এ বার সারদার নথি লোপাটের তদন্তে সিবিআই

এক কর্তার কথায়, জাতীয়তাবাদী তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি অমিতাভ মজুমদার গত ৩০ অগস্ট সিবিআইয়ের কাছে একটি অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন।

Advertisement

শুভাশিস ঘটক

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০২:০১
Share:

প্রায় এক বছর ধরে সারদা কেলেঙ্কারির তদন্ত করেছিল রাজ্য পুলিশের স্পেশাল টাক্স ফোর্স (সিট)। এক বছর পর সিবিআই তদন্তভার নেয়। কিন্তু অভিযোগ, সারদা কাণ্ডের বহু গুরুত্বপূর্ণ তথ্যপ্রমাণ পুলিশ সিবিআইকে দেয়নি। এর মধ্যে অনেক নথি পুলিশ নষ্ট করে ফেলেছে বলেও অভিযোগ পেয়েছে সিবিআই। সে বিষয়ে খোঁজখবরের জন্য এ বার সারদা তদন্তের দায়িত্বে থাকা পুলিশকর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে চলেছে গোয়েন্দা সংস্থাটি।

Advertisement

সিবিআই কর্তাদের কথায়— সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেন, ডিরেক্টর দেবযানী মুখোপাধ্যায়-সহ একাধিক আধিকারিককে নিয়ে সারদার বিভিন্ন অফিসে তল্লাশি চালিয়েছিলেন ‘সিট’-এর অফিসারেরা। সুদীপ্ত-দেবযানীদের বয়ান অনুযায়ী ওই সময়ে নানা গুরুত্বপূর্ণ তথ্যপ্রমাণ পুলিশ বাজেয়াপ্ত করে। কিন্তু সিবিআই একাধিক বার লিখিত ভাবে চেয়েও সিটের কাছ থেকে সে সব নথি পায়নি।

কিন্তু সারদা তদন্ত শুরুর প্রায় তিন বছর পরে এই নিয়ে ফের কেন তোড়জোড় সিবিআইয়ের?

Advertisement

এক কর্তার কথায়, জাতীয়তাবাদী তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি অমিতাভ মজুমদার গত ৩০ অগস্ট সিবিআইয়ের কাছে একটি অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন। তাতে বলা হয়েছে, সারদা মামলায় সিট-এর তদন্তকারী এক শীর্ষ অফিসার ও শাসক দলের এক নেতার যোগসাজসে বহু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য লোপাট করা হয়েছে এবং এ বিষয়ে তদন্ত প্রয়োজন। অমিতাভবাবু বলেন, ‘‘ওই সময় বিরোধীরাও এই অভিযোগ তুলেছিল। গ্রেফতার হওয়া এক সাংসদও একাধিক বার জানিয়েছেন, পুলিশ-নেতার যোগসাজসে তথ্য লোপাট হয়েছে। আমরা তারই তদন্ত চেয়েছি।’’ উল্লেখ্য, অমিতাভবাবু তৃণমূলে কোণঠাসা মুকুল রায়ের একান্ত ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত।

সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, সুদীপ্ত ও দেবযানীকে সঙ্গে নিয়ে সারদার মিডল্যান্ড পার্ক ও দক্ষিণ শহরতলির বিষ্ণুপুরের অফিসে তল্লাশি চালানো হয়। সারদার অন্য আধিকারিকদের নিয়েও সংস্থার নানা অফিসে তল্লাশি চালায় পুলিশ। সুদীপ্ত, দেবযানী-সহ সব আধিকারিকের বক্তব্যে তল্লাশিতে কাগজপত্র বাজেয়াপ্ত করার উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু সে সব তাদের হাতে পৌঁছয়নি বলে দাবি সিবিআইয়ের। এক তদন্তকারীর কথায়, সারদার মিডল্যান্ড পার্কের অফিসে বসে দেবযানী ব্যাঙ্ক ও আর্থিক বিষয়গুলি দেখাশোনা করতেন। সিবিআই সূত্র বলছে, সারদা অর্থলগ্নি সংস্থার যে কোটি কোটি টাকা শাসক দলের নেতাদের পকেটে গিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে, সেই টাকার হিসেবও মূলত মিডল্যান্ড পার্কের অফিসে রাখা ছিল বলে সুদীপ্ত জেরায় জানিয়েছেন।

সিবিআইয়ের এক কর্তার কথায়— সারদা মামলায় গ্রেফতার হওয়া দুই প্রভাবশালীও লিখিত বয়ানে নেতা-পুলিশ কর্তার যোগসাজসে তথ্যপ্রমাণ লোপাটের অভিযোগ করেছিলেন। ওই নেতা ও পুলিশ কর্তার বৈঠকের

একটি ভিডিও ফুটেজও সিবিআইয়ের হাতে এসেছে।

সিবিআই কর্তাদের কথায়, নির্দেশ অনুযায়ী সারদা মামলার তদন্তকারী অফিসারেরা বাজেয়াপ্ত করা নথিপত্র ওই পুলিশ কর্তার কাছেই জমা দিতেন। সেগুলি একেবারে নিজের কাছেই রাখতেন ওই পুলিশ কর্তা। সিবিআই সূত্রের খবর, নথি লোপাটের অভিযোগের উত্তর খুঁজতে সারদা মামলায় তদন্তকারী রাজ্য পুলিশের অফিসারদের জিজ্ঞাসাবাদ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই দু’জন অফিসারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তার পর প্রয়োজনে ওই নেতা ও পুলিশ কর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন