Calcutta High Court

Calcutta High Court: ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে বলুন’, রাজ্যে অশান্তির নিন্দা করে মন্তব্য হাই কোর্টের

রাজ্যে সাম্প্রতিক অশান্তির ঘটনায় বুধবার উচ্চ আদালতে রিপোর্ট জমা দিয়েছেন রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০২২ ১৫:০৬
Share:

ছবি: সংগৃহীত।

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে সমস্ত রাজনৈতিক দলেরই দায়িত্ব রয়েছে বলে মনে করে কলকাতা হাই কোর্ট। হাওড়া-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় সাম্প্রতিক হিংসার ঘটনার নিন্দা করে বুধবার হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের মন্তব্য, ‘‘এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না হয় সে দিকে নজর রাখতে হবে।’’ গোটা কাণ্ডে চিন্তিত বলেও জানিয়েছে হাই কোর্ট।

Advertisement

বিজেপির অধুনা নিলম্বিত (সাসপেন্ডেড) মুখপাত্র নূপুর শর্মার বিতর্কিত মন্তব্যের জেরেই রাজ্যের কয়েকটি জায়গায় প্রতিবাদ, বিক্ষোভ হয়েছে বলে অভিযোগ। এর জেরে গত বৃহস্পতিবার থেকে টানা তিন দিন হাওড়া, নদিয়ার কয়েকটি জায়গায় পথ অবরোধ, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। হিংসাত্মক বিক্ষোভের ঘটনায় হাই কোর্টে বেশ কয়েকটি জনস্বার্থ মামলা রুজু করা হয়। সে মামলাগুলির শুনানিতে রাজ্যের কাছে রিপোর্ট চেয়েছিল হাই কোর্ট। বুধবার এই মামলায় রায়দান স্থগিত রেখেছে কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব এবং বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চ। যদিও এই মামলায় কড়া মন্তব্য করেছে হাই কোর্ট। ডিভিশন বেঞ্চের মন্তব্য, ‘‘আমাদের চিন্তা হল যা ঘটেছে, তার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়। এর জন্য যাঁরা দায়ী, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করা হবে।’’

শুনানিতে এক মামলাকারীর আইনজীবী সুস্মিতা সাহা দত্তের দাবি, ‘‘একটি সম্প্রদায় ফের প্রতিবাদ মিছিল করছে। সেখান থেকে উস্কানিমূলক মন্তব্য করা হচ্ছে। নতুন করে (রাজ্যে) অশান্তি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’’ এর পাল্টা হিসাবে আর এক মামলাকারীর আইনজীবী ঝুমা সেন বলেন, ‘‘রাজনৈতিক চশমা খুলে এই ঘটনার বিচার করতে হবে। এ ধরনের ঘটনায় সাম্প্রদায়িক তত্ত্ব খাড়া করা খুবই দুঃখজনক।’’ অবসরপ্রাপ্ত কোনও বিচারপতিকে দিয়ে এই ঘটনায় তদন্তের আর্জি জানান তিনি।

Advertisement

রাজ্যে অশান্তির ঘটনায় বুধবার উচ্চ আদালতে রিপোর্ট জমা দেন রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়। তিনি জানান, রাজ্য সরকার যাবতীয় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করেছে। উত্তেজনাপ্রবণ এলাকায় এখনও পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। পাশাপাশি, অশান্তির ঘটনায় মোট ২৪০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ওই এলাকাগুলির ভিডিয়ো ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে।

যদিও মামলাকারীদের অন্য এক আইনজীবী শতরূপ বন্দ্যোপাধ্যায় এই যুক্তি মানতে নারাজ। তিনি বলেন, ‘‘অন্য রাজ্যে বুলডোজার চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এটা আমাদের সংস্কৃতি নয়। আমরা এখানে আইনের সাহায্য চাইছি।’’ তাঁর দাবি, ‘‘যে মন্তব্য নিয়ে এত বিতর্ক সেটি ২৭ মে ফেসবুকে পোস্ট করা হয়েছিল। ১০ জুন থেকে এ রাজ্যে অশান্তি শুরু হয়েছে। তা হলে কি এটা পরিকল্পনামাফিক সংগঠিত বিক্ষোভ? যদি তা-ই হয়, তবে বলতে হবে রাজ্যের পুলিশ, গোয়েন্দা ব্যর্থ। তারা আন্দাজ করতে পারেনি। এখন সেনা নামিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ এবং মানুষের মনোবল মজবুত করা দরকার।’’

এজি-র মন্তব্যের পর পাল্টা যুক্তি দিয়েছেন এক মামলাকারীর আইনজীবী প্রিয়ঙ্কা টিবরেওয়াল। তিনি বলেন, ‘‘যাঁরা দায়ী, তাঁদের সকলকে কি গ্রেফতার করা হয়েছে? মুর্শিদাবাদের বেলডাঙার একটি মেয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেছিল এই ধরনের বিক্ষোভের বিরুদ্ধে। তাঁকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।’’ এই বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য এজি-কে নির্দেশ দেন প্রধান বিচারপতি। একই সঙ্গে, মামলাকারী আইনজীবীদের প্রতি প্রধান বিচারপতির আর্জি, ‘‘আপনারা সবাই বার (বার অ্যাসোসিয়েশন)-এর সদস্য। আবার রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও অনেকে যুক্ত। নিজেদের দলকে বলুন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে। এই আদালত চিন্তিত। শুধু যা ঘটেছে, তা যেন আর না হয়।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন