Accused

বিচারাধীন বন্দিরা বাইরে যথেচ্ছ মুখ খোলায় প্রশ্ন

কংগ্রেসের আইনজীবী-নেতা কৌস্তভ বাগচীর বক্তব্য, জেল হেফাজতে থাকা বন্দির কথা বলতে আইনি বাধা তো নেই। এটা অনেকটাই নির্ভর করে পুলিশের উপরে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০২৩ ০৬:৫০
Share:

আইনজীবীরা বলছেন, জেলবন্দি অভিযুক্তদের কথা বলতে পারবেন না, এমন কোনও আইনি বিধান নেই। প্রতীকী ছবি।

কখনও জেল হেফাজতে থাকা বিচারাধীন বন্দি কচুরি-ল্যাংচা খেতে খেতে ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে খোশগল্প করছেন। কখনও বা জেলবন্দি অভিযুক্ত একেবারে ফুরফুরে মেজাজে বিবৃতি দিচ্ছেন সংবাদমাধ্যমে। উল্টো দিকে অভিযুক্তের কণ্ঠ চাপা দিতে পুলিশকে প্রায় ঢাকির ভূমিকাতেও দেখা গিয়েছে এই বঙ্গেই।

Advertisement

প্রশ্ন উঠছে, জেলবন্দি অভিযুক্তেরা কি এ ভাবে বাইরের লোকেদের সঙ্গে যখন-তখন কথা বলতে পারেন?

আইনজীবীরা বলছেন, জেলবন্দি অভিযুক্তদের কথা বলতে পারবেন না, এমন কোনও আইনি বিধান নেই। অভিযুক্তদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই একদা পুলিশি ঘেরাটোপে তাঁদের নিয়ে জেল থেকে যাতায়াত করা হত। এখনও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সেটাই হয়। তবে ব্যতিক্রমী উদাহরণ ক্রমশ বেড়ে চলেছে। ‘ঘটনাচক্রে’ সেই ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত বেশি দেখা যাচ্ছে শাসক দলের নেতাদের ক্ষেত্রেই।

Advertisement

কংগ্রেসের আইনজীবী-নেতা কৌস্তভ বাগচীর বক্তব্য, জেল হেফাজতে থাকা বন্দির কথা বলতে আইনি বাধা তো নেই। এটা অনেকটাই নির্ভর করে পুলিশের উপরে।

বৃহস্পতিবার নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত, তৃণমূলের বহিষ্কৃত যুব নেতা কুন্তল ঘোষকে কার্যত ফুরফুরে মেজাজে সাংবাদিকদের সামনে বলতে শোনা গিয়েছে যে, কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা নেতানেত্রীদের নাম বলার জন্য চাপ দিচ্ছেন। ইডি বা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের হেফাজতে থাকার সময় অবশ্য তাঁকে এই অভিযোগ করতে শোনা যায়নি। বরং তাঁর মুখ থেকেই শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়, ‘কালীঘাটের কাকু’ ইত্যাদি শোনা গিয়েছিল। কিন্তু এ দিন কুন্তল যে-ভাবে ধীরেসুস্থে কথা বলেছেন এবং পিছনে পুলিশ প্রায় নিশ্চল মূর্তির মতো যে-ভাবে দাঁড়িয়ে ছিল, তাতে কথা বলার ‘সুযোগ’ করে দেওয়া হয়েছে কি না, সেই প্রশ্ন উঠছে। শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে গত সপ্তাহে একই কায়দায় আদালত-চত্বরে ‘ধীরেসুস্থে’ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে দেখা গিয়েছে। অনেকে অবশ্য মনে করিয়ে দিচ্ছেন, সারদা কেলেঙ্কারিতে ধৃত কুণাল ঘোষ যখন কোর্টে যাতায়াতের পথে মুখ্যমন্ত্রীর নামে অভিযোগ করতে শুরু করেন, তখন কলকাতা পুলিশকে ‘হা-রে-রে’ করে প্রিজ়ন ভ্যানের গায়ে ‘ঢাক’ বাজাতে দেখা যেত। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে, তা হলে কি যে-সব কথায় শাসক দলের সুবিধা হবে, সেখানেই পুলিশের ছাড় মেলে?

বন্দিরা যে রাজনৈতিক কারণেই কথা বলার সুবিধা পান বা পান না, সেই ইঙ্গিত দিয়েছেন আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়। সেই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘কোনও অভিযুক্ত বন্দি সংবাদমাধ্যমে কী বললেন, তা নিয়ে কোর্ট ভাবে না। আদালতে গুরুত্বপূর্ণ হল অভিযুক্তের জবানবন্দি।’’ জয়ন্তনারায়ণের যুক্তি, ‘‘সংবাদমাধ্যমে অভিযুক্তের বক্তব্য গুরুত্ব পেলে তো কুণালের কথা শুনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করা উচিত।’’ তবে যে-ভাবে সংবাদমাধ্যমে কথা বলার জন্য বা পথেঘাটে কচুরি খাওয়ার জন্য পুলিশের তরফে অভিযুক্তদের রাশ আলগা করা হচ্ছে, তাতে বিপদও হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন অনেকে। এক শ্রেণির আইনজীবীর প্রশ্ন, ওই অভিযুক্তদের প্রাণনাশের উদ্দেশে হামলাও তো হতে পারে! তার দায় কে নেবে?

হেফাজতে থাকা বিচারাধীন বন্দিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে যে-সব তথ্য তদন্তকারীদের হাতে আসে, তাঁরা সেটা কেস ডায়েরিতে উল্লেখ করেন। সেই কেস ডায়েরি গোপনীয় নথি বলে মনে করা হয়। প্রশ্ন উঠছে, হেফাজতে থাকা বন্দি যদি খোলাখুলি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা প্রসঙ্গে তাঁর সঙ্গে তদন্তকারী সংস্থার কী কথা হচ্ছে, সেটাও প্রকাশ করে দেন, তা হলে সেই গোপনীয়তার কী হবে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন