সম্পূর্ণ ভাবে নিষিদ্ধ। মৃত্যুর পরে সঠিক ভাবে তদন্ত হয়নি। মৃত এবং আহতদের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি। পাল্টা কলকাতা পুরসভার যুক্তি, পুরসভা সরাসরি কাজ করায়নি। কাজের দায়িত্ব ঠিকাদারের হাতে দেওয়া ছিল। ওই ঘটনায় ঠিকাদারের গাফিলতি রয়েছে। পুরসভা সাত সদস্যের কমিটি গড়ে পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। ঠিকাদার সংস্থাটিকে ‘কালো তালিকাভুক্ত’ (ব্ল্যাকলিস্ট) করা হয়েছে। মৃতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ হিসাবে দেওয়া হয়েছে ১০ লক্ষ টাকা।

শুক্রবার রায় ঘোষণা করে আদালত জানায়, ওই শ্রমিকদের মৃত্যু শুধু একটি দুর্ঘটনা নয়, বরং প্রশাসনিক ব্যর্থতা। ওই ঘটনায় আইন ভাঙা হয়েছে। মানুষের প্রাণকে তুচ্ছ করে দেখানো হয়েছে। আইনে বলা আছে, কাউকে বিপজ্জনক নর্দমা পরিষ্কারের কাজে লাগানো যাবে না। প্রত্যেক রাজ্যকে একটি পর্যবেক্ষক কমিটি গঠন করতে হবে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার এমন কোনও কমিটিই গঠন করেনি। ক্ষতিপূরণ দেওয়া নিয়েও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মানা হয়নি। হাই কোর্ট জানায়, তিন মাসের মধ্যে মৃতদের পরিবারকে ৩০ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ১০-২০ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, যাঁরা অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন।

Advertisement

চার জন শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশের তদন্ত অত্যন্ত দুর্বল বলে মন্তব্য করে আদালত। ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, এফআইআরে ঘটনার নেপথ্যে ‘অপরিচিত ব্যক্তি’দের হাত দেখিয়ে পুলিশ দায় এড়াতে চেয়েছে। এত দিনেও তদন্তের কোনও অগ্রগতি হয়নি। চিহ্নিতই করা হয়নি দোষীদের। এ ভাবে কোনও তদন্ত চলতে পারে না। নতুন করে তদন্ত শুরু করতে হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement