দিদির ধমকে কি সাংসদের ঔদ্ধত্য কমবে, জল্পনা

প্রাণোচ্ছ্বল, হাসিখুশি স্বভাবের আড়ালে তিনি যে তিন বছরে বেশ ‘দাপুটে’ হয়ে উঠেছেন, তা জানতেন অনেকেই। জেলা তৃণমূল নেতারা তো বটেই, সাধারণ মানুষও। কিন্তু কেউ মুখে কিছু বলতেন না।

Advertisement

প্রকাশ পাল ও পীযূষ নন্দী

রিষড়া ও আরামবাগ শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:৩৯
Share:

অপরূপা পোদ্দার।

প্রাণোচ্ছ্বল, হাসিখুশি স্বভাবের আড়ালে তিনি যে তিন বছরে বেশ ‘দাপুটে’ হয়ে উঠেছেন, তা জানতেন অনেকেই। জেলা তৃণমূল নেতারা তো বটেই, সাধারণ মানুষও। কিন্তু কেউ মুখে কিছু বলতেন না। সেই ‘দাপুটে’ তৃণমূল সাংসদ অপরূপা পোদ্দার এতদিন যে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যেপাধ্যায়ের ‘নেকনজরে’ ছিলেন!

Advertisement

শুক্রবার সেই দলনেত্রীর কাছেই ধমক খেয়েছেন অপরূপা। সে কথা জানতে পেরে জেলা তৃণমূল নেতাদের কেউ বলছেন, এ বার সাংসদ সতর্ক হবেন। কেউ বলছেন, এ বার তাঁর দাপট কমবে। কেউ মনে করছেন, দু’দিন বাদেই আবার স্বমূর্তি ধরবেন সাংসদ। আর যাঁর কারণে অপরূপাকে মমতার ধমক, কামারকুণ্ডুর সেই গাড়িচালক জয়দেব দাস বলছেন, ‘‘দিদির (মমতা) প্রতি শ্রদ্ধা বেড়ে গেল। এতদিনে গালের জ্বালা জুড়োল। সে দিন সাংসদকে চিনতামও না। যানজটের জন্য উনি শুধু হম্বিতম্বিই করেননি, রাস্তায় নেমে আমায় চড়ও মারেন। খুব খারাপ লেগেছিল।’’

কী হয়েছিল কামারকুণ্ডুতে?

Advertisement

সম্প্রতি একটি ট্রাকের ধাক্কায় কামারকুণ্ডু রেলগেট ভেঙে যাওয়ায় সেখানে যানজট হয়। ওই পথ দিয়েই গাড়িতে আরামবাগ থেকে রিষড়ায় ফিরছিলেন সাংসদ অপরূপা। যানজটে তাঁর গাড়ি থমকে যায়। সেই সময় কামারকুণ্ডুর পশ্চিমপাড়ার বাসিন্দা জয়দেববাবু বাড়ি ফেরার পথে যানজট দেখে তা ছাড়ানোর চেষ্টা করছিলেন। দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকটি অ্যাম্বুল্যান্সকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন তিনি। তখনই সাংসদ নেমে তাঁকে যানজটের জন্য বকাঝকা করেন এবং গালে চড় মেরে গাড়িতে উঠে নালিকুলের দিকে চলে যান বলে অভিযোগ। যদিও জয়দেববাবুও থানা-পুলিশ করেননি। কিন্তু দলনেত্রীর কানে খবর পৌঁছে যায়। শুক্রবার দলের নীতি নির্ধারণ কমিটির বৈঠকে সেই কারণেই অপরূপাকে ধমকান মমতা।

এ নিয়ে অপরূপা অবশ্য সরাসরি কোনও মন্তব্য করতে চাননি। শনিবার তিনি বলেন, ‘‘আমার মা-বাবা এবং মমতা বন্দ্যেপাধ্যায়ের স্থান এক জায়গায়। কাগজের লোকেরা যা শুনেছেন, তা লিখেছেন। আমি যা শুনেছি, সেই মতোই চলছি।’’

তৃণমূল নেতা স্বামী সাকির আলির হাত ধরে অপরূপার রাজনীতিতে নামা। ২০১০ সালে পুর-নির্বাচনে জিতে তিনি রিষড়ার উপ-পুরপ্রধান হন। ২০১৩ সালে রিষড়ায় জগদ্ধাত্রী পুজোর উদ্বোধনের জন্য আমন্ত্রণ জানাতে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুনজরে চলে আসেন অপরূপা। পরের বছরেই লোকসভা নির্বাচনের জন্য আরামবাগ আসনে তৃণমূলের টিকিট মিলে যায়।

সাংসদ হওয়ার পর থেকেই অপরূপার দাপট বাড়তে থাকে বলে দাবি করেছেন জেলা তৃণমূল নেতাদের কেউ কেউ। তাঁর বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহারের অভিযোগও শোনা যাচ্ছিল ঘনঘন। তবে, সেই অভিযোগ নিয়ে এ পর্যন্ত কেউ পুলিশ প্রশাসনের দ্বারস্থ হননি। কখনও জেলা পরিষদ বাংলোর ঘর দখল করে তাঁর বিরুদ্ধে অফিস চালানোর অভিযোগ শোনা গিয়েছে, কখনও বা নিজের নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের। এই তিন বছরে একাধিকবার তাঁর নিরাপত্তারক্ষী বদল হয়েছে। আর সাধারণ মানুষের সমস্যার কথা ঠিকমতো না শোনার অভিযোগ তো আছেই।

সম্প্রতি ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে গোলমাল ঠেকাতে খানাকুলের রাজা রামমোহন রায় কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পুলিশ ডাকায় তাঁর উপরে খড়্গহস্ত হন‌ সাংসদ। ফোনে তাঁর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ। অপরূপা ওই কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি। আর গত বছরের শেষ দিকে আবার কালীঘাটে দলনেত্রী মমতার বাড়িতে বৈঠকের আগে পুরশুড়ার তৎকালীন বিধায়ক পারভেজ রহমানের সঙ্গে অপরূপার বচসা, কান্নাকাটির কথাও সকলের জানা। দলের নেতাদের অনেকেরই বক্তব্য, ‘‘ওই দিন অপরূপাও পারভেজকে ছেড়ে কথা বলেননি। কিন্তু মহিলা হওয়ায় বেঁচে যান।’’ কিন্তু কামারকুণ্ডুর ঘটনায় অপরূপাকে রেয়াত করলেন না মমতা।

আরামবাগের এক বর্ষীয়ান তৃণমূল নেতা বলেন, ‘‘সাংসদের অভিজ্ঞতার অভাবের কথা বলে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব একাধিকবার ওঁকে আড়াল করেছেন। এ বার দিদি নিজেই সাংসদকে সতর্ক করায় দলে সঠিক বার্তা পৌঁছবে।’’

শুক্রবারের বৈঠকে অপরূপার পাশাপাশি মমতা বাঁকুড়ার সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তীকেও সতর্ক করেন। তৃণমূলেরই একটি সূত্রের খবর, জেলার চারটি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে বিভিন্ন কাজে কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে দলের জেলা নেতাদের কয়েকজন প্রভাব খাটাচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে পড়ে ‘শ্যাম রাখি না কূল রাখি’ অবস্থা নিয়োগকারীদের। শনিবার অরূপবাবু অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘আমাদের জেলায় সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালগুলিতে কোনও সমস্যা হচ্ছে বলে নেত্রী অভিযোগ তোলেননি। সংবাদমাধ্যম কোথা থেকে এই ভিত্তিহীন কথা তুলছে জানি না।’’

সহ-প্রতিবেদন: রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন