CBI

মনোবিদদের মুখে অমৃতাভ

২০১০ সালে ২৮ মে জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনার পরে মাওবাদীরা তাঁকে অপহরণ করেছিল বলেও দাবি করেছেন অমৃতাভ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০২১ ০৭:২১
Share:

ফাইল চিত্র।

কখনও তিনি বলছেন ‘ভুলে গিয়েছি’, কখনও বা বলছেন ‘মনে করতে পারছি না’। এই অবস্থায় জ্ঞানেশ্বরী প্রতারণা কাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত অমৃতাভ চৌধুরীকে মনোবিদের সামনে বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পরিকল্পনা করছে সিবিআই। সম্প্রতি জিজ্ঞাসাবাদের সময় তিনি অধিকাংশ প্রশ্নের উত্তরেই নিজের ‘স্মৃতিভ্রংশের’ উল্লেখ কেন করছেন, মনোবিদের মধ্যস্থতায় তার উত্তর মিলতে পারে মনে করছেন তদন্তকারীরা।

Advertisement

২০১০ সালে ২৮ মে জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনার পরে মাওবাদীরা তাঁকে অপহরণ করেছিল বলেও দাবি করেছেন অমৃতাভ। কিন্তু অপহরণের বিষয়ে কোনও প্রশ্ন করলেই তাঁর উত্তর, ‘‘কিছু মনে করতে পারছি না।’’ এক তদন্তকারী অফিসারের দাবি, মূল ঘটনা এড়িয়ে যেতেই অমৃতাভ স্মৃতিভ্রংশের ‘আশ্রয়’ নিচ্ছেন বলে মনে করা হচ্ছে। মঙ্গলবার অমৃতাভের বাবা মিহির চৌধুরীকেও দীর্ঘ কয়েক ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় বলে সিবিআই সূত্রের খবর। তদন্তকারীরা জানান, অমৃতাভের জোড়াবাগান ও বর্ধমানের পড়শিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। অমৃতাভ ও মিহিরের ডিএনএ পরীক্ষারও ব্যবস্থা হয়েছে।

সিবিআই সূত্রের খবর, রেলের সঙ্গে যোগাযোগ করে জ্ঞানেশ্বরী দুর্ঘটনায় মৃতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ এবং তাঁদের স্বজনদের চাকরি দেওয়ার ক্ষেত্রে সেই সময় কোন কোন অফিসার দায়িত্বে ছিলেন, তার তালিকা সংগ্রহ করা হয়েছে। সেই অফিসারদের তলব করা হবে। অসাধু চক্রে বাইরের কেউ জড়িত ছিল কি না, তারও খোঁজ চালানো হবে।

Advertisement

তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, দুর্নীতি চক্রে কোনও প্রভাবশালী যোগ আছে কি না, সেটাও খতিয়ে দেখা দরকার। ইতিমধ্যে জ্ঞানেশ্বরী কাণ্ডে মৃত ১৪৮ জনের নামের তালিকা সিবিআই অফিসারদের হাতে পৌঁছেছে। প্রাথমিক ভাবে ওই তালিকা অনুযায়ী মৃতের সত্যিকারের স্বজনদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে কি না বা চাকরিতে নিয়োগ করা হয়েছে কি না, রেলকর্তারাও তা যাচাই করছেন।

তদন্তকারীদের বক্তব্য, শুধু অমৃতাভ ও মিহিরবাবু নন, প্রতারণার ওই ঘটনায় পুরো চৌধুরী পরিবারই জড়িত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। মনে করা হচ্ছে, ক্ষতিপূরণের টাকা নেওয়া এবং অমৃতাভের বিবাহিত বোন মহুয়া পাঠককে চাকরি দেওয়ার বিষয়টি তাঁদের গোটা পরিবারই জানত।

সিবিআই জেনেছে, বছর তিনেক আগে মিহিরবাবু ও অমৃতাভ বর্ধমানের নিজেদের বাড়ির এলাকায় গিয়ে ওঠেন। সেখানে একটি বিলাসবহুল বাড়ি তৈরি করেন। শুধু বাড়ি নয়, দামি গাড়িও কিনেছিলেন তাঁরা। এলাকায় আগে থেকেই প্রোমোটিং ব্যবসা করতেন অমৃতাভ। সিবিআইয়ের দাবি, অমৃতাভ জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনার পরে নিজের নামও বদলে নিয়েছিলেন। সাহেব চৌধুরী পরিচয় দিয়ে প্রোমোটিং করছিলেন। ফেসবুকে সাহেব চৌধুরী নামে প্রোফাইল খুলে ব্যবসা সংক্রান্ত নানা তথ্য আদানপ্রদান করতেন। অমৃতাভের প্যান, ভোটার কার্ড, আধার কার্ড ও পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করে যাচাই করা হচ্ছে।

বর্ধমানের বামুনপাড়ার মিহির ও অমৃতাভের পড়শিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলেও জানান তদন্তকারীরা। তাঁদের ধারণা, কলকাতা থেকে গা-ঢাকা দিয়ে অমৃতাভ বর্ধমানে ছিলেন। এবং তাতে মিহিরবাবুর প্রচ্ছন্ন মদত ছিল বলে অভিযোগ। দুর্ঘটনার আগে অমৃতাভ একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করতেন। কিন্তু দুর্ঘটনার বছর তিনেক পরে কয়েক কোটি টাকা বিনিয়োগ করে প্রোমোটিং ব্যবসা শুরু করেছিলেন। সেই মূলধন কোথা থেকে এসেছিল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন