Kamduni Rape and Murder Case

কলকাতা হাই কোর্টে কামদুনির রায়, ফাঁসির আসামির মুক্তি! খালাস আমৃত্যু সাজাপ্রাপ্তও

২০১৩-র ৭ জুন উত্তর ২৪ পরগনার কামদুনিতে এক কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের পরে নৃশংস ভাবে খুন করা হয়েছিল। ২০১৬ সালে নিম্ন আদালত তিন অপরাধীর ফাঁসি এবং অন্য তিন জনকে আমৃত্যু জেলের সাজা দেয়।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২৩ ১৪:১৬
Share:

কামদুনি ধর্ষণকাণ্ডের রায় দিল কলকাতা হাই কোর্ট। —ফাইল চিত্র।

কামদুনি ধর্ষণ এবং হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করল কলকাতা হাই কোর্ট। ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত সইফুল আলি এবং আনসার আলির সাজা বদলে আমৃত্যু কারাদণ্ড ঘোষণা করেছে বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী এবং বিচারপতি অজয়কুমার গুপ্তের ডিভিশন বেঞ্চ। নিম্ন আদালতে আর এক ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত আমিন আলি বেকসুর খালাস পেয়েছেন। অন্য দিকে, নিম্ন আদালতে আমৃত্যু জেলের সাজাপ্রাপ্ত ইমানুল ইসলাম, আমিনুর ইসলাম এবং ভোলানাথ নস্করও ১০ বছর জেল খাটার কারণে খালাস পেয়েছেন হাই কোর্ট থেকে।

Advertisement

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

২০১৩ সালের ৭ জুন কলেজ থেকে ফেরার পথে এক ছাত্রীকে উত্তর ২৪ পরগনার কামদুনিতে ধর্ষণ করে নৃশংস ভাবে খুন করা হয়েছিল। সেই ঘটনা নিয়ে উত্তাল হয়ে ওঠে গোটা রাজ্য। দিল্লির নির্ভয়াকাণ্ডের মতো তার ঢেউ পৌঁছয় দেশের অন্যান্য প্রান্তেও। দোষীদের চরম সাজার দাবিতে শুরু হয় আন্দোলন। ধর্ষণ এবং হত্যাকাণ্ডের পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কামদুনি সফরের সময় তাঁর সামনে প্রতিবাদে সরব হয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা মৌসুমী ও টুম্পা কয়াল। শুক্রবার রায় ঘোষণার পরে মৌসুমী বলেন, ‘‘আমরা এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানাব। নির্ভয়া-কাণ্ডের আইনজীবীর সাহায্য নেব।’’

প্রাথমিক ভাবে পুলিশ তদন্ত শুরু করলেও এর পরে ঘটনার তদন্তের ভার পায় সিআইডি। চার্জশিটে অভিযোগ আনা হয় ন’জনের বিরুদ্ধে। বিচারপ্রক্রিয়া চলাকালীন গোপাল নস্কর নামে এক অভিযুক্তের মৃত্যু হয়। ২০১৬ সালের ৩০ জানুয়ারি কলকাতার নগর দায়রা আদালতের (ব্যাঙ্কশাল কোর্ট) বিচারক সঞ্চিতা সরকার দোষী ছ’জনের শাস্তি ঘোষণা করেন। এদের মধ্যে সইফুল আলি মোল্লা, আনসার আলি এবং আমিন আলিকে ফাঁসির সাজা দেওয়া হয়। বাকি তিন অপরাধী শেখ ইমানুল ইসলাম, আমিনুর ইসলাম এবং ভোলানাথ নস্করের হয় আমৃত্যু জেলের সাজা। প্রমাণের অভাবে মুক্তি দেওয়া হয় অন্য দুই অভিযুক্ত রফিক গাজি এবং নুর আলিকে।

Advertisement

ব্যাঙ্কশাল আদালতে ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত সইফুল, আনসার এবং আমিনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৩৭৬-এ, ৩৭৬-ডি, ৩০২, ১২০ বি এবং ২০১ ধারায়। ওই ধারাগুলিতে ন্যূনতম সাজা ২০ বছরের কারাদণ্ড। মূল অভিযুক্ত সইফুলের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত দু’টি ধারাও ছিল— ১০৯ এবং ৩৪২। অন্য দিকে, আমৃত্যু জেলের সাজাপ্রাপ্ত ইমানুল, আমিনুল এবং ভোলাকে ৩৭৬ ডি, ১২০ বি এবং ২০১ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন বিচারক সঞ্চিতা।

বিচারক সঞ্চিতা তাঁর রায় ঘোষণার সময় জানিয়েছিলেন, এমন নৃশংস অপরাধ বন্ধ করার জন্য সমাজকে কড়া বার্তা দেওয়া প্রয়োজন, যাতে এই ধরনের অপরাধকে আড়াল করা না-হয়। তিনি মন্তব্য করেছিলেন, ‘‘এমন অপরাধের প্রবণতা অঙ্কুরেই বিনাশ করা দরকার। তা না-হলে এই অপরাধ সমাজে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়বে।’’ সাজা ঘোষণার সপ্তাহ দুয়েক পরে ২০১৬-র ফেব্রুয়ারিতে সাজাপ্রাপ্তেরা সেই রায় চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল। গত ডিসেম্বরে বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী এবং বিচারপতি অজয়কুমার গুপ্তের ডিভিশন বেঞ্চে অপরাধী ছ’জনের সাজা মকুবের সেই আবেদনের শুনানি শুরু হয়েছিল। শুক্রবার হল তার রায় ঘোষণা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন