নবান্নে উজ্জ্বল-অবনী, গ্রহের ফেরে পুণ্ডরীকাক্ষ

একটা সময়ে তাঁর টিকিট পাওয়া নিয়েই ঘোর সংশয় ছিল। টিকিট যখন পেলেন, জল্পনা শুরু হল, লড়াই দিতে পারবেন তো? ভোটের ফল প্রকাশের আগে পর্যন্ত গোটা কৃষ্ণনগরে চর্চার বিষয় ছিল, তিনি কত ভোটে হারছেন।

Advertisement

সুস্মিত হালদার

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০১৬ ০৩:০০
Share:

সে দিন জয়ের পরে অবনীমোহন। —নিজস্ব চিত্র।

একটা সময়ে তাঁর টিকিট পাওয়া নিয়েই ঘোর সংশয় ছিল।

Advertisement

টিকিট যখন পেলেন, জল্পনা শুরু হল, লড়াই দিতে পারবেন তো?

ভোটের ফল প্রকাশের আগে পর্যন্ত গোটা কৃষ্ণনগরে চর্চার বিষয় ছিল, তিনি কত ভোটে হারছেন।

Advertisement

শেষমেশ কৃষ্ণনগর উত্তর থেকে দ্বিতীয় বার জিতে মন্ত্রী হচ্ছেন সেই অবনীমোহন জোয়ারদার। প্রাক্তন পুলিশকর্তা, প্রাক্তন বিধায়ক। পাশের কেন্দ্র, কৃষ্ণনগর দক্ষিণ থেকে জিতে তাঁর সঙ্গে নবান্নে ফিরছেন প্রাক্তন মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাসও।

তবে আর এক প্রাক্তন মন্ত্রী, নবদ্বীপের পুণ্ডরীকাক্ষ সাহার বোধহয় এ বার আর কুর্সিতে ফেরা হচ্ছে না। রেড রোডে শপথগ্রহণের আগের দিন, বৃহস্পতিবার রাজভবনে দাঁড়িয়ে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে ৪২ জন মন্ত্রীর নাম বলেছেন, তার মধ্যে পুণ্ডরীকাক্ষ ওরফে নন্দ সাহার নাম নেই। যেমন নেই করিমপুরে প্রায় অসম্ভবকে সম্ভব করে জিতে আসা মহুয়া মৈত্রের নামও।

এ বার টিকিট পাওয়া বা জেতা নিয়ে সংশয় থাকলেও, ১৮ হাজার ভোটে জেতার পরে অবনীমোহন যে মন্ত্রীও বনতে পারেন, এমন কথা গত কয়েক দিন ধরেই কৃষ্ণনগর শহরে বাতাসে ভাসছিল। পাড়ার মোড়ে চায়ের দোকান থেকে পার্টি অফিস, সর্বত্রই। তবে জেলার তাবড় নেতাদের পিছনে ফেলে অবনীবাবুকে মন্ত্রী করা হতে পারে, বিশ্বাস করতে পারছিলেন না অনেকেই।

কৃষ্ণনগরের এক কাউন্সিলরের কথায়, ‘‘অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন অবনীবাবু জিতবেন না। দলের অনেক নেতাও তাঁর বিরুদ্ধে জোটের হয়ে প্রচার করেছিলেন। কিন্তু তাঁরা নেত্রীর ভোটব্যাঙ্কে ধস নামাতে পারেননি। বড় ব্যবধানে জেতার পুরস্কারই পেয়েছেন অবনীবাবু।’’

শুরু থেকেই কিন্তু অবনীমোহনের পথ ছিল কাঁটা বিছোনো। জেলা তৃণমূল সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্তের উপস্থিতিতেই কাউন্সিলরদের সঙ্গে বৈঠকে তোপের মুখে পড়তে হয়েছিল তাঁকে। তাঁদের অভিযোগ ছিল, অবনীমোহন এলাকার মানুষদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন না। পাত্তা দেন না

উজ্জ্বল বিশ্বাস, অবনীমোহন জোয়ারদার, পুণ্ডরীকাক্ষ সাহা ও মহুয়া মৈত্র

জনপ্রতিনিধিদেরও। হাতে গোনা কয়েক জন কাউন্সিলর ছাড়া তাঁর হয়ে ভোটযুদ্ধে তেমন ভাবে ঝাঁপাতে দেখা যায়নি কাউকে।

তৃণমূলের একটি সূত্রের দাবি, ভোটের ফল প্রকাশের আগেই ঘনিষ্ঠ মহলে তাঁর মন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছিলেন অবনীবাবু। হাতে গোনা যে ক’জন তাঁর হয়ে ময়দানে ছিলেন, তাঁদের অন্যতম কাউন্সিলর অনুপম বিশ্বাস। তাঁর দাবি, ‘‘উনি কিন্তু আমায় বলেছিলেন, মন্ত্রী হতে পারেন। শেষ পর্যন্ত নেত্রী তাঁর উপরে ভরসা রাখলেন।’’ অবনীবাবুও বলছেন, ‘‘নেত্রী যে আমার উপরে ভরসা করেছেন, তাতে আমি ভীষণ খুশি। সর্বশক্তি দিয়ে বাংলার উন্নয়নে ঝাঁপিয়ে পড়ব।''

তাঁর বিরোধী পক্ষ, পুরপ্রধান অসীম সাহার অনুগামীরা অবশ্য যারপরনাই হতাশ। এক কাউন্সিলর বললেন, ‘‘উনি মন্ত্রী হলেন। দ্বিগুণ ক্ষমতা নিয়ে শহরে ফিরবেন। আমাদের লড়াইটা কঠিন হয়ে পড়ল।’’ বেশ কয়েক বার চেষ্টা করার পরে ফোন ধরে অসীমবাবু অবশ্য বলেন, ‘‘আমাদের বিধায়ক মন্ত্রী হচ্ছেন। আমরা খুব খুশি।’’

শেষ হাসি হাসছেন উজ্জ্বলও। পাঁচ বছরে একাধিক বার তাঁর দফতর বদল হয়েছে। বার বার রটলেও মন্ত্রিত্ব যায়নি। এ বারও রটেছিল, তিনি আর মন্ত্রিত্ব পাচ্ছেন না। কিন্তু দেখা গেল, দলনেত্রীর ভরসা অটুট। কেন? তিনি নিজে বলছেন, ‘‘দলনেত্রী যখন যা দায়িত্ব দিয়েছেন, সততা এবং নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করার চেষ্টা করেছি।’’ তৃণমূলের অন্দরের খবর, নেত্রীর প্রতি প্রশ্নহীন আনুগত্যই আসলে উজ্জ্বলকে এগিয়ে রেখেছে।

লালদুর্গ করিমপুরে সিপিএমকে মচকে দিতে মহুয়াকে পাঠিয়েছিলেন মমতা। দীর্ঘ উনচল্লিশ বছর পরে ওই কেন্দ্রে সিপিএমকে হারিয়ে বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন মহুয়া। স্বাভাবিক ভাবেই, করিমপুরের তৃণণূল কর্মীদের প্রত্যাশা ছিল, দলনেত্রী মহুয়াকে মন্ত্রী করবেন। তাঁরা হতাশ। তাঁদের কথায়, “সীমান্ত শহর করিমপুরে বহু লড়াই করে উপযুক্ত প্রার্থী পেয়েছিলাম। এলাকার মানুষ তাঁকে উজাড় করে আশীর্বাদ করেছেন। মহুয়া মন্ত্রী হলে ভাল হত।” করিমপুর ১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি চিররঞ্জন মণ্ডল বলেন, “দিদি দলের স্বার্থে যা ভাল মনে করেছেন, সেটাই করেছেন। তবে এত দিন পর আমরা সিপিএমকে হারিয়ে নিজেদের বিধায়ক পেয়েছি। এলাকার উন্নয়ন করাই তাঁর প্রধান কাজ হবে।”

মহুয়া নিজেও বলছেন, “এলাকার মানুষ ও কর্মীদের আবেগ থাকতেই পারে। তবে আমার এখন কাজ এলাকার উন্নয়নে চুটিয়ে কাজ করা। মন্ত্রিত্বর কথা মাথায় নেই। আগামী পাঁচ বছর এলাকার সার্বিক উন্নয়ন করাই আমার এখন একমাত্র লক্ষ্য।”

তবে এখনও দু’টি আসন ঘোষণা বাকি রেখেছেন মমতা। সে দিকেই তাকিয়ে আছে করিমপুর।

হয়তো গোটা নদিয়াই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন