ডাইনি প্রথা রদে পৃথক আইনের অস্ত্র চায় কি রাজ্য, প্রশ্ন কোর্টের

মহারাষ্ট্র এগিয়ে। এমনকী পড়শি বিহার, ঝাড়খণ্ড, অসম-ও আইন তৈরি করে এগিয়ে গিয়েছে। তাদের দেখানো পথে পশ্চিমবঙ্গ হাঁটবে কি, জানতে চাইল কলকাতা হাইকোর্ট।

Advertisement

শমীক ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৫ ০২:৫২
Share:

মহারাষ্ট্র এগিয়ে। এমনকী পড়শি বিহার, ঝাড়খণ্ড, অসম-ও আইন তৈরি করে এগিয়ে গিয়েছে। তাদের দেখানো পথে পশ্চিমবঙ্গ হাঁটবে কি, জানতে চাইল কলকাতা হাইকোর্ট।

Advertisement

ডাইন বা ডাইনি অপবাদ দিয়ে পুরুষ-মহিলাদের উপরে অত্যাচার প্রতিরোধে পৃথক আইন চালু করেছে ওই সব রাজ্য। কিন্তু একুশ শতকের দেড় দশক পার করেও এই সামাজিক ব্যাধি বাংলায় রয়েছে বহাল তবিয়তে। গত কয়েক মাসে পশ্চিম মেদিনীপুর, বীরভূম, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ায় ডাইনি অপবাদ দিয়ে মহিলাদের মারধরের বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের এমনই দু’টি ঘটনার জেরে মামলাও হয়েছে হাইকোর্টে। একটি ক্ষেত্রে নির্যাতিতার জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে পুলিশি পাহারারও।

রাজ্য পুলিশের এক কর্তা জানান, এ রাজ্যে ডাইনি অপবাদে পিটিয়ে মারলে খুনের মামলা হয়। কিন্তু কোনও পুরুষ বা মহিলাকে ওই অপবাদ দিলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কড়া আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ কম। অনেক সময় অভিযুক্ত গ্রেফতার হলেও সাক্ষ্যপ্রমাণের অভাবে ছাড়া পেয়ে যায়। এই পরিস্থিতিতেই প্রশ্ন উঠছে, ডাইনি অপবাদ দিয়ে নির্যাতন ও হত্যার ঘটনা এড়াতে অন্য কয়েকটি রাজ্যের মতো পশ্চিমবঙ্গ পৃথক কোনও ফৌজদারি আইন তৈরি করবে কি? এ ব্যাপারে রাজ্যের বক্তব্য কী, জানতে চেয়েছে হাইকোর্ট।

Advertisement

বিহার, মহারাষ্ট্র, ঝাড়খণ্ডের পথে চলতি বছরেই এ ব্যাপারে কড়া আইন চালু করেছে অসম। ডাইনি অপবাদে কারও উপরে অত্যাচার করা হলে ৫-১০ বছরের জেল এবং এক থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা জরিমানার সংস্থান রয়েছে ওই আইনে। ডাইনি অপবাদে হত্যা করা হলে অভিযুক্তের বিচার হবে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায়। ডাইনি অপবাদের জেরে কেউ যদি আত্মঘাতী হন, তা হলে আত্মহত্যায় প্ররোচনার দায়ে অভিযুক্তের সাত বছর থেকে যাবজ্জীবন কারাবাস এবং পাঁচ লক্ষ টাকা জরিমানারও ব্যবস্থা রয়েছে অসম সরকারের আইনে।

কয়েক মাস আগে পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনিতে বছর চল্লিশের এক আদিবাসী মহিলাকে নগ্ন করে, পিটিয়ে সপরিবার গ্রামছাড়া করে গ্রামের কিছু লোক। পুলিশ জানায়, গ্রামবাসীদের অভিযোগ, ওই মহিলা ডাইনি। তাঁর অভিশাপে তাঁরই এক আত্মীয় ক্যানসারে আক্রান্ত। গ্রামবাসীদের অত্যাচারের ব্যাপারে থানায় অভিযোগ জানিয়ে প্রতিকার না-হওয়ায় মহিলা কেশিয়াড়িতে এক আত্মীয়ের বাড়িতে লুকিয়ে থাকেন। পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ এনে ১৬ অক্টোবর হাইকোর্টে মামলা করেন তিনি। নির্যাতিতার আইনজীবী নীলাঞ্জন ভট্টাচার্য জানান, মহিলাকে গ্রামের কিছু লোক ডাইনি অপবাদ দিয়ে নগ্ন করে পেটায়। তাঁর বাড়ি ভাঙচুর করে। পেটানো হয় তাঁর স্বামী এবং ছেলেমেয়েদেরও। কেড়ে নেওয়া হয় মজুত ফসল। নষ্ট করা হয় খেত। নীলাঞ্জনবাবু জানান, মহিলা হাইকোর্টে দায়ের করা মামলায় জেলা পুলিশের বিরুদ্ধেও অভিযোগ করেছেন জেনে পুলিশকর্তারা নড়েচড়ে বসেন। কেশিয়াড়ি থেকে মহিলা এবং তাঁর পরিবারকে উদ্ধার করে গ্রামে ঢোকায় পুলিশ। তাঁর বাড়ির সামনে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। তাঁকে বাসনপত্রও কিনে দেয় পুলিশ। তা সত্ত্বেও ওই মহিলাকে কার্যত একঘরে করা হয়েছে। তাঁর ছেলেমেয়েরা স্কুলে যেতে পারছে না।

দিন পনেরো আগে বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের আদালতে মামলাটি ওঠে। আইনজীবী নীলাঞ্জনবাবু জানান, অনেক রাজ্যেই ডাইনি সন্দেহে অত্যাচার রুখতে ভারতীয় দণ্ডবিধি ছাড়াও আলাদা আইন আছে। কিন্তু বাংলায় তা নেই। বিচারপতি দত্ত সব শুনে জিপি-কে নির্দেশ দেন, এই ব্যাপারে পৃথক আইন তৈরির কথা ভাবা হচ্ছে কি না, জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে তা জানাতে হবে সরকারকে।

ডাইনি অপবাদ দিয়ে হত্যা বা অত্যাচার রোধে পৃথক আইন তৈরি হলে নির্যাতিত পুরুষ বা মহিলার জন্য তাতে বিশেষ কয়েকটি সুযোগ-সুবিধার সংস্থান রাখা দরকার বলে মনে করেন হাইকোর্টের আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়। তার মধ্যে অবশ্যই থাকা চাই পুনর্বাসনের ব্যবস্থা। কারণ, আইন প্রণয়ন করেও একঘরে করে রাখা বা গ্রামছাড়া করা আটকানো যায় না। এগুলো রুখতে হলে শিক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধির উপরে জোর দেওয়া দরকার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন