বিদ্যুৎ-চুল্লি নিয়ে লড়াই হাইকোর্টে

রাস্তায় উন্নয়ন দাঁড়িয়ে আছে কি না, তা নিয়ে তরজার শেষ নেই। তারই মধ্যে জেলার শ্মশানে বৈদ্যুতিক চুল্লি বসবে কি না, তা নিয়ে মামলা গড়াচ্ছে সিধে কলকাতা হাইকোর্টে!

Advertisement

সুনন্দ ঘোষ ও প্রশান্ত পাল

শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০১৮ ০৩:১২
Share:

রাস্তায় উন্নয়ন দাঁড়িয়ে আছে কি না, তা নিয়ে তরজার শেষ নেই। তারই মধ্যে জেলার শ্মশানে বৈদ্যুতিক চুল্লি বসবে কি না, তা নিয়ে মামলা গড়াচ্ছে সিধে কলকাতা হাইকোর্টে!

Advertisement

দেহ সৎকারের জন্য পুরুলিয়া জেলার কোথাও বৈদ্যুতিক চুল্লি নেই। পুরুলিয়ার কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ মুখোপাধ্যায় সেখানকার তেলকলপাড়ার শ্মশানে বিদ্যুৎ-চুল্লি বসাতে আড়াই কোটি টাকা জোগাড়ও করেন সাংসদের কাছ থেকে। কিন্তু তা ফেরত পাঠিয়ে জেলাশাসক জানান, তেলকলপাড়া নদীর ধারে। সেখানে বৈদ্যুতিক চুল্লি তৈরি করা সম্ভব নয়। অভাব আছে জমিরও।

বিধায়ক হাইকোর্টে যান। হাইকোর্ট জানায়, মামলার নিষ্পত্তির আগে ওই টাকা অন্য খাতে খরচ করা যাবে না। বিধায়ক, জেলাশাসকের হলফনামাও চেয়েছেন বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী। জেলাশাসক জানান, রাজ্যের নিজস্ব টাকায় জেলার অন্যত্র বিদ্যুৎ-চুল্লি তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিধায়কের প্রশ্ন, অন্যত্র হলে হোক না। তার সঙ্গে ওই পুরনো শ্মশানে বিদ্যুৎ-চুল্লি বসালে ক্ষতি কী?

Advertisement

ফোনে ধরা হলে বিধায়ক সুদীপবাবু বলেন, ‘‘চার দিকেই তো শুনছি, উন্নয়ন হচ্ছে। আমি বিরোধী বিধায়ক বলেই কি এই এলাকার মানুষ সেই উন্নয়নের ভাগ পাবেন না? সরকারি পরিষেবা থেকে তাঁরা বঞ্চিত হবেন?’’ তাঁর বক্তব্য, কলকাতা শহর ছাড়াও বেশির ভাগ জায়গাতেই নদীপাড়ের শ্মশানে বৈদ্যুতিক চুল্লি রয়েছে। জেলাশাসকের যুক্তি তাই মানতে রাজি নন সুদীপবাবু।

ওই বিধায়কের দাবি, কাঠের চুল্লিতে শব সৎকারে এখন খরচ পড়ে প্রায় পাঁচ হাজার টাকা। গরিব, অনগ্রসর জেলার বেশির ভাগ বাসিন্দারই সেই টাকা খরচ করার সামর্থ্য নেই। অনেকে জঙ্গল থেকে নিজেরাই কাঠ কেটে আনেন। কিছু কাঠ শ্মশান থেকে কেনেন। অনেক ক্ষেত্রেই দেহ আধপোড়া থেকে যায়। টাকার অভাবে অনেকে মৃতদেহ মাটিতে পুঁতে দিতে বাধ্য হন।

এই অবস্থায় সুদীপবাবু ২০১৬ সালে বিধায়ক হয়ে মনস্থ করেন, শ্মশানে বিদ্যুৎ-চুল্লি বসাবেন। তিনি দ্বারস্থ হন তৃণমূলের তৎকালীন রাজ্যসভা-সদস্য কুণাল ঘোষের। কুণালবাবু তাঁর সাংসদ তহবিল থেকে প্রায় আড়াই কোটি টাকা মঞ্জুর করেন। তাঁর সাংসদ তহবিলের টাকা খরচ করা হত কলকাতা পুরসভার মাধ্যমে। ২০১৭ সালের গোড়ায় সেই টাকা মঞ্জুরের পরে জেলাশাসককে একটি আলাদা অ্যাকাউন্ট খুলতে বলা হয়। জেলাশাসক আলাদা একটি অ্যাকাউন্ট খোলেন। প্রথম দু’দফায় দু’‌কোটি ৩২ লক্ষ টাকা পাঠানো হয়। এ বছরের গোড়ায় সেই টাকা তিনি ফেরত পাঠান কলকাতা পুরসভায়।

বৈদ্যুতিক চুল্লি না-গড়ার সিদ্ধান্তে স্থানীয় বাসিন্দারাও বিস্মিত। শহরের বাসিন্দা, প্রাক্তন সরকারি আধিকারিক অচিন্ত্যময় বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশ্ন, ‘‘অতিরিক্ত জমির ব্যবস্থা কি করা যেত না?’’ জনসেবায় যুক্ত কাশীনাথ নন্দীর কথায়, ‘‘তেলকলপাড়ায় বৈদ্যুতিক চুল্লি বসানোর সিদ্ধান্ত ঠিক ছিল। তা হলে কি উন্নয়নের ক্ষেত্রে রাজনীতি দেখা হচ্ছে?’’ ক্রীড়া জগতের সঙ্গে যুক্ত তুহিন ঘোষ বলছেন, ‘‘বিদ্যুৎ-চুল্লি হলে দূষণ কমত। সরকার যদি শহরের অন্য প্রান্তে ওই চুল্লি করে তো ভাল। তবে এখানেও সেটা করা যেত।’’

হাইকোর্টে সুদীপবাবু ছাড়াও কলকাতা পুরসভা ও জেলাশাসকের প্রতিনিধি, কুণালবাবুকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। সকলেই নিজের বক্তব্য জানিয়েছেন। জুলাইয়ে পরবর্তী শুনানি। বিষয়টি বিচারাধীন বলে জেলাশাসক অলোকেশপ্রসাদ রায় কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement